আমার কোনো আক্ষেপ নেই
বিশ্ব ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের আবির্ভাব হওয়ার পর অনেকেই ধারণা করেছিলেন, ক্রিকেটের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে একেবারেই ভিন্ন রূপে দেখা যাবে বাংলাদেশ দলকে। সে সময়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ‘ভিন্ন রূপ’ ইতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছিল। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৬ উইকেটে হারিয়ে হুঙ্কারটা মন্দ দেয়নি টাইগাররা। তবে এর পরেই যেন থমকে গেছে গর্জন!
এরপর যতগুলো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছে বাংলাদেশ দল, ক্রিকেট পরাশক্তি কোন দেশের বিপক্ষে জয় নেই একটিও। এমনকি প্রথম পর্ব খেলে এরপর মূল পর্বে জায়গা নিতে হচ্ছে। এবার লাল-সবুজের দল নিয়ে আশাবাদী অনেকেই। ঢাকা পোস্টকে আশার কথা শুনিয়েছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। সাকিব আল হাসানের প্রমাণের কিছু দেখেন না তিনি। মুস্তাফিজকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন নিজেদের বোলিং বিভাগের নেতা হিসেবে। ২০১৪ এবং ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দুই ঘটনা নিয়েও কথা বলেছেন ঢাকা পোস্ট -এর প্রতিবেদকের সঙ্গে।
বিজ্ঞাপন
প্রশ্ন: ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ, সে দলে জায়গা হয়নি আপনার। সেই টি-টোয়েন্টি দলের মশালই এখন জ্বালাচ্ছেন আপনি। অভিজ্ঞ এক দল নিয়ে বিশ্বকাপ যাচ্ছে বাংলাদেশ। অধিনায়ক হিসেবে আপনার ভাবনা কী?
মাহমুদউল্লাহ: সেই ঘটনার জন্য আমার কোন আক্ষেপ নেই। আলহামদুলিল্লাহ, এখন যেমন আছি অনেক ভালো আছি। যদি সুস্থ থাকি সবকিছু ঠিক থাকে তাহলে অধিনায়ক হিসেবে এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলব। এটা দারুণ সম্মানের বিষয়। আমি সবসময়ই অধিনায়কত্বের চ্যালেঞ্জ উপভোগ করি, এটি আমাকে বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগায় ভালো খেলার জন্য, ভালো কিছু করার জন্য।
প্রশ্ন: ২০১৬ বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েছিলেন। ভারতের বিপক্ষে ১ রানে হারের সেই ম্যাচের স্মৃতি এখনো মুছে ফেলা যায়নি। সহজ ম্যাচ বের করতে না পারার জন্য সমর্থকদের রোষানলেও পড়তে হয়েছিল আপনাকে। এবার বিশ্বকাপে ভারতের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ এলে নিশ্চয়ই ম্যাচটি বের করে আনতে চাইবেন?
মাহমুদউল্লাহ: সবার জীবনেই ভালো-খারাপ কিছু অভিজ্ঞতা থাকে। এটি আমার সেরকম একটি অভিজ্ঞতা ছিল। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে পরে নিদাহাস ট্রফির সেই জয় ছিনিয়ে আনতে পারি। সব থেকে বড় কথা আল্লাহর রহমত ছিল। আর যেটি বললাম, সবার জীবনে একটা লার্নিং পয়েন্ট থাকে, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচটি আমার জীবনের বড় একটি শিক্ষা ছিল। কখনো আবার এমন পরিস্থিতিতে পড়লে চেষ্টা করব যেন ম্যাচটি শেষ করে আসতে পারি। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে হরহামেশাই এমন সিচুয়েশন তৈরি হয়। আমি বলব শুধু আমার জীবনেই না, অনেকের জীবনেই হয়তো এরকম কিছু ভুলভ্রান্তি থাকে, সে ধরনের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্যই এই ধরনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগে।
প্রশ্ন: দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্বে আছেন। অভিজ্ঞ আর তারুণের মিশলে দারুণ একটি দল নিয়ে বিশ্বকাপে যাচ্ছেন। অধিনায়ক হিসেবে এই দলটি নিয়ে কতটা আশাবাদী?
মাহমুদউল্লাহ: আমাদের টিমের ব্যালেন্সটা বেশ ভালো। সম্প্রতি সবাই অনেক ভালো ক্রিকেট খেলছে। আমি বেশ আত্মবিশ্বাসী আমাদের টিম নিয়ে।
প্রশ্ন: বর্তমান বিশ্বকাপ দলটির শক্তি আর দুর্বলতার জয়গা কোথায়?
মাহমুদউল্লাহ: যেটি বললাম, আমাদের দলের ব্যালেন্সটা খুবই ভালো। আমাদের বোলিং ইউনিট এখন খুব ভালো পারফর্ম করছে, সেরা আত্মবিশ্বাসের সাথে আছে। একইসঙ্গে আমাদের ব্যাটিংয়ে সক্ষমতা আছে। ইনশাআল্লাহ আমি আশা করি যেন আমরা আমাদের এই দুটি ডিপার্টমেন্টে নিজেদের বেস্ট পারফরম্যান্স দিয়ে বিশ্বকাপে ভালো কিছু অর্জন করতে পারি।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ বিশ্বকাপ লক্ষ্য ঠিক করেই ওমানের উদ্দেশে যাত্রা করবেন নিশ্চয়ই?
মাহমুদউল্লাহ: হ্যাঁ, সেটি তো অবশ্যই। বিশ্বকাপে ভালো করার লক্ষ্য তো অবশ্যই থাকবে। এজন্যই আমরা আগেভাগে ওমানে প্রস্তুতি নেব।
প্রশ্ন: সম্প্রতি টি-টোয়েন্টিতে টানা ৩টি সিরিজ জয়। যেখানে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মতো প্রতিপক্ষ ছিল। এই আত্মবিশ্বাস বিশ্বকাপে কতটা কাজে দিবে বলে মনে করছেন?
মাহমুদউল্লাহ: অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে সিরিজ জেতার পর আমাদের আত্মবিশ্বাস ভালো ছন্দে আছে। এই আত্মবিশ্বাস আমরা কাজে লাগাতে চাই বিশ্বকাপে।
প্রশ্ন: ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর পর বিশ্ব আসরে তেমন কোন সাফল্য নেই বাংলাদেশ দলের। এবার কেমন হতে পারে?
মাহমুদউল্লাহ: আমরা অবশ্যই চেষ্টা করব প্রথম রাউন্ডে ভালো ক্রিকেট খেলে সেকেন্ড স্টেজে যাওয়ার। সেখানে গিয়ে আমরা চেষ্টা করব যতগুলো ম্যাচ জেতা যায়।
প্রশ্ন: অধিনায়ক হিসেবে সবসময়ই লিটনের প্রতি আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি আপনার। এবার তো তামিম নেই, অবধারিতভাবে ওপেনিংয়ে লিটনের দায়িত্ব বেড়ে যাচ্ছে। তার জন্য অধিনায়কের বার্তাটা কি থাকবে?
মাহমুদউল্লাহ: শুধু লিটন না, আমার মনে হয় টপ অর্ডারের সবারই দায়িত্ব আছে আলাদা আলাদা। আমাদের ব্যাটিং ইউনিট সকলকে দায়িত্ব নিতে হবে, আমি সবসময় প্রেফার করি সবাই সবার দায়িত্বটা শেয়ার করা, দায়িত্ব ভাগাভাগি করে যেন আমরা দলের সাফল্যে অবদান রাখতে পারি।
প্রশ্ন: মধ্যপ্রাচ্যে বিশ্বকাপ। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০১৮ সালে এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ দল। সেখানে এবারের কন্ডিশন কতটা চ্যালেঞ্জিং হবে?
মাহমুদউল্লাহ: এর আগে আমরা যখন মধ্যপ্রাচ্যে খেলেছিলাম আবুধাবি-দুবাইয়ের কন্ডিশনে ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে, আলহামদুলিল্লাহ আমরা সেবার ফাইনাল খেলেছিলাম। আশাকরি সেই আত্মবিশ্বাস এবার কাজে দেবে। আমার মনে হয় ওখানকার কন্ডিশন এখন কেমন আছে ওই জিনিসটা আইডেন্টিফাই করা, ওই অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করা, এটাই এখন আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।
প্রশ্ন: সম্প্রতি ঘরের মাঠে স্পিন শক্তির দল হিসেবে দেখা গেছে বাংলাদেশকে। বিশ্বকাপের উইকেট সাধারণত স্পোর্টিং হয়ে থাকে। ব্যাটসম্যান আর পেসারদের উপর আস্থা কতখানি?
মাহমুদউল্লাহ: দেখুন ঘরের মাঠে সুযোগ-সুবিধা ইদানিংকালের ক্রিকেটে সব টিম নিয়ে থাকে। আমার মনে হয় যারা নেতিবাচক কথাবার্তা বলে এই ধরণের বিষয় নিয়ে, তারা বাংলাদেশের সাফল্যকে ঈর্ষা করে। তার থেকে বড় কথা হচ্ছে যে রকম কন্ডিশন ছিল, সেখানে বোলারদের এক্সিকিউশন বড় ছিল। তারা খুব ভালোভাবে এক্সিকিউট করেছে। আমাদের মিডল-অর্ডার বা লোয়ার মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানরাও চ্যালেঞ্জগুলো খুব ভালোভাবে সামাল দিয়েছে। টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের জন্য চ্যালেঞ্জিং কন্ডিশন ছিল, যে রকম আমরা চেয়েছি হয়তো বা সে রকম আশানুরূপ ব্যাটিং করতে পারিনি। কিন্তু আমি আশাবাদী যখন আমরা স্পোর্টিং উইকেট পাব, আমরা আমাদের সব সক্ষমতা জানান দিতে পারব।
প্রশ্ন: বলা হচ্ছে এবারের বিশ্বকাপে বাকি দলগুলোর থেকে গড় হিসেবে সবচেয়ে তরুণ দল বাংলাদেশ। এই তরুণদের মধ্যে মুস্তাফিজ এরই মধ্যে বিশ্ব ক্রিকেটে খ্যাতি অর্জন করেছেন। চলতি আইপিএলেও দুর্দান্ত পারফর্ম করছেন তিনি। বিশ্বকাপে তার ভূমিকা কেমন হবে?
মাহমুদউল্লাহ: মুস্তাফিজ অনেক ভালো করছে। সে আমাদের বোলিং বিভাগের নেতা। সম্প্রতি সে যে রকম পারফর্ম করছে, আমার মনে হয় সে এই মুহূর্তের সেরা বোলার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। আমি আশা করি এবারও দলের জন্য সে বড় অবদান রাখবে।
প্রশ্ন: সাকিবের ব্যাট হাতে সময়টা ভালো যাচ্ছে না। আইপিএলেও সাইড বেঞ্চে বসে কাটাতে হচ্ছে। এতে কি আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি পড়বে তার, সব ছাপিয়ে বিশ্বকাপই কি হতে পারে সাকিবের স্বরূপে ফেরার মঞ্চ?
মাহমুদউল্লাহ: সাকিবের স্বরূপে ফেরার কিছু নেই। সাকিব সবসময় সেরা ছন্দে থাকে। সাকিবের সেই ক্যাপাবিলিটি আছে, সে বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার। আমি বিশ্বাস করি ও সবসময় যেভাবে বাংলাদেশ দলের জন্য অবদান রেখেছে, আমি আশা রাখি যে এই বিশ্বকাপেও অতিমানবীয় ব্যাটিং করবে এবং টিমের জন্য কন্ট্রিবিউট করবে।
প্রশ্ন: আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এক যুগ কাটিয়ে দিয়েছেন। দলের নবীন সদস্য থেকে দলকে বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে নেতৃত্ব দেওয়া। আপনার কি মনে হয় আমাদের ক্রিকেট সংস্কৃতিতে এই সময়টায় বড় একটা পরিবর্তন এসেছে?
মাহমুদউল্লাহ: আমি শুধু এতোটুকুই বলতে পারি, সব মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে তিনি আমাকে সম্মান দিয়েছেন। আশা করবো যে আমি আমার দায়িত্বটা সৎভাবে পালন করতে পারব।
প্রশ্ন: আগামী বছর আরও একটি বিশ্বকাপ আছে এই ফরম্যাটে। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের প্রস্তুতিও নিশ্চয়ই এবারের বিশ্বকাপ মঞ্চ?
মাহমুদউল্লাহ: আগে এই বিশ্বকাপ ভালোভাবে শেষ করি। কোভিড সিচুয়েশন ইউ নেভার নো পরবর্তী দিন কীরকম হবে, তো চেষ্টা করব সুস্থ থেকে যেন ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি, ধারাবাহিক ক্রিকেট খেলতে পারি। এখন লক্ষ্য সুস্থ থাকা এবং নিজেকে ফিট রাখা।
টিআইএস/এটি