কোচ ডমিঙ্গো ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ

এমন ঘটনা বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে কমই দেখা যায়। সংবাদ সম্মেলন শুরুর কথা স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টায়। কিন্তু মিনিটের পর মিনিট কেটে যায়, দেখা মেলে না বাংলাদেশি কোন ক্রিকেটার কিংবা টিম ম্যানেম্যান্টের। অপেক্ষায় গণমাধ্যম কর্মীরা। প্রায় ৩০ মিনিটের অপেক্ষা শেষে অবশেষে দেখা মেলে রাসেল ডমিঙ্গোর। অথচ ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অপেক্ষাতেই ছিলেন সবাই। 

কে জানে হয়তো প্রশ্নবাণ থেকে বাঁচতেই দূরে ছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক! কারণ গত কিছুদিনে দৃশ্যপট এমনই দাঁড়িয়েছে যে অদৃশ্য এক দেয়াল উঠেছে নাজমুল হাসান পাপন ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মাঝে! আগে যেমনই রাখডাক থাকুক, এবার তো দ্বন্দ্বটাও স্পষ্ট। বিশ্বকাপ মিশন যখন চলছে তখনই কিনা পাল্টাপাল্টি বক্তব্য বাংলাদেশ অধিনায়ক আর বিসিবি প্রধানের। কেউ ইট মারেন তো আরেকজন পাটকেল!

শুরুটা বিশ্বকাপ বাছাইয়ে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ শেষের পরই। যেখানে হার ধাক্কা সামলে উঠার আগেই পাপন সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেন। একাদশ গড়া থেকে শুরু করে বরাবরের মতো চাঁছাছোলা কথায় তীরবিদ্ধ করেন জাতীয় দলের ক্রিকেটারদেরও। ব্যাপারটা ঠিক ভাল লাগেনি রিয়াদের। রক্ত-মাংসের মানুষ যে তিনি, সেটা মনে করিয়ে দেন। 

ব্যাপারটা এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু থামেননি নাজমুল হাসান পাপন, রিয়াদদের মনে করিয়ে দেন, ‘ক্রিকেটাররা মানুষ, বিসিবিতে যারা আছে, তারাও মা‌নুষ!’ কথার এই যুদ্ধ যাতে আর না বাড়ে সেই জন্যই কি মিডিয়াকে এড়িয়ে গেলেন রিয়াদ?

সেই প্রশ্নের উত্তর না মিললেও, শনিবার শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রেস কনফারেন্স রুমে ঠিকই অপ্রীতিকর প্রশ্নের মুখে দাঁড়াতে হলো ডমিঙ্গোকে। তিনি অবশ্য ইনিয়ে বিনিয়ে প্রসঙ্গটা আড়াল করতে চাইলেন। বাংলাদেশের হেড কোচ বলছিলেন, ‘দেখুন, আমি শুধু ক্রিকেটে ফোকাস করতে এসেছি। দলের বাইরে কী বলা হয় তা নিয়ে আমরা খুব বেশি উদ্বিগ্ন হতে পারি না। আমার ফোকাস হলো আগামীকালের জন্য দলকে মানসিক এবং শারীরিকভাবে ভালোভাবে প্রস্তুত করা।’

ব্যাপারটা এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু থামেননি নাজমুল হাসান পাপন, রিয়াদদের মনে করিয়ে দেন, ‘ক্রিকেটাররা মানুষ, বিসিবিতে যারা আছে, তারাও মা‌নুষ!’ কথার এই যুদ্ধ যাতে আর না বাড়ে সেই জন্যই কি মিডিয়াকে এড়িয়ে গেলেন রিয়াদ?

কিন্তু দল কতোটা প্রস্তুত শ্রীলঙ্কার জন্য? টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের যে ম্যাচটি রোববার শারজাহ স্টেডিয়ামে শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকাল চারটায়। চারপাশ থেকে সমালোচনায় দলে যে একটা অস্বস্তির হাওয়া। দল পারবে তো মাঠের বাইরের ব্যাপারটা মাঠের বাইরেই রাখতে? 

আপাত দৃষ্টিতে সেটা সম্ভব হচ্ছে বলে চোখে লাগছে না। দলের প্রতিনিধি হয়ে যেই সংবাদ সম্মেলনে আসছেন ঘুরেফিরে আসছে মাঠের বাইরের প্রসঙ্গ। কখনো সাংবাদিকদের তরফ থেকে তো আসছেই, কখনো আগ বাড়িয়ে রিয়াদের মতো কেউ কথা বলছেন নিজে থেকেই। দল সত্যিই কি মাঠের বাইরের ঘটনা সেখানেই রাখতে পারবে?

রাসেল ডমিঙ্গো এবার যেন কিছুটা খোলস ভাঙতে চাইলেন। কোচ বললেন, ‘দেখুন, যখন আপনি বাংলাদেশের হয়ে খেলছেন, তখন সব সময় সমালোচনার মুখে পড়তে হয়, এমন পরিস্থিতি ভালো নয়। এখানে কোচিংয়ের একটি বড় ভূমিকা হল এই পরিস্থিতি ক্রিকেটাররা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সেদিকে মনোনিবেশ করা। মানুষ কী বলছে, কী লিখছে এবং কী বলছে সে সম্পর্কে আমরা কিছুই করতে পারি না। আমরা আমাদের পারফরম্যান্সের উপর ফোকাস করতে পারি, আমরা আমাদের পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন করতে পারি। যেসব এলাকায় আমরা অনুভব করি আমাদের উন্নতি করতে হবে।’

একেবারে বইয়ে পড়া কথা যেন বলে গেলেন ডমিঙ্গো। ক্রিকেটেই থাকতে চেয়েছেন ডমিঙ্গো, কিন্তু পারছেন কোথায়? অবশ্য তার জায়গা থেকে পেশাদারি দৃষ্টিকোণ থেকে আপাতত এছাড়া অন্য কিছু বলার নেই। এটুকু তো আঁচ করাই যায় নাজমুল হাসান পাপনের একের পর এক কথার তোপ আর সব বিষয়ে নাক গলানোটা ঠিক সহ্য করতে পারছেন না ক্রিকেটাররা!

এটি/এনইউ