প্রত্যাশার বেলুন এভাবে চুপসে যাবে কে জানত? সেমিফাইনালের স্বপ্ন দেখিয়ে দেশ ছেড়েছিল বাংলাদেশ দল। এরপর যেভাবেই হোক দল পেরিয়েছে বাছাই পর্বের বৈতরণি। মূল বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জেতা ম্যাচটা হেরে যাওয়ার পরও আশার সলতে জ্বালিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ। প্রবল অহমিকায় সাকিব আল হাসান তো বলেই দিলেন, 'স্বপ্ন আবার পরিবর্তন হয় নাকি?' কিন্তু সময়ের সঙ্গে দেখছি, সেমির সেই স্বপ্ন একটু একটু করে মিশে গেছে মরুভূমির বালিতে!

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিশনে দেশ ছাড়ার আগে আকাশ ছোঁয়া আত্মবিশ্বাস ছিল বাংলাদেশ দলের। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ঢাকার প্রায় সব  গণমাধ্যমকে বলে গেছেন- ‘তার লক্ষ্য সেমি-ফাইনাল’। দেশের মাঠে অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডকে সিরিজ হারানো দল তো এমন আত্মবিশ্বাস পেতেই পারে!

কিন্তু বাছাই পর্বের শুরুতেই স্কটল্যান্ডের কাছে হেরে বাস্তবতা বুঝতে শেখে টাইগাররা। এরপর সুপার টুয়েলভের ১ম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে সেই বাস্তবতা বুঝতে পারল আরও একবার। ১৭১ রানের মতো বড় পুঁজিতেও দল হারল স্রেফ ক্যাচ মিস আর বাজে নেতৃত্বের কারণে। তারপর ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর সবশেষ মঙ্গলবার মাহমুদউল্লাহদের উড়িয়ে দিল দক্ষিণ আফ্রিকা। চার ম্যাচ খেলে চারটিতেই হার। সেমির স্বপ্ন কোথায় উবে গেল!

কেন এমন হলো? এটাই কি অবধারিত ছিল? সংযুক্ত আরব আমিরাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের কেন এমন ভরাডুবি? এমন সব প্রশ্নের দশটি উত্তর উঠে এসেছে ঢাকা পোস্টের বিশ্লেষণে। চলুন মিলিয়ে নিই, আপনার ভাবনাটাও কি এমন?

১. ভুল উইকেটে প্রস্তুতি

এ কথা অনেক দিন ধরেই বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল টি-টোয়েন্টিটা ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি এখনো। ওয়ানডেতে দল যতটাই সাবলীল ২০ ওভারের ক্রিকেটে ততোটাই বিবর্ণ। শুধু ক্রিকেটাররাই নন, এই ফরম্যাট কোচিং স্টাফ আর খোদ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কর্তারাও ঠিকঠাক মাথায় নিতে পারেননি! এ কারণেই কিনা বিশ্বকাপ শুরুর আগে তথৈবচ একটা প্রস্তুতি নিল বাংলাদেশ দল।

তারা প্রস্তুতি পর্বে পেয়ে গেলো অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মতো প্রতিপক্ষ। ঘরের মাঠে ডেকে এনে নিজের মতো উইকেট তৈরি করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করল। অথচ ভাবনায় এটা ছিল না- দিন কয়েক পরই বিশ্বকাপ হবে স্পোর্টিং উইকেটে। যেখানে এমন স্লো আর টার্নিং উইকেট মিলবে না। মেলেওনি! ভুল উইকেটে প্রস্তুতির সেই মাশুলটাই দল গুনল বিশ্বকাপে এসে।

২. তামিমের অনুপস্থিতি 

বিশ্বকাপ অভিযানে পা দিয়েই যে ক্রিকেটারটিকে সবচেয়ে বেশি মিস করেছে বাংলাদেশ তিনি তামিম ইকবাল। আবুধাবি, দুবাই, শারজাহ- যেখানেই পা রেখেছি, সমর্থক থেকে বিশ্লেষক, সবার একটাই প্রশ্ন, ‘তামিম ইকবাল কোথায়’? ট্যাক্সিতে উঠে পাকিস্তানি ড্রাইভারের মুখেও শুনেছি এই কথা। এমনকি ইমরুল কায়েসের খোঁজও নিয়েছেন অনেকে। 

কিন্তু তামিম ইকবাল কেন নেই- এই প্রশ্নের সত্যিকারের উত্তরটা তো আর সবার কাছে দেওয়া যায় না! তামিম বিশ্বকাপ দলে নেই কারণ টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে চায়নি। যদিও সবাই এটুকু জানেন- তামিম স্বেচ্ছায় বিশ্বকাপ দল থেকে সরিয়ে নিয়েছেন নিজেকে। কিন্তু এটা এখন সবাই জেনে গেছেন, তাকে নিয়ে নীতিনির্ধারকদের একটা ফিসফিসানি ছিল। এ কারণেই আত্মসম্মানবোধ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তার সরে দাঁড়ানোর মাশুলটা দল গুনল পুরো টুর্নামেন্টে। ওপেনিংয়ে তামিমের অনুপস্থিতি বেশ ভুগিয়েছে দলকে।

৩. ব্যাটিং অর্ডারে বড় রদবদল 

যেমনটা বারবার বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ এখনো ওয়ানডে ক্রিকেটের আরেকটা ভার্সনের মতো করেই টি-টোয়েন্টি খেলে। এক যুগেরও বেশি সময় আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির সঙ্গে পথচলা হলেও ২০ ওভারের ক্রিকেটে নিজেদের ‘ব্র্যান্ড’ দাঁড় করাতে পারেনি তারা। এবারের বিশ্বকাপেও এজন্য হযবরল ক্রিকেটেরই প্রদর্শনী ছিল বাংলাদেশের। গোছানো, পরিকল্পিত ব্যাপারটা থাকল না ব্যাটিং অর্ডারে। বাছাই পর্বে ওমান থেকে শুরু এই ভুল পথে হাঁটা। অবশ্য স্কটিশদের কাছে হারের পর বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন দলের কোচ ও সিনিয়র ক্রিকেটারদের নির্দেশনা। ব্যাটিং লাইনআপে পরিবর্তন আনতে বলেন তিনি।

বাংলাদেশ দলে আসলে এমনটাই হয়, হয়ে আসছে অনেক দিন ধরেই। বাইরের হস্তক্ষেপ এতাটাই প্রবল যে একাদশ গঠনে তো প্রভাব থাকেই এমনকি ব্যাটিং অর্ডারটাও বাইরে থেকে ঠিক হয়। এ কারণেই কিনা কে জানে, পুরো বিশ্বকাপেই দেখা গেছে একটা ওপেনিং জুটি গড়ে ওঠেনি। সাকিব, লিটন কিংবা আফিফ হোসেন একেকদিন একেকজনকে একেক পজিশনে ব্যাটিং করানো হয়েছে। খোদ স্পেশালিষ্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলা মুশফিকুর রহিমকেও দেখা গেছে লোয়ার অর্ডারে। এমন হঠকারী সিদ্ধান্তের প্রভাব কিছুটা তো অবশ্যই পড়েছে খেলায়।

৪. বুমেরাং হয়েছে সাকিব-নির্ভর দল গড়া 

সন্দেহ নেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সেরা খেলোয়াড় তিনি। তাই বলে এক সাকিবই বারবার ত্রাণকর্তা হবেন এমনটা ভেবে থাকলে ভুল। তিনিই সব মুশকিল আসান করে দেবেন ভাবাটা বোকামি। কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট ঠিক এই ভুলটাই করেছে এবারের বিশ্বকাপ মিশনে। দারুণ ফর্মে থেকে যে সাকিব টি-টোয়ন্টি বিশ্বকাপ শুরু করেছিলেন তা কিন্তু নয়। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) মাঠের বাইরেই বেশি সময় থাকতে হয়েছে এই অলরাউন্ডারকে। যে কটি সুযোগ পেয়েছেন সেগুলোও ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারেননি!

তবে বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের বৈতরণিটা সাকিব আল হাসানের হাত ধরেই পেরিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ফ্লপ ছিলেন। তবে এরপর ওমান আর পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে ম্যাচে জয়ের নায়ক এই অলরাউন্ডার। ওমানের বিপক্ষে ৪২ রান ও ৩ উইকেট শিকারে ম্যাচের সেরা। পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে আরও সফল। ৪৬ রান ও ৯ রানে ৪ উইকেট।

এরপর আমিরাতে মূল পর্বে এসেও প্রথম ম্যাচে সাকিব ম্যাজিক দেখা গিয়েছিল। একটা মোমেন্টাম এনে দিয়েছিলেন তিনি। পরে সেটি ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারেননি তার সতীর্থরা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার ১৭ রানে ২ উইকেট বিফলেই গেল। বাংলাদেশ দলের অবস্থাটা এমন হয়েছে যে সবাই সাকিবের মুখের দিকে তাকিয়ে। তিনিই যেন সব করে দেবেন! যেটা বুমেরাং হয়েই ফিরে এসেছে। সাকিবের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরতাটাই বিপদ হয়ে এসেছে- সাকিব নিস্প্রভ মানেই পুরো দল চুপসে যাচ্ছে।

৫. অধিনায়ক ক্যারিশমাটিক নন

কথায় তো আছেই 'ক্যাপ্টেন লিডিং ফ্রম দ্যা ফ্রন্ট।' অধিনায়কই তো সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে অন্য এক মাহমুদল্লাহ রিয়াদের দেখা মিলছে! এমনিতেই তিনি আড়ালে, কিছুটা পেছনের সারিতে থাকতে পছন্দ করেন। এবার যেন বিশ্বকাপ মিশনে এসে আরও পিছিয়ে থাকছেন। দেশে যিনি হাসিমুখে দাঁড়িয়েছেন ক্যামেরার সামনে, এখানে খুঁজেই পাওয়া যায় না ক্যাপ্টেনকে। সমালোচনার তোপের মুখে দাঁড়িয়ে, 'আমরা রক্ত-মাংসের মানুষ' এই তথ্যটা দিয়ে অনেকটা লুকিয়ে পড়েন রিয়াদ!

সবচেয়ে বড় কথা, মাঠেও ঠিক চেনা যাচ্ছে না বাংলাদেশ অধিনায়ককে। দলের হারে মাঠেই নেতিয়ে পড়ছেন তিনি। মাথা চেপে বসে পড়ছেন! তার বিষণ্ন মুখের ছবি ছাড়া এই বিশ্বকাপে কিছুরই দেখা মিলছে না। অথচ অন্যসব খেলার মতো নয় ক্রিকেট। এখানে অধিনায়ককে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হয়। মাহমুদউল্লাহ এক ম্যাচে শুধু ফিফটি পেয়েছেন। কিন্তু বাকি ৬ ম্যাচে তার রান মাত্র ১০০। 

অথচ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দলকে জেতানোর দারুণ একটা সুযোগ ছিল রিয়াদের সামনে। তখন দলের ৬ বলে দরকার ছিল ১৩ রান। এটা ২০ ওভারের ক্রিকেটে বড় কিছু কি? কিন্তু তিনি পারেননি। এর আগে প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বোলিং বদল তার ভুল হয়েছে। তারমধ্যে বোর্ডের সমালোচনা করেছেন টুর্নামেন্টের মাঝপথেই। তিনি হয়তো ভুলেই গেছেন যা একজন অধিনায়কের কাজ নয়। আবার গণমাধ্যমকে তো ঠিক মতো হ্যান্ডেলই করতেও পারছেন না তিনি! 

৬. শক্তির জায়গা কোথায়?

২০ ওভারের ক্রিকেট কিংবা অন্য যে ফরম্যাটই হোক, প্রতিটি দলেরই একটা শক্তির জায়গা আছে। অথচ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দলের শক্তির জায়গা কোনটা সেটি আপনাকে প্রশ্ন করলে নিশ্চিত ভ্যাবাচ্যাকা খাবেন! আসলে সেটা এখন অব্দি নিজেরাই ঠিক করতে পারেনি বাংলাদেশ দল। 

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটা ম্যাচ বাদে স্কোরবোর্ডে বলার মতো রানই ওঠেনি। সবচেয়ে বড় কথা ক্রিকেটারদের অ্যাপ্রোচ নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। খেলোয়াড়দের মধ্যে মরিয়া মনোভাব দেখা যায়নি। তারপর একটা দলের কাছ থেকে সাফল্য আশা করেন কীভাবে?

৭. ঘরে ফেরার তাড়া?

লম্বা সময় ধরে পরিবারের বাইরে রয়েছেন ক্রিকেটাররা। গত ৩ অক্টোবর ওমানের পথে দেশ ছাড়েন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা। সময়ের হিসাব বলছে, ১ মাস হয়ে গেছে। ঘরে ফেরার একটা তাড়া তো থাকবেই। কিন্তু তাই বলে ক্রিকেট মাঠেও এমন তাহাহুড়া? দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মঙ্গলবার আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের খেলা দেখে মনে হচ্ছিল যেন দ্রুত লড়াই শেষ হলেই বাঁচেন তারা!

ব্যাটাররা তাড়াতাড়ি আউট হয়ে ফিরলেন ড্রেসিং রুমে। মাত্র ৮৪ রান করে অলআউট! প্রতিপক্ষের বোলিং আক্রমণ ভালো। কিন্তু তাই বলে এভাবে একের পর এক উইকেট ছুড়ে আসবেন তারা? দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ দেখে মনে হয়েছে দলের ক্রিকেটাররা এখন কত তাড়াতাড়ি টুর্নামেন্ট শেষ হবে সেই অপেক্ষায় আছেন। দেশে ফিরতে পারলে যেন বাঁচেন তারা। এমন মানসিক অবস্থা নিয়ে সফল হবে কীভাবে?

৮. মাঠ-মাঠের বাইরে সবাই ব্যর্থ

ঢাকা পোস্টের সঙ্গে সেদিন ইএসপিএন-ক্রিকইনফোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি মোহাম্মদ ইসাম বলছিলেন, এখনো এক্সাক্টলি টি-টোয়েন্টি কী, সেটা বুঝতে পারছে না! শুধু প্লেয়ার বা কোচরা নয়, আমাদের ক্রিকেট যারা চালায়, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড- আসলে সব লেভেলেই ঘাটতি।' একদমই লাগসই কথা। আসলে সবাই ব্যর্থ। একা কোনো ক্রিকেটার কিংবা কর্মকর্তাকে আলাদা করে বলির পাঠা বানানোর সুযোগ নেই।

বিশ্বকাপের মতো একটা মিশনে আসার আগ থেকে ছিল না কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। শর্টকার্ট রাস্তায় সাফল্যের পথে যেন হেঁটেছেন সবাই। টিম ম্যানেজমেন্ট পুরোপুরি ব্যর্থ। মাঠে এবং মাঠের বাইরে সব জায়গায়। যখন মাঠের বাইরে প্রবল সমালোচনা গোটা টিমটাকে আগলে রাখতে তো পারেইনি। উল্টো তারাও ছিল এলোমেলো। যার প্রভাব নিশ্চিত করেই পড়েছে বাংলাদেশের খেলায়।

৯. গেম প্ল্যান কোথায়?

যে কোনো কাজ শুরুর আগে চাই সঠিক পরিকল্পনা। নিখুঁত পর্যবেক্ষণ। ক্রিকেট লড়াইয়ে তো এই দুটো ব্যাপার ছাড়া আপনি মাঠে নামতে গেলে বিপাকেই পড়বেন। বাংলাদেশ দলের ঠিক তাই হয়েছে। গেম প্ল্যান, প্রতিপক্ষকে বিশ্লেষণ, ভেন্যুর হিসেব-নিকেষ, পরিস্থিতি বুঝে ক্রিকেট খেলা- কোনোকিছুই ঠিকমতো করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা। 

দলে বা টিম ম্যানেজমেন্টে অভিজ্ঞদের কমতি নেই। কিন্তু পরিস্থিতি বুঝে পরিকল্পনার ছক কি সাজাতে পেরেছে বাংলাদেশ? আমিরাতের উইকেট কেমন হবে- সেটা কি ঠিকঠাক বুঝতে পেরেছে টাইগাররা? না পারেনি। এই যে গেম প্ল্যান যাদের করার কথা তারা কী নিয়ে ব্যস্ত কে জানে!

১০. ব্যাকআপ ক্রিকেটার কোথায়?

১৭ সদস্যের একটা দল নিয়ে বিশ্বকাপ মিশনে আসে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ১৫ জনের মূল দলের বাইরে ছিলেন রুবেল হোসেন আর আমিনুল ইসলাসম বিপ্লব। কিন্তু মূল পর্ব শুরুর আগেই ফিরিয়ে নেওয়া হয় স্পিনার বিপ্লবকে। এরপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি খেলার আগে চোটে পড়েন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। তার জায়গায় সুযোগ পেয়ে যান রুবেল হোসেন। 

কিন্তু ইনজুরির মিছিলে এরপর সাকিব আল হাসান যোগ দিতেই সমস্যা জটিল হয়ে ওঠে। কারণ টিম ম্যানেজমেন্ট কোভিড পরিস্থিতিতে দুরদর্শী হতে পারেনি। জৈব সুরক্ষা বলয়ের কথা মাথাতেও ছিল না তাদের। এমনিতে ১৫ জনের বেশি ক্রিকেটার দলে রাখলে তাদের খরচটা বহন করতে হয় সেই দেশের ক্রিকেট বোর্ডকে। বিসিবির তো আর টাকার কমতি ছিল না। প্রায় ৯০০ কোটি টাকা যদের ব্যাংকে পড়ে আছে তারা দলের সঙ্গে একটা বাড়তি ক্রিকেটারও রাখতে পারল না!

সাকিব আল হাসানের বিশ্বকাপ শেষ। নূরুল হাসান সোহানও ইনজুরিতে। এখন দলের ক্রিকেটার ১৩ জন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এমন নড়বড়ে একটা জায়গায় থেকেই মাঠে নামে বাংলাদেশ। সাকিবের জায়গায় কাউকে নিতেও পারেনি টিম ম্যানেজমেন্ট। কোভিড পরিস্থিতিতে সেই সুযোগটাও নেই। দলে যোগ দেওয়ার সোজা রাস্তা নেই। 

বাংলাদেশ থেকে কোনো ক্রিকেটারকে উড়িয়ে আনলে থাকতে হবে কোয়ারেন্টাইনে। নিয়ম অনুযায়ী মাঠে নামার আগে ৬ দিন বন্দি থাকতে হবে। জটিলতা এখানেই শেষ নয়, পুরো বিষয়টা নিয়ে আগে আইসিসির চিকিৎসক প্যানেলের সঙ্গে কথা বলতে হবে। লম্বা প্রক্রিয়া। এর মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযান। বিব্রতকর সেই পরিস্থিতি এড়াতেই হয়তো আর কাউকে দলে যোগ করতে পারেনি বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। অথচ এটা কতোটা অপেশাদারিত্ব তা ভাবেওনি!

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল কতটা অপ্রস্তুত হয়ে এসেছে এটি তার একটি নমুনা। আর এমন একটা দল ধারাবাহিকভাবে হারবে, তলানিতে যাবে এমনটাই স্বাভাবিক!

তবে ভবিষ্যতে জেগে ওঠার জন্য এটা একটা শিক্ষাও বটে! তার জন্য অবশ্য সবার আগে দুর্বলতাগুলো চিন্থিত করতে হবে। এরপর নেমে পড়তে হবে সমাধানের পথে! এই বিশ্বকাপের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েই ঘুরে দাঁড়াক বাংলাদেশ!

এটি/টিআইএস/জেএস