একটি ছোট্ট তথ্য দিয়ে শুরু করা যাক- বিশ্বজুড়ে মহামারি রূপ নেওয়া করোনাভাইরাসের প্রকোপে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সোয়া ২৪ কোটির মতো। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৪৯ লাখের উপরে মানুষ। বলা যায় গত ২০ মাসে অমূল পরিবর্তন এসেছে পৃথিবীর, যার প্রায় পুরোটা নেতিবাচক অর্থে। এত সব খারাপ খবর আর অতৃপ্তির মধ্যেও করোনাভাইরাস সাক্ষাৎ ‘দেবী’ রূপে হাজির ওমান ক্রিকেটে!

কেন, সে জটলা খুলে নেওয়া যাক। করোনাভাইরাসের দাপটে গোটা পৃথিবীর মতো থমকে যেতে বসেছিল ক্রিকেট। বিশ্বজুড়ে ব্যাট-বলের ‘ঠুকঠাক’ আওয়াজ বন্ধও ছিল দীর্ঘদিন। এরপর ক্রিকেট ফিরলে বটে, তবে পিছিয়ে ২০২২ সালে গেল ২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। পণ্ড হতে বসেছিল ২০২১ ভারত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও। তবে বিধাতা এবার ওমান ক্রিকেটের দিকে মুখ ফিরে চাইলেন। ভারতের বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পড়ল সংযুক্ত আরব আমিরাতের। সেখানে ওমানও পেয়ে গেল বেশকিছু ম্যাচ আয়োজনের দায়িত্ব।

আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পুরো দুনিয়ার চোখ থাকবে ওমানে। ক্রিকেট মানচিত্রে নিজেদেরকে অবস্থান জানান দেওয়ার এর থেকে ভালো সুযোগ আর কিই-বা হতে পারে? এই ওমানে বিশ্বকাপের প্রথম পর্বের ৬টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। যার ৩টি ম্যাচ খেলবে ধীরে ধীরে ক্রিকেটের পরাশক্তি বনে যাওয়া বাংলাদেশ দল। ‘রক পাহাড়’ আর ‘ইমরাতের’ দেশে ক্রিকেটের এমন মহাযজ্ঞ, খোদ ওমানও ভেবেছিল কি কোনদিন?

ওমানের রাজধানী মাসকটে অবস্থিত নয়নাভিরাম আল আমরাত স্টেডিয়াম। শুধু রাজধানীই নয়, গোটা দেশজুড়েই ক্রিকেট স্টেডিয়াম আছে এই একটিই। সেখানেই এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামবে বাংলাদেশ দল। যদিও টাইগার শিবির এই বিশ্বকাপ আর দু-চারটে বিশ্বকাপের মতো দেখতে নারাজ। 

বাংলাদেশ দলের নির্বাচকরা যেমন ১৫ সদস্যের দল ঘোষণার পর বলেছেন, নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা দলটি নিয়েই এই বিশ্বজয়ের মঞ্চে নামবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। প্রায় একই ‘সুরে’ ছন্দ মিলিয়েছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও তার সতীর্থরা। সবচেয়ে বড় কথা, এযাবৎ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভালো কোন সুখস্মৃতি নেই বাংলাদেশ দলের। ২০০৭ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একমাত্র জয় একপাশে রাখলে টেস্ট খেলুড়ে কোন দলের বিপক্ষে জয়ের স্বাদ পায়নি টাইগাররা।

মাহমুদউল্লাহরা এবার সেই ‘ব্যারিয়ার’ বা ‘দেয়াল ভাঙার’ চ্যালেঞ্জে নেমেছেন। যদিও সে অবধি পৌঁছাতে গেলে আগে পার করতে হবে প্রথম পর্বের বাধা। ওমান থেকে যোগ্যতা প্রমাণের ‘ছাড়পত্র’ পেলে তবেই সংযুক্ত আরব আমিরাতে সে মিশনে নামতে পারবে বাংলাদেশ দল। বিশ্বকাপের প্রথম পর্বের বাধা টপকাতে বাংলাদেশ দলের প্রথম প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড। দুই দলের ম্যাচটি শুরু হবে স্থানীয় সময় ৬টায়, বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়।

কুড়ি ওভারের ফরম্যাটে এর আগে একবারই মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ-স্কটল্যান্ড। ২০১২ সালে। সে ম্যাচে ৩৪ রানের বড় হার টাইগারদের। লাল-সবুজের এখনকার দলটা অবশ্য বেশ পরিণত। বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া-নিউনিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতে বিশ্বকাপে গেছে। তবে আনুষ্ঠানিক দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ডের কাছে হার কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে টাইগার শিবিরে।

এ সব ফলাফল অবশ্য খুব একটা আমলে নিচ্ছেন না অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ, ‘আমরা দুটি প্র্যাকটিস ম্যাচ হেরেছি। আমার মনে হয় এর কোনো প্রভাব পড়বে না। আমরা কালকের ম্যাচের জন্য প্রস্তুত আছি। দলের আত্মবিশ্বাস আগের মতই আছে। আমরা সেরা ক্রিকেটটাই খেলতে পারব।’

ঘরের মাঠে মন্থর উইকেটে ফায়দা নিয়ে স্পিন শক্তিতে প্রতিপক্ষ ঘায়েল করলেও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে স্পিনার একজন কম নিয়েই মাঠে নামবে বাংলাদেশ। ইঙ্গিত দিলেন দলপতি, ‘বেশি স্পিনার নিয়ে খেলব না।’ নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে মাহমুদউল্লাহ বললেন, ‘প্রস্তুতি ভালো যাচ্ছে। ভ্রমণের একটু ক্লান্তি ছিল। কিন্তু ঠিক আছে। আমরা তাড়াতাড়ি চলে এসেছিলাম, কিছু দিন ওমানে অনুশীলন করেছি। আমার জন্য এটা দারুণ সুযোগ।’

মরু আর কংক্রিটের দেশ ওমানে খুব বেশি সবুজের ছোঁয়া নেই। তবে আল আমেরাত স্টেডিয়ামের গালিচা সেজেছে সবুজের সমারোহে। উইকেট ম্যাচের আগের দিনও ছিল সবুজ ঘাসে ভরা। যদিও ম্যাচের দিন ছেঁটে ফেলা হয় ঘাস। পরিসংখ্যান বলছে এই মাঠে বাইশ গজ আদর্শ হয়ে উঠবে ব্যাটসম্যানদের জন্য। কিন্তু ব্যাটিংটাই যে বাংলাদেশ দলের বড় দুর্ভাবনার জায়গা।

প্রথম পর্বে বাংলাদেশের অবস্থান করা ‘বি’ গ্রুপের অন্য দুই দল স্বাগতিক ওমান ও পাপুয়া নিউ গিনি। সাধারণ চোখে তাই বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন হয়ে গ্রুপ পর্ব না পার হতে পারার কোনও কারণ নেই। তবে মাঠের লড়াই পরিসংখ্যানের বিচার করে না। সে হিসেবে ‘দেয়াল ভাঙার’ মিশনে প্রথম পরীক্ষা মোটেও সহজ নয় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের জন্য।

স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ-

সৌম্য সরকার, লিটন কুমার দাস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), আফিফ হোসেন, নুরুল হাসান সোহান (উইকেটরক্ষক), শেখ মাহেদী হাসান, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, শরিফুল ইসলাম ও মুস্তাফিজুর রহমান।

টিআইএস/এটি