বিশ্বকাপে ভারতকে প্রথমবারের মতো হারিয়েছে পাকিস্তান, তাও দশ উইকেটের ব্যবধানে। পাকিস্তানের এই জয়ের তাৎপর্য বোঝা যায় ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলির কথায়। তিনি কোনো রকম রাখঢাক না রেখেই যেমন বললেন, পাকিস্তান উড়িয়েই দিয়েছে তার দলকে। পাকিস্তানের এই জয়ের বিশালতার আরও প্রমাণ মিলেছে রেকর্ড বইয়ে। বাবর আজমের দল ভেঙে দিয়েছে একগাদা রেকর্ড। সে রেকর্ডগুলো একনজরে দেখে নেওয়া যাক-

১- পাকিস্তানের এই জয় ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথম, সেটা আগেই বলে দেওয়া আছে। ওয়ানডে হোক, বা টি-টোয়েন্টি, যে কোনো ফরম্যাটের বিশ্বকাপে এটি ছিল দুই দলের ১৩তম লড়াই, তাতেই প্রথমবারের মতো শেষ হাসি হেসেছে পাকিস্তান। 

আরও দুটো জায়গায় এই নজির প্রথম। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এবারই প্রথম পাকিস্তান জিতল ১০ উইকেটের ব্যবধানে। ভারতেরও এটিই প্রথম দশ উইকেটের হার।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে বিনা উইকেটে সর্বোচ্চ রান তাড়া করার রেকর্ডও এটিই।

২- পাকিস্তান ভারতের দেওয়া ১৫২ রানের চ্যালেঞ্জ বিনা উইকেটেই টপকে গেছে। টি-টোয়েন্টির ইতিহাসেই এর চেয়ে বেশি রান বিনা উইকেটে তাড়া করার কীর্তি আছে একটি, বাবর আজমদের এ কীর্তি স্থান পেয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। প্রথমটা অবশ্য তাদেরই বিপক্ষে করা। ২০১৬ সালে তাদের দেওয়া ১৬৯ রানের লক্ষ্য নিউজিল্যান্ড টপকে গিয়েছিল কোনো উইকেট না হারিয়েই।

১৫২*- মোহাম্মদ রিজওয়ান আর বাবর আজমের এই উদ্বোধনী জুটিটি এখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেরই সর্বোচ্চ। এর আগের সর্বোচ্চ রানের ওপেনিং জুটিটি ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ২০০৭ বিশ্বকাপে ক্রিস গেইল আর ডেভন স্মিথ মিলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে করেছিলেন ১৪৫ রান। যে কোনো উইকেট জুটিতেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০১০ বিশ্বকাপে কুমার সাঙ্গাকারা আর মাহেলা জয়াবর্ধনের জুটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে করেছিল ১৬৬ রান। 

৩- এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে যে কোনো উইকেট জুটিতে পাকিস্তানের ১৫০ রানের জুটি। তিনটেই অবশ্য এসেছে বাবর-রিজওয়ান জুটিতে, সবকটি ২০২১ সালেই। এই দু’জনের বাইরে কেবল রোহিত শর্মা আর শিখর ধাওয়ানেরই একাধিক ১৫০ রানের জুটি আছে। প্রতিপক্ষকে এই প্রথম দেড়শ রানের জুটি গড়তে দেখল ভারত।

৭৯*- গতকাল ভারতের বিপক্ষে মোহাম্মদ রিজওয়ানের খেলা অপরাজিত ৭৯ রানের ইনিংসটিই বিশ্বকাপ অভিষেকে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অপরাজিত ৬৮; সেটাও এসেছে গতকালই, বাবর আজমের ব্যাট থেকে। দু’জনেই ২০১২ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নাসির জামশেদের করা ৫৬ রানকে টপকে গেছেন।

৬৮*- বাবরের করা ৬৮ রানের অপরাজিত ইনিংসটি বিশ্বকাপে যে কোনো পাকিস্তানি অধিনায়কের সর্বোচ্চ। তার এই ইনিংস টপকে গেছে ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শোয়েব মালিকের করা ৫৭ রানের কীর্তিকে। বিশ্বকাপে অধিনায়কত্বের অভিষেকে এই ইনিংসটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, ২০০৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ক্রিস গেইলের খেলা ৮৮ রানের ইনিংসটি আছে চূড়ায়। 

এর আগে বিরাট কোহলিও পেয়েছেন ফিফটি, বনে গেছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে ফিফটি পাওয়া প্রথম ভারতীয় অধিনায়ক। এরপর তার দেখানো পথে ফিফটি পেয়েছেন বাবর। তাতে বিশ্বকাপের মঞ্চও দেখল অভূতপূর্ব এক কীর্তি, এই প্রথম কোনো ম্যাচে দুই অধিনায়কই পেলেন ফিফটির দেখা।

৩- পাকিস্তানের উল্টো চিত্র ভারতীয় ইনিংসে। দুই ভারতীয় ওপেনার লোকেশ রাহুল আর রোহিত শর্মা মিলে তুলেছেন মাত্র তিন রান। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওপেনারদের কাছ থেকে এর চেয়ে কম রান আর কখনোই পায়নি ভারত। এর আগের সর্বনিম্ন ছিল ৫ রান, সেটাও এই পাকিস্তানের বিপক্ষেই। ২০০৭ সালে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে দুই ওপেনার মিলে তুলেছিলেন ৫ রান।

২১- শাহিন শাহ আফ্রিদির টি-টোয়েন্টিতে উদ্বোধনী ওভারে উইকেটসংখ্যা। ৫৯ ইনিংসে শুরুর ওভার করে এই উইকেট শিকার করেছেন তিনি। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার অভিষেকের পর থেকে যা সর্বোচ্চ। এ সময় টি-টোয়েন্টি ইনিংসের উদ্বোধনী ওভার করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের নজির ১৩টি।

এনইউ