বাংলা ওই গানটা মনে পড়ছে খুব, প্রিয় মানুষটি আসবে না জেনেও আশা বেঁধে রাখা-দীপ জ্বেলে রাখার সেই আকুতিটা গানে দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন মিতালী মুখার্জী। বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের প্রিভিউ করতে বসে কালজয়ী সেই গানের কলিটা মাথায় ঘুরছে! আসলেই তো, যে দলটা একের পর এক ম্যাচ হেরেই যাচ্ছে, তাকে নিয়েও কেন আশায় থাকা? সেই দলটা নিয়ে কেন শেষটাতে এসেও স্বপ্ন দেখা?

এরই নাম হয়তো দেশপ্রেম। হৃদয় গহীন কোন থেকেই জ্বলে উঠে আশার প্রদীপ! বাংলাদেশ ক্রিকেট দল টানা ৪ হারের যন্ত্রণা নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) ফের মাঠে। চলতি আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল মুখোমুখি অস্ট্রেলিয়ার। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে যে লড়াইটি শুরু হবে স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় (বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টা)।

প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া বলেই হয়তো কোথায় যেন মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ হয়তো ঘুরে দাঁড়াতেও পারে! নিশ্চয়ই এখনো ক্রিকেটপ্রেমী স্মৃতিতে সে সব জয় তরতাজা। গত আগষ্টে মিরপুরের শের-ই-বাংলায় অজিদের একবার দু'বার নয়, চারবার টি-টোয়েন্টিতে হারিয়েছে বাংলাদেশ। যেখানে অনেকটা বলে-কয়ে লেখা হয়েছে অজি বধের গল্প। তবে এবার তো আর চেনা মিরপুরে খেলা হচ্ছে না। বিশ্বকাপে দুবাইয়ে প্রথমবারের মতো নামছে বাংলাদেশ। কিন্তু এটাও তো ঠিক সেই জয় কিছুটা হলেও প্রেরণা দেবে আজ।

যদিও অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার অ্যাস্টন অ্যাগার বুধবারই মনে করিয়ে দিলেন, দুবাই আর মিরপুর এক নয়! ঠিকই তো, মিরপুর ছিল একেবারে স্লো আর টানিং উইকেট। স্পিনারদের স্বর্গরাজ্য। কিন্তু দুবাইয়ে সাফল্য পেতে হলে যোগ্যতা থাকা চাই। সেটা ২০ ওভারের ক্রিকেটে কতোটা কী আছে তার প্রমাণ তো গত এক যুগের বেশি সময় ধরেই দেখাচ্ছে বাংলাদেশ দল। 

তাইতো বাংলাদেশে গিয়ে ১-৪ ব্যবধানে হারের সেই গল্পটা মাথা থেকে ছুঁড়ে ফেলেন অ্যাগার। অজি এই ক্রিকেটার বলছিলেন, ‘বাংলাদেশের ওই কন্ডিশনে আমাদের অনেকেই হয়তো তখন প্রথম খেলেছিল। আমাদের জন্য সেটা ছিল চ্যালেঞ্জিং। আর ওই কন্ডিশনে দারুণ খেলেছিল বাংলাদেশ। তবে এখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন। আমাদের দলটা এখন অনেকটাই ভিন্ন চেহারার। ঢাকায় যে উইকেটে খেলেছি, এখানকার উইকেটগুলোর আচরণ তেমন নয়।’

একদমই তাই, বিশ্বকাপের আগে ঠিকঠাক উইকেটে প্রস্তুতি নিতে পারেনি বাংলাদেশ। টিম ম্যানেজম্যান্টের উদ্ভট সিদ্ধান্তই বলতে হবে, তারা কীনা নগদ লাভের আশায় বিশ্বকাপের প্রস্তুতিটাও জলাঞ্জলি দিয়েছে। স্লো সেই উইকেটে অজিদের পর নিউজিল্যান্ডকেও হারিয়েছিল বাংলাদেশ। যা কোন কাজেই আসেনি বিশ্বকাপে। তাইতো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপ ম্যাচের আগের দিনই বাংলাদেশের স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ মিরপুরের উইকেটের উন্নতি চাইলেন। এমন উইকেটে খেলে হয়তো ঘরের মাঠে কিছুটা সাফল্য পাওয়া যায়, আদতে লাভ হয় না কিছুই।

হেরাথ অবশ্য অজিদের বিপক্ষে ম্যাচেই বাংলাদেশ যে ঘুরে দাঁড়াতে চায় সেটাও জানিয়ে রাখলেন। টানা ৪ হারের যন্ত্রণা একপাশে রেখে শ্রীলঙ্কান এই স্পিন কিংবদন্তি বলছিলেন, ‘দেখুন, জয়ের একটি সুযোগ এখনো আছে আমাদের। সেটি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। আমি এখনো বিশ্বাস করি অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দৃঢ়ভাবে ঘুরে দাঁড়াব আমরা।’

কথা বলা যতোটা সহজ, মাঠের লড়াই তেমনটা নয়। দুবাই ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অজিদের বিপক্ষে খেলার আগে কোন আশা দেখছে না টাইগাররা। সুপার টুয়েলভে চার ম্যাচ খেলে প্রতিটিতেই হার দেখেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা। এই ম্যাচটা দলের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে ছাড়াই মাঠে নামতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। নুরুল হাসান সোহান খেলতে পারবেন কীনা সেটিও পরিস্কার নয়। ইনজুরিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাঠের বাইরে ছিলেন তিনি। শেষ ম্যাচে অবশ্য মুস্তাফিজুর রহমানের আবার একাদশে ফেরার ইঙ্গিতও আছে। এতে আবারও একাদশের বাইরে চলে যেতে পারেন স্পিনার নাসুম আহমেদ।

অবশ্য দলে এখন ফিট ক্রিকেটারের সংখ্যা মাত্র ১৩। খুব বেশি পরীক্ষার সুযোগও থাকছে না শেষ ম্যাচে। তারপরও জিততে মরিয়া বাংলাদেশ। অন্তত দেশে একটা জয় নিয়ে তো ফেরা হবে। হেরাথ বলছিলেন, ‘আসলে পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে অবশ্যই শক্তভাবে ফিরতে হবে আমাদের। আমাদের জয়ের মানসিকতাটা ধরে রাখতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো বাংলাদেশ ক্রিকেটের এগিয়ে চলার ব্যাপারে ভাবতে হবে আমাদের।’

এমনিতে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়েছে মোট ৯ বার। যেখানে ৫ বার জিতেছে অজিরা। ৪বার বাংলাদেশ। আর সেই চারটি জয়ই গত আগস্টে, মিরপুরে। আজকের ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হলেও অজিদের জেতা চাই। গ্রুপে তিন ম্যাচে ২ জয়ে পয়েন্ট তালিকার তিনে তারা। সেমি-ফাইনালে উঠতে এখানে জয়ের বিকল্প কোথায়?

তবে মিরপুরে পাওয়া সাফল্যই আজ দুবাইয়ে হতে পারে রিয়াদদের জন্য বড় প্রেরণা। এই ম্যাচেই তো শেষ তাদের বিশ্বকাপ মিশন। পরের দিন, ৫ নভেম্বর দেশের পথে উড়াল দেবেন ক্রিকেটাররা। ফেরার আগে অন্তত এই একটা জয়ই অনেক বিতর্ক আর সামলোচনার তোপ থেকে কিছুটা বাঁচিয়ে দিতে পারে টাইগারদের।

গত এক মাসে অনেক তো হলো মাঠ আর মাঠের বাইরে বিতর্ক। সমালোচনার ঝড়ে যেখানে ক্রিকেটটাই হারিয়ে গেছে। ক্রিকেটারদের মতো ক্লান্ত, সমর্থকরাও। আজ অন্তত শেষ বেলায় এসে হাসি ফুটুক মাহমুদউল্লাহদের মুখে। আশার প্রদীপটা এখনো জ্বলছে, একটা জয় যে বড্ড বেশি প্রয়োজন বাংলাদেশের!

এটি/টিআইএস