অস্ট্রেলিয়া সিরিজেই আসল পরীক্ষা শামীমের
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয়টিতে ম্যাচে অভিষেক। সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ও শেষ ম্যাচেও খেলেছেন শামীম পাটোয়ারী। তাকে নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। শামীমকে টাইগারদের ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি হিসেবেও দেখছেন অনেকেই। তবে শামীমের ব্যাটিংয়ের ধরণ ভালো লাগলেও বাকিদের দলে এখনই নাম তুলছেন না মোহাম্মাদ আশরাফুল। জানালেন, শামীমের আসল পরীক্ষা আসন্ন অস্ট্রেলিয়া সিরিজে।
ঢাকা পোস্টকে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আশরাফুল বলছিলেন, ‘শামীমের ব্যাটিং আমার কাছে খুবই ভালো লাগছে। ও সাধারণত ঘরোয়া ক্রিকেটে যেভাবে খেলে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও সেভাবেই ব্যাটিং করছে। একই রকম মানসিকতা নিয়ে খেলছে। এটা দেখে খুবই ভালো লাগছে। এখন দেখার বিষয় হবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কিভাবে সামাল দেয়।’
বিজ্ঞাপন
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেই রীতিমতো হিরো বনে গেছেন শামীম। যেমনটি দেখা গিয়েছিল তরুণ আফিফ হোসেন, নাঈম শেখ, নাজমুল হোসেন শান্তসহ একাধিক ক্রিকেটারের ক্ষেত্রে। তবে তারা এখনো নিজেদের অবস্থায় শক্ত করতে পারেননি দলে। নিজেকে হারিয়ে খোঁজায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ম্যাচ খেলেই আশার পালে হাওয়া দিচ্ছেন শামীম। তাকে নিয়ে আলোচনা ক্রিকেট মহলে।
নিজের অভিষেক ম্যাচে ১৩ বলে ২৯ রানের ঝড়ো ইনিংস খেললেও ম্যাচ জেতাতে পারেননি। দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ম্যাচে জিম্বাবুয়ের দেওয়া ১৯৪ রানের লক্ষ্য টপকাতে নেমে আবারও ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন। খেলেন ১৫ বলে ৩১ রানের হার না মানা ইনিংস। এতে ৫ উইকেটের জয়ের পাশাপাশি সিরিজ জেতে টাইগাররা। শামীম হয়ে যান উদযাপনের শিরোমণি। সতীর্থ থেকে সমর্থক, সবার প্রশংসা বন্যায় ভাসেন।
মূলত বয়সভিত্তিক দলে আলো ছড়িয়ে আলোচনায় এসেছেন শামীম পাটোয়ারি। তাকে নিয়ে প্রত্যাশা আকাশচুম্বী। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য শামীম ঘরোয়া ক্রিকেটেও নিজের নাম উজ্জ্বল করেছেন ব্যাটে, বলে, ফিল্ডিংয়ে। তবে সেখানে তাকে খুব বেশি পরীক্ষা দিতে হয়নি বলে মনে করেন আশরাফুল। জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক দিয়েছেন তার জুতসই ব্যাখ্যা।
আশরাফুল বলছিলেন, ‘আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে যে খেলাগুলো হয়, সেখানে সর্বোচ্চ ১২৫, ১৩০, ১৩৫ গতির বল খেলে অভ্যস্ত শামীম। জিম্বাবুয়েতেও তাকে খুব বেশি পরীক্ষা দিতে হয়নি। ওখানেও ১৩০-১৩৫ গতির বল খেলছে।’
সঙ্গে যোগ করেন আশরাফুল, ‘সামনে আমাদের অনেকগুলো টি-টোয়েন্টি সিরিজ আছে। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা আছে। ওখানে দেখার বিষয় আসলে ১৪০ এর উপর গতির বলের চ্যালেঞ্জগুলো কিভাবে নিচ্ছে, পাওয়ার হিটিংয়ে কতটা সফল হচ্ছে। এই জায়গায় যদি সফল হতে পারে, সেটা ওর জন্য যেমন ভালো, আমাদের ক্রিকেটেরও উন্নতি হবে।’
তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে। ঘরোয়া ক্রিকেট আর বয়সভিত্তিক দলে পারফর্ম করে আলোচনায় আসা শামীম বাংলাদেশ মূল দলের জার্সি গায়ে চাপিয়ে নিজেই স্বীকার করেছেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মোটেও সহজ জায়গা নয়। তবে শামীম যা করেছেন সেটি খুব বড় অর্জন না হলেও বাংলাদেশ ক্রিকেটে বিরলই বলতে হবে। এর আগে এমন সলিড হিটার কবে দেখেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট?
ক্রিজে নেমেই প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে লড়াইয়ের মানসিকতা বাঁ দিকের থেকে আলাদা করেছে শামীমকে। তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জোর আলোচনা। সে ভার বইতে পারবেন তো শামীম? আশরাফুল সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দিলেন, এটিই এদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি। লড়াইয়ে টিকা থেকে নিজের উপস্থিতি জানান দিতে গেলে এগুলোর মধ্য দিয়েই নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে শামীমকে।
তারকা ক্রিকেটার আশরাফুলের ভাষায়, ‘এটি আসলে আমাদের ক্রিকেট সংস্কৃতি। এটা নিয়ে কথা বলে খুব একটা লাভ নাই। এটাই জীবন। দেখেন দুদিন আগেই কিন্তু সোহানকে নিয়ে অনেক আলোচনা হলো। ঠিক দুদিন পর এখন সেটি এখন শামীম পাটোয়ারী আর সৌম্য সরকারকে নিয়ে হচ্ছে। এটাই আমাদের ক্রিকেট সংস্কৃতি। এর সঙ্গে মানিয়ে নিয়েই চলতে হবে।’
টিআইএস/এটি/এনইউ