ক্রিকেটের মহোৎসব রাঙাতে প্রস্তুত ঐতিহ্যবাহী শারজাহ
ক্রিকেটমোদী সমর্থকদের কাছে শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়াম যেন রোমাঞ্চের অপর নাম। যদিও নব্বইদের দশকের সেই জৌলুশ আর সুখ্যাতি হারাতে বসেছে শারজাহ। তবে জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ার আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্রিকেটকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে এই শহরটি। শারজাহর জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করেই ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের মহাযজ্ঞ বসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। একই কারণে দুবাই আর আবুধাবি ক্রিকেট স্টেডিয়াম আলাদা জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বের বুকে।
শারজাহ শহরটির নাম আরবী থেকে অনুবাদ করা, যার অর্থ- ক্রমবর্ধমান সূর্য। শারজাহ সংযুক্ত আরব আমিরাতের মরুর বুকে সবুজতম এক শহর। শারজাহ সরকারিভাবে ডব্লিউএইচও-এর স্বাস্থ্যকর শহর হিসাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। শারজাহকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসাবে বিবেচনা করা হয়। দুবাই এবং আবুধাবির পর সংযুক্ত আরব আমিরাতের তৃতীয় সর্বোচ্চ জনবহুল শহর এটি।
বিজ্ঞাপন
ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক নগর হিসেবে শারজাহর বেশ সুখ্যাতি বিশ্বজুড়ে। শারজাহ দুর্গ (বর্তমানে জাদুঘর), মাহাত্মা দুর্গ, আল কালবা নদী, আল নূর দ্বীপ, আল মারাজ ওয়াটারফ্রন্টসহ আরও অনেক দর্শনীয় স্থান পর্যটকদের মন কাড়তে বাধ্য। সেখানেই এবার বসবে ক্রিকেটারের মহোৎসব, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ২৭ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম পর্বের দুটি ম্যাচসহ সর্বমোট ১১টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
প্রায় চল্লিশ বছর আগে শারজাহতে ক্রিকেট আয়োজনের স্বপ্ন বুনেছিলেন আব্দুর রহমান বুখাতির নামের এক ধনকুবের। তার প্রচেষ্টা আর পৃষ্ঠপোষকতাতেই ১৯৮৪ সালের পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে যাত্রা শুরু করে শারজাহ স্টেডিয়াম। এরপর তিন ফরম্যাট মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত শারজাহ স্টেডিয়ামে ২৬৩টি ম্যাচ মাঠে গড়িয়েছে। বিশ্বের আর মাত্র দুটি স্টেডিয়ামের এর চেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের কীর্তি আছে। একটি সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড (২৭৭), অপরটি মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড (২৭৫)।
সুনীল গাভাস্কার, কপিল দেব, ইমরান খান, জাভেদ মিয়াঁদাদ, ওয়াসিম আকরামের মতো ভারত-পাকিস্তানের কিংবদন্তিদের কাছে ঘরের মাঠে পরিণত হয় এই শারজাহ স্টেডিয়াম। ১৯৮৪ থেকে ২০০৩- এই সময়ের মধ্যেই শারজাহর এই মাঠে ১৯৮টি ওয়ানডে আয়োজিত হয়। শারজাহ স্টেডিয়ামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ক্রিকেটের নানা ইতিহাসও। ১৯৮৬ সালে এই মাঠেই ভারতের বিপক্ষে শেষ বলে ছক্কা মেরে পাকিস্তানকে ঐতিহাসিক জয় এনে দেন জাভেদ মিয়াঁদাদ। ১৯৯৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইতিহাস গড়া টানা দুই সেঞ্চুরি করেছিলেন শচীন টেন্ডুলকার, যার একটা আবার ‘ডেজার্ট স্টর্ম’ নামে বিখ্যাত।
ম্যাচ ফিক্সিংয়ের স্ক্যান্ডালের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে শারজাহর নাম। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে ফিক্সিং চরম আকার ধারণ করলে ২০০১ সালে এই মাঠে ভারতীয় জাতীয় দলের খেলা নিষিদ্ধ করে ভারত সরকার। এর পর থেকেই এই মাঠের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। এমনকি ২০০৩ থেকে ২০১০- এই সাত বছর এই মাঠে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজিত হয়নি। ২০০৯ সালে পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বন্ধ হলে কিছুটা প্রাণ ফিরে পায় শারজাহ স্টেডিয়াম।
এই মাঠে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হয়েছে সর্বসাকুল্য ১৩টি। যেখানে আগে ব্যাট করা দল জিতেছে ৯ বার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২১৫ রান তোলা আফগানিস্তান এখনো সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের মালিক।
টিআইএস/এনইউ