তাকে পরিচয় করিয়ে দিতে শুধু নামটাই যথেষ্ট, বোরিয়া মজুমদার। তবে তিনি কী, সেটা বলতে গিয়ে একটা বিশেষণে আটকে থাকার সুযোগ নেই। তিনি একজন ভারতীয় বরেণ্য ক্রীড়া সাংবাদিক। শিক্ষাবিদ, লেখক, গবেষক, ধারাভাষ্যকার। ভারতীয় ক্রীড়া সাংবাদিকতায় বোরিয়া বড় এক নাম।  

লেখক হিসেবে অসাধারণ সব কীর্তি গড়েছেন ১৯৭৬ সালের ৮ মার্চ কলকাতায় জন্ম নেওয়া এই বোরিয়া মজুদার। কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারের আত্মজীবনী প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে’র সহ-লেখক তিনি। সুনীল গাভাস্কারের আত্মজীবনী, খেলার ১৭৫ বছরের ইতিহাস নিয়ে, ‘স্পোটিং টাইমস: ১৭৫ ইয়ার্স, টোয়েন্টি-টু ইয়ার্ডস টু ফ্রিডম: এ সোশ্যাল হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়ান ক্রিকেট’সহ একাধিক গবেষণাধর্মী বইয়ের লেখক তিনি। সেন্ট্রাল ল্যাঙ্কাশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ স্পোর্ট অ্যান্ড ওয়েলবিংয়ের সিনিয়র রিসার্চ ফেলোও তিনি। এখন আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দেখতে আছেন দুবাইয়ে।

দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে দেখা হয়ে গেলো বোরিয়ার সঙ্গে। পরিচয় দিতেই কথা বলতে রাজি হয়ে গেলেন। হাতে সময় ছিল কম, চটজলদি অনেক মূল্যবান কিছু কথা বললেন এই লেখক। যেখানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ প্রসঙ্গও। বলেছেন সোশ্যাল মিডিয়াকে অতি গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টিও। তিনি সাংবাদিক, তাই বুঝলেন বিশ্বকাপ কাভার করতে যাওয়া বাংলাদেশের ক্রীড়া সাংবাদিকদের মনের অবস্থাও!

বোরিয়া মজুমদারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো ঢাকা পোস্ট-এর পাঠকদের জন্য-

প্রশ্ন: আপনাকে তো ক্রিকেটের এনসাইক্লোপিডিয়া বলে অনেকেই। ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাস নির্ভর সব খবরই পাই আপনার কাছ থেকে। বাংলাদেশ ক্রিকেটটাকে কিভাবে অনুসরন করেন আপনি?

বোরিয়া মজুমদার: বাংলাদেশ ক্রিকেটটাকে খুব নিবিড়ভাবে ফলো করি। বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে অনেক কাজ করেছি, লেখালেখি করেছি। এ কারণেই বাংলাদেশ ক্রিকেট এমন খেললে খুব খারাপ লাগে। একটাই দেশ ভারতকে কম্পিট করতে পারে ফ্যানডমে, প্যাশনে-সেটা বাংলাদেশ। বিশ্ব ক্রিকেট এখন একটা শক্তিশালী বাংলাদেশ ক্রিকেট চায় বা প্রয়োজন। বিশ্ব ক্রিকেটের জন্য একটা ভালো বাংলাদেশ দল থাকাটা আমি অন্তত বাধ্যতামূলক মনে করি। 

যখন আমি দেখি লিটন দাস, আমাদের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করেছে। সৌম্য সরকার, দিনেশ কার্তিকের সেইটা প্রায় জিতিয়েই দিয়েছিল। নাঈম শেখ আপনাদের প্রিমিয়ার লিগে খুব ভালো খেলে। সাকিব ছাড়া মাহমুদউল্লাহ ভালো খেলে। বাকিরা সবাই খেললে... এই দল ৭০ এ অলআউট, ৮০ তে অলআউট। হচ্ছেটা কী।

ভারতের প্রথম দুইটা ম্যাচের মতোই পারফরম্যান্স। তখন আমার মনে হয় টিমের মধ্যে কোনো অসুবিধা আছে। তামিমকে না নেওয়াটা কি কোনো বড় ভুল হয়ে গেল। সাকিব না খেলাটা কি এতটাই ইম্প্যাক্ট করল। নাকি অন্য সমস্যা আছে! 

প্রশ্ন: বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের জন্য নিশ্চয়ই খারাপ লাগে...

বোরিয়া মজুমদার: দেখুন তার আগে কিছু কথা বলে নেই- মুস্তাফিজ যদি আপনাদের সেরা বোলার, সে বিশ্বকাপে বিশ্রাম নেয় রেস্ট নেয় কীভাবে। আইপিএলে বা দ্বিপাক্ষিক সিরিজে অবসর নিতে পারে। বিশ্বকাপে তো বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা না। এটা তো বিশ্বের সবচেয়ে বড় মঞ্চ। সেখানে তো আপনি আপনার সেরাটা দেবেন। সবমিলিয়ে অনেক খারাপ লাগে। এমন একটা ফেস্টিভালের সময়। ইন্ডিয়াতে বাংলাদেশে। মানুষ কোথায় সেলেব্রেট করবে, এমন যদি খেলে দল। তাহলে আপনাদেরও নিশ্চয়ই খারাপ লাগে। ফ্যানদের কথা যখন ভাবি, খুব খারাপ লাগে।

প্রশ্ন: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটাকে ক্রিকেটাররা খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলছেন। ব্যাপারটা অনেক সময় বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যায়। বাংলাদেশ ক্রিকেট এই সমস্যার মুখে পড়েছে এবার...

বোরিয়া মজুমদার: সোশ্যাল মিডিয়াটা সোশাল এন্টারটেইনমেন্ট হিসেবে দেখুন। ট্রলগুলোতে মাথা দেবেন না। দিলে আপনার মাথা খারাপ হয়ে যাবে। কারণ ৯০ শতাংশ ওখানে এবিউস করে। রিয়েল সেন্সেবল কথা সেখানে খুব একটা হয় না। যতটুকু হয়, ততটুকু নিন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কালেক্টিভ স্টেপস নিন। নিজের ভুলগুলো গ্রহণ করুন, রিডিম করুন নিজেদের। 

প্রশ্ন: ভারত তো প্রথম দুটো ম্যাচে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে চাপে। দলটার সেমি-ফাইনালে উঠার সম্ভাবনা দেখছেন কতোটকু?

বোরিয়া মজুমদার: প্রথম দুটো খেলায় ভারত অত্যন্ত মাঝারি মানের খেলা খেলেছে। একটা ভয় ছিল, ইনসিকিওর টিম মনে হচ্ছিল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ফিয়ার অফ ফেইলয়রটা কাটিয়ে উঠেছে। হয়তো বিশ্বকাপ মিশনটা শেষ। আফগানিস্তান দল নিউজিল্যান্ডকে হারাবে, তারপর ভারত উঠবে। এভাবে হয় না। কিন্তু আবার স্পোর্টসে হার-জিত আছেই। এখান থেকে লেসন নিয়ে অ্যাপ্রোচটা বদলে পরের বিশ্বকাপে যেতে হবে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশ থেকে ৪০ জনের বেশি সাংবাদিক কাভার করতে এসেছেন। মূল পর্বে এসে এই যে হার, টানা ৫ ম্যাচে। এই ব্যাপারটা আমরা সাংবাদিক হিসেবে কিভাবে নিতে পারি? বাড়তি চাপ কি আমাদের ওপর এসে পড়ছে না?

বোরিয়া মজুমদার: পার্সোনালভাবে নিতে পারেন না। কারণ আপনি এটার জন্য দায়ী না। এটা অনেক যথার্থ প্রশ্ন। আপনি মিডিয়াতে যখন থাকেন আপনাকে বলা হচ্ছে কেন গিয়েছ? কী করলে তুমি? তোমার পেছনে যে অর্থ খরচ করলাম তার মানেটা কি? দেখুন, এসব প্রশ্ন উঠতে পারে। কিন্তু জানবেন, আপনি দায়ী না। আপনি এখানে এসেছেন চিত্রটা নিজের মতো করে তুলে ধরতে। ইন্টারভিউ নিন, কঠিন প্রশ্ন করুন। আপনার উইকেট ওরা, মাঠের উইকেটটা আপনার না। আপনি আপনার উইকেটে যদি ঠিক করেন, নিজের কাছে যদি সত্যি থাকেন, তাহলে আপনি আপনার কাজ করেছেন।

এটি/এনইউ