তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচেও বাংলাদেশের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যখন টস হারলেন, ক্যামেরার লেন্স তার দিকে ঘুরতেই মলিন মুখখানি ভেসে উঠল টেলিভিশন পর্দায়। যদিও রিয়াদ জানালেন, আগে ব্যাট করতে না পেরে অখুশি নন তিনি। তবে তার শারীরিক অঙ্গভঙ্গিতে স্পষ্ট, টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে চেয়েছিলেন।

জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক সিকান্দার রাজার বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্তর প্রতিদান বাইশ গজে দিলেন স্বাগতিক ব্যাটসম্যানরা। টাইগার বোলারদের রীতিমতো শাসন করে হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠের সবুজ গালিচায় চার-ছক্কার পসরা সাজালেন ওয়েসলি মাধেভেরে, রেজিস চাকাভা, তাদিওয়ানাশে মারুমানিরা। এতে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ দাঁড়াল ১৯৩ রান। সিরিজ জিততে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে বাংলাদেশকে।

এর আগে অবশ্য এতো রান টপকে একবারই জয়ের রেকর্ড আছে টাইগারদের। ২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২১৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ৫ উইকেট জিতেছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। জিম্বাবুয়ের দেওয়া ১৯৪ রানের লক্ষ্য পূরণ করতে গেলে রীতিমতো রেকর্ড গড়তে হবে বাংলাদেশ দলকে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এর আগে সর্বোচ্চ ১৬৪ রান টপকিয়ে জিতেছিল ২০১৬ সালে, খুলনায়। এবার সে রেকর্ড পাড়ি দিয়ে নতুন রেকর্ড গড়তে হবে বাংলাদেশকে।

জিম্বাবুয়ের হয়ে এদিন ব্যাট হাতে ধ্বংসলীলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন মাধেভেরে। আগের ম্যাচে ফিফটির স্বাদ পাওয়া এই ব্যাটসম্যান এ ম্যাচেও খেলেছেন পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব ইনিংস। তার ৩৬ বলে ৫৪ রানের ইনিংসের সঙ্গে চাকাভার ২২ বলে ৪৮ ও বার্লের ১৫ বলে ৩৫ রানের ওপর ভর করে ১৯৩ রানের বিশাল সংগ্রহ পেয়েছে জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের হয়ে সৌম্য সরকার ২টি এবং সাকিব আল হাসান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ১টি করে উইকেট নেন।

আগে ব্যাট করতে নেমে বৃত্তের ফায়দাটা বেশ ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছে স্বাগতিকরা। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে তোলে ৬৩ রান। যেখানে ইনিংসের প্রথম বলেই লড়াইয়ের ইঙ্গিত দেয় স্বাগতিকরা। বাংলাদেশি পেসার তাসকিন আহমেদের ছোড়া বলটি লেগ সাইডে উড়িয়ে মারেন মারুমানি। তবে ব্যাটে-বলে ভালো সংযোগ না হওয়ায় সে বল থেকে আসে ২ রান।

ইনিংসের চতুর্থ ওভারে তাসকিনের ওপর চড়াও হন মেধেভেরে। জিম্বাবুয়ের এই ওপেনারকে বল ফেলার জায়গা যেন পাচ্ছিলেন না তাসকিন। সে ওভারে একে একে হজম করলেন ৫টি চার! কোনো ঝুঁকি না নিয়ে প্রপার ক্রিকেটিং শটে এই ৫ চার তুলে নেন মাধেভেরে। ইনিংসের ৪ ওভার ২ বলেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে দলীয় স্কোর ৫০ ছোঁয় জিম্বাবুয়ে। পাওয়ার প্লের শেষ বলে বাংলাদেশকে খানিক স্বস্তি দিয়ে প্রথম উইকেট এনে দেন সাইফউদ্দিন। ২০ বলে ২৭ রানে ফিরলেন মারুমানি। 

ওখানেই থামেনি স্বাগতিকরা। ব্যাট হাতে রানের চাকা সচল রাখেন মেধেভেরে। সঙ্গে যোগ দেন চাকাভা। বাংলাদেশি বোলারদের শাসন করে ইনিংসের ১০ ওভারেই দলীয় শতরানের কোটা ছুঁয়েছ ফেলে স্বাগতিকরা। ইনিংসের ১১তম ওভারে একাদশে সুযোহ পাওয়া বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ একই বল করতে থাকলেন। সুযোগগুলো কাজে লালাগেল চাকাভা। হাওয়ায় ভাসিয়ে পরপর তিন বল সীমানার বাইরে পাঠিয়ে সে ওভার থেকে তুলে নেন ২১ রান।

এরপর মাত্র ৩১ বলে ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরির তুলে নেন মাধেভেরে। আগের ম্যাচেও ফিফটির স্বাদ পেয়েছিলেন তিনি। আজ অর্ধশতক হাঁকিয়ে সাজঘরে ফেরেন ৫৪ রান করে। ৩৬ বলের ইনিংসটি সাজান ৬টি চারের মারে। তার আগেই অবশ্য ৪৮ রান করে আউট হন চাকাভা। ২২ বলের বিধ্বংসী ইনিংসটি সাজান ৬টি ছয়ের সাহায্যে।

শেষদিকে ডিওন মেয়ার্সের ২৩ রানের সঙ্গে রায়ান বার্লের ১৫ বলে অপরাজিত ১৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসের কল্যাণে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৯৩ রান। সিরিজ জিততে কঠিন পথই পাড়ি দিতে হবে বাংলাদেশকে।

টিআইএস