বিদেশিরা বেতন নেয় মাসে ১২-১৫ লাখ, দেশীয় কোচ না খেয়ে মরে : মাশরাফি
২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেললেও এখনো বিদায় বলেননি সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সরব হয়েছেন তিনি। জাতীয় দলের আলোচিত সব ইস্যুতে নিজের মতামত তুলে ধরে বোর্ডের দিকে ছুড়ে দিচ্ছেন নানা প্রশ্ন, নিজের মতো করে দিচ্ছেন সমাধানও। এবার বাংলাদেশ দলের কোচ নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মাশরাফি।
বেশ কিছুদিন ধরেই মাঠের বাইরে পরিবেশটা ভালো যাচ্ছে না বাংলাদেশ ক্রিকেটে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের টেস্ট ফরম্যাট থেকে অবসর, তামিম ইকবালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ না খেলার সিদ্ধান্ত, কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভস ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত- এসব অবাক করেছে দেশের ক্রিকেটকে। সবকিছুর জন্য অনেকেই কাঠগড়ায় তুলছেন জাতীয় দলের হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গোকে।
বিজ্ঞাপন
মাশরাফির প্রশ্ন, কোচ নিয়োগের আগে দেখা হয় তার প্রোফাইল কতটা সমৃদ্ধ। অভিজ্ঞতা কেমন। দলকে কোন পথে কোথায় নিতে চান তিনি। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের সম্পর্কে জানার গভীরতা, এদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি জানা আছে কি না, এসব কতটা দেখা হয়?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে মাশরাফি লিখেছেন, ‘একটা কোচ যখন নিয়োগ দেওয়া হয় তার প্রসেস আসলে কী থাকে সেটা জানার খুব ইচ্ছে আমার। এ যাবত কালে প্রায় ৯-১০ জন কোচের সাথে কাজ করেছি। আমি যতটুকু দেখেছি প্রত্যেকটা কোচ তার নিজের মতো করে কাজ শুরু করে, যেটা করাটাও স্বাভাবিক। কারণ একেকজনের কাজের ধরন একেক রকম।’
মাশরাফি আরও লিখেছেন, ‘কিন্তু সব সময় দেখেছি প্রত্যেকটি কোচ তার নিজস্ব একজন বা দুইজন প্রিয় খেলোয়াড় বানিয়ে নেন, যা পরে সিলেক্টর, ক্যাপ্টেন বা অন্যকেউ তাকে আর কিছুই বোঝাতে পারে না, বরং সম্পর্কগুলো জটিল হতে থাকে আর ঐ পছন্দের জন্য সে আবার দুইজনকে এমন অপছন্দ করা শুরু করে যে তাদের আর দেখতেই পারে না। এক পর্যায়ে এমন জিদ শুরু করে যে ‘প্রয়োজনে চাকরি ছেড়ে দিব’ এমন কথাও প্রকাশ্যে শুনেছি কয়েকবার কোচের মুখে।’
কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোথায় ভুল করে বসে বোর্ড, সেটিও তুলে ধরেন মাশরাফি। বলেন, ‘কোচ নিয়োগের সময় যে নতুন কোচের ইন্টারভিউ নেওয়া হয় সেখানে আসলে তাকে কী প্রশ্ন করা হয়? বা আদৌ কি করা হয় কোন প্রশ্ন? নাকি শুধু জানতে চাওয়া হয় তোমার কী করার ইচ্ছা? হয়তো তখন সে কিছু পয়েন্ট তুলে ধরে ওখান থেকে নতুনত্ব কিছু পেলে চিন্তা করে দারুণ কোচ, কী সুন্দর প্ল্যান, এর মতো কোচই হয় না!’
সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, ‘আমার তো মনে হয় ভুল ওখানেই হয়ে যায় কারণ আমরা মানুষকে বোঝাতে সব সময় হাইপ্রোফাইল কোচ খুঁজি যা পরে আর কোনো কাজে আসে না। আমাদের প্রয়োজন আমাদের ক্রিকেট যে ফলো করে বা আমাদের ম্যাক্সিম্যাম খেলোয়াড়দের নিয়ে যে স্টাডি করে এসে ইন্টারভিউ দিচ্ছে- এরকম কাউকে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে ন্যূনতম একটা ধারণা নিয়ে আসা। তা না হলে ‘ও’ তো বুঝবেই না একজন সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদ তৈরি করতে কত দিন লেগেছে। বা অতীতে তাদের অবদান কী। একজন মোস্তাফিজ কীভাবে উঠে এসেছে। বার বার বলেছি, আবারও বলছি দলের আগে কখনোই কোনো খেলোয়াড় হতে পারে না, ভালো না করলে বাদ পড়তেই হবে।’
বিদেশি কোচদের দিকে আঙুল তুলে মাশরাফি লিখেছেন, ‘কোচকে বলা হয় ফাদার অফ দ্যা সাইড, সে সবাইকে দেখে রাখবে। প্রয়োজনে কঠোর হবে আবার দলের স্বার্থে যাকে প্রয়োজন তাকে ব্যবহার করবে। তার সব কিছুই হতে হবে পজিটিভ। কারও প্রতি কঠোর কারও প্রতি নমনীয় এটা এক রকমের বৈষম্যতে রূপ নেয় আমাদের দেশে। যা গোছানো দলকে অগোছালো করে ফেলে। এক পর্যায়ে তারা আবার নিজেদের দেশে, না হলে আইপিএল বা আরও ভালো কোনো অফার পেয়ে চলে যাবে। কারণ এত দিনে সে আমাদের দেশের ক্রিকেটকে নিয়ে অনেক এক্সপেরিমেন্ট করে নিজের অভিজ্ঞতা বাড়িয়েছে, নিজের প্রোফাইলও ভারি করেছে মাঝখান দিয়ে।’
বলছিলেন মাশরাফি, ‘বেতন তো নিয়েছে মাসে ১২-১৫ লাখ টাকা। আর আমাদের কোচগুলো না খেয়ে মরে। গালিও দেখি আমাদের কোচরাই হজম করে। আর পরে ওনারা চলে গেলে আমরা পড়ি বিপদে; আবার নতুন কোচ, নতুন পরীক্ষা, নতুন দাবি মেটানো। এভাবেই চলছে বাংলাদেশে কোচদের যাওয়া-আসা।’
টিআইএস/এটি/জেএস