বয়সটা কেবল ৩৯-এ পড়েছে। জাতীয় দলের পাঠ চুকালেও ঘরোয়া ক্রিকেটের সমৃদ্ধ ক্যারিয়ারটা আরও সমৃদ্ধ করার সুযোগ ছিল মোশাররফ হোসেন রুবেলের সামনে। অথবা জাতীয় দলের বেশ কয়েকজন সতীর্থের মতো কোচিংয়েও থিতু হতে পারতেন, বসতে পারতেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কোনও চেয়ারে। যেমনটি বসেছেন শাহরিফার নাফীস, আব্দুর রাজ্জাকরা। অথচ রুবেল ছুঁটছেন এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে, এক ডাক্তার থেকে আরেক ডাক্তারের কাছে।

২০১৯ সালের মার্চে ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে জাতীয় দলের এই ক্রিকেটারের। দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়ে প্রায় সুস্থ হয়ে উঠছিলেন এই বাঁহাতি অলরাউন্ডার। কিন্তু গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এমআরআই করার পর দেখা যায়, পুরোনো টিউমারটি আবার নতুন করে বাড়ছে। তারপর থেকে আবার শুরু হয়েছে কেমোথেরাপি। টানা কেমোথেরাপির ফলে ইডিমা ও এপিলেপসিসে ভুগছেন তিনি। 

ইডিমায় টিউমারের পাশে পানি জমছে। বর্তমানে টিউমার স্থিতিশীল থাকলেও ইডিমার ফলে নার্ভের সমস্যা দেখা দিচ্ছে রুবেলের। এর কারণে বাঁ হাত আর বাঁ পা অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। হাতের কব্জি থেকে আঙুল পর্যন্ত অবশ হয়ে থাকে, এতে নাড়াচাড়া করতে বেশ বেগ পেতে হয় রুবেলকে। আগের মতো সাবলীলভাবে কথা বলতেও সমস্যা হচ্ছে। 

একই সঙ্গে এপিলেপসিও দেখা দিয়েছে। এটি এক ধরনের স্নায়ুবিক রোগ বা খিঁচুনি জাতীয় রোগ। এটিও বেশ ভোগাচ্ছে জাতীয় লিগের ঢাকা বিভাগের সাবেক এই অধিনায়ককে। এর মধ্যেই এখন পর্যন্ত ২০টি কেমো নিয়েছেন রুবেল। কেমোর পরবর্তী ধাপ শুরু করবেন চলতি মাসের ৩০ তারিখ থেকে। করোনাভাইরাসের জন্য সিঙ্গাপুরে যেতে না পারার কারণে তার চিকিৎসা প্রক্রিয়া চলবে ঢাকায়।

ঢাকা পোস্টকে মোশাররফ রুবেলের বর্তমান অবস্থা জানিয়েছেন তার সহধর্মিণী চৈতি ফারহানা রূপা। গত বছরের ১৮ আগস্ট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান রুবেলের বাবা। ওই সময় রুবেল নিজেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। গতকাল বাবা মারা যাওয়ার ১ বছর পূর্ণ হলো। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বর্তমানে নিজ গ্রামে আছেন রুবেল। সেখান থেকেই মুঠোফোন চৈতি জানালেন বিস্তারিত।

কেমোথেরাপি আবার কবে?
রুবেলের যে টিউমারটা ছিল, ওটা পরবর্তীতে আবার ফিরে আসে। এখন স্টেবল আছে, তবে টিউমার থেকে ইডিমা বেড়েছে। ইডিমা হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষতস্থানে যে পানিজমে, অনেক সে রকম পানি। পানিটা বেড়ে যাওয়ার ফলে সেখানকার নার্ভে চাপ তৈরি হচ্ছে। এই অবস্থার মধ্যে মধ্যে অনেকগুলো কেমোথেরাপি নিতে হচ্ছে। ২০টি কেমো নেওয়া হয়ে গেছে। এজন্য নার্ভে একটু সমস্যা হচ্ছে। সেখান থেকে এপিলেপসি (স্নায়ুবিক রোগ বা খিঁচুনি) হয়েছে অনেকবার, এই নিয়ে ছয় থেকে সাত বার হলো। এখন এপিলেপসির ওষুধ খাচ্ছে। 

যেহেতু টিউমারটা রুবেলের ডানপাশে। শরীরের ডান অংশটা নিয়ন্ত্রণ করে শরীরের বা অংশ। এপিলেপসি হওয়ার কারণে রুবেলের হাত এবং পা দুটোতেই আগের তুলনায় অনেক জোর কমে গেছে। হাতটা একটু বেশি, নাড়াচাড়ায় করতে পারে না সেভাবে। কব্জির থেকে হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত নাড়াচাড়া করতে পারছে না। এর জন্য ফিজিওথেরাপি নিচ্ছে। উন্নতি খুবই আস্তে আস্তে, যেহেতু এটি নার্ভের সমস্যা, ব্রেইন এর সাথে সম্পর্ক। এটা যদি অন্যকোনো শারীরিক সমস্যা বা আঘাতজনিত কারণে হতো,।তাহলে হয়তো দ্রুত সেরে উঠত। পা চলছে, হাঁটতে পারে কিন্তু কষ্ট হয়। পা টেনে টেনে হাঁটতে হচ্ছে।

কবে সেরে উঠবেন রুবেল?
এটা আসলে খুবই অনিশ্চিত। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যেতে পারছি না। যেহেতু ওর চিকিৎসা চলছিল সিঙ্গাপুরে। করোনার জন্য সেখানে যাওয়া যাচ্ছে না। পুরা দেশটাই এখন বন্ধ হয়ে আছে। সিঙ্গাপুর যাওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হলেই আমরা যত দ্রুত সম্ভব সেখানে যাব ডাক্তারের পরামর্শ নিতে। ডাক্তার নিজেও সামনাসামনি দেখতে চাচ্ছেন, যেহেতু এক বছরের বেশি হয়ে গেছে। 

আর উন্নতির ব্যাপারটা ডাক্তার এখনো তেমনভাবে কিছু বলতে পারছেনা। ৪টি করে কেমোথেরাপি দেওয়ার পর এমআরআই করা হয়, এমআরআই রিপোর্ট দেখে ডাক্তার পরবর্তী কেমোর পরামর্শ দেন। সবশেষ এমআরআই করার পর আমরা খুব আশাবাদী ছিলাম, এবার যদি কমে তাহলে ডাক্তার আরও কিছুদিন অপেক্ষা করবেন। হয়তো এবার কেমোটা দ্রুত লাগবে না, কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখা হবে। 

যেহেতু রুবেলের এটি ‘হাইলি এগ্রেসিভ’ টিউমার, সেক্ষেত্রে টিউমারটা বাড়েনি একই রকম আছে। কিন্তু টিউমারটা যে মিলিয়ে যাওয়া, সেটিও হয়নি তার পরিবর্তে পানি বেড়েছে। এজন্য শরীরের অন্যান্য সমস্যা গুলো দেখা দিচ্ছে। ডাক্তার এখনো ৪টি কেমো নিতে বলেছেন ২ মাসে। তারপর আবার এমআরআই-এর রিপোর্ট দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবেন।

খরচ হয়ে গেছে প্রায় দুই থেকে আড়াই কোটি
অর্থনৈতিকভাবে তো খুবই কষ্টদায়ক, আপনি যে কাউকেই বলেন। এখন পর্যন্ত আমাদের প্রায় ২ থেকে আড়াই কোটি টাকার উপরে খরচ হয়ে গেছে। চলছে আসলে, যেহেতু রুবেল জাতীয় দলের খেলোয়াড় ছিলেন, আমাদের কিছু সঞ্চয় ছিল। প্রথম যখন অপারেশন হলো, তখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে সাহায্য করেছিল, প্রধানমন্ত্রী সাহায্য করেছিলেন। বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার রুবেলের সাবেক সতীর্থ, এরপর কয়েকটি সংস্থা পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। এখন আসলে সেভাবে কারো কাছ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছি না।

টিআইএস/এমএইচ