এবার একাধিক কারণে আলোচনায় উঠে এসেছে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ। একে তো করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় ১৪ মাস পর মাঠে গড়িয়েছে এই টুর্নামেন্ট, তার ওপর আম্পায়ারিং ইস্যুতে বিতর্ক, সাকিব আল হাসান কাণ্ড ডিপিএলকে সমর্থকদের কাছে আলাদাভাবে উপস্থাপন করেছে। সবশেষ টেলিভিশন পর্দায় সরাসরি সম্প্রচার ডিপিএলকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। পেয়েছে দর্শক গ্রহণযোগ্যতা।

এমন একটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পেরে যারপরনাই খুশি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। এভাবে সমর্থকদের সমর্থন পেলে প্রয়োজনে ক্রিকেটের জন্য আলাদা টেলিভিশন চ্যানেল করার ইচ্ছের কথা জানালেন খোদ বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। যেখানে ঘরোয়া ক্রিকেটের সব টুর্নামেন্ট সরাসরি দেখানো হব বলে জানালেন পাপন। সঙ্গে এই টুর্নামেন্ট থেকে তিনটি অর্জন খুঁজে পেয়েছেন বিসিবি সভাপতি।

টুর্নামেন্ট থেকে পাওয়া বিসিবির প্রথম অর্জনের বিষয়ে পাপন জানালেন:

প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটাই ভালো হয়েছে। খেলানো তো যায়ই। ক্লাব বলুন, খেলোয়াড় বলুন, দর্শক বলুন, আপনারা বলুন- সবাই খেলা চায়। কিন্তু এখন অস্বাভাবিক পরিস্থিতি, স্বাভাবিক নয়। প্রটোকল মেনে খেলানো যে কি কঠিন সেটা তারাই বুঝতে পারবে যারা আয়োজন করে। 

সিসিডিএমকে প্রথমে ধন্যবাদ জানাতে চাই, অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। সাথে মাঠকর্মীরা, ওরা যে কষ্টটা করেছে এই সময়টায়। খেলোয়াড়দের কথাও বলতে হবে, কোভিড প্রটোকল মেনে খেলেছে। আজ খেলা শেষ হচ্ছে পরশুই আবার জিম্বাবুয়ে চলে যাচ্ছে। জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের ওপর এটা বাড়তি চাপ। আমাদের কোভিড সম্পর্কিত কোনো সমস্যা হয়নি, সেজন্য আমি মনে করি এটা বিরাট অর্জন। ইংল্যান্ডের মত দেশেও খেলোয়াড়রা পজিটিভ হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এখানে কেউ পজিটিভ হয়নি। এটা আমাদের প্রথম অর্জন।

ডিপিএল থেকে প্রাপ্ত দ্বিতীয় অর্জন:

দ্বিতীয়ত, সরাসরি সম্প্রচার। গত বছরই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সুপার লিগ সরাসরি সম্প্রচার করব। লাইভ টেলিকাস্টের জন্য আগ্রহী চ্যানেল তো দরকার। অনেকেই সন্দিহান ছিল দর্শকপ্রিয়তা কেমন হবে। এটা ওদের শঙ্কার কারণ ছিল। শেষপর্যন্ত দুটি চ্যানেল দেখিয়েছে, ওদের ধন্যবাদ জানাই। আজ ওরা জানাল, ওরা যে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছে দর্শকদের, এত মানুষ খেলা দেখেছে এবং মন্তব্য করেছে যে ওরাই আশ্চর্য হয়েছে। এটা ডিপিএলের দ্বিতীয় অর্জন। 

তৃতীয় অর্জন প্রসঙ্গে বলেন পাপন:

তৃতীয়ত, এটা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর নামে করা হয়েছে, কাজেই বাড়তি চ্যালেঞ্জ ও সৌন্দর্য ছিল। খেলাগুলোও দেখুন, ছোট বড় বলে কোনো কথা নেই। কে জিতবে এটা বুঝার কোন পথ ছিল না। কাগজে-কলমে আবাহনী প্রায় জাতীয় দল ছিল। লিটন, নাঈম, আফিফ, মুশফিক, সাইফউদ্দিন, মোসাদ্দেক- ওরা তো জাতীয় দলের খেলোয়াড় এবং টি-টোয়েন্টি দলেই খেলে। তারপরও আবাহনীকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। এমন না যে অটো জিতে গেছে। আমরা মনে করলেও আসলে কোনো দল ছোট না। খেলাঘরের কাছেও আবাহনী হেরেছে। 

প্রাইম ব্যাংক, প্রাইম দোলেশ্বর খুব ভালো দল। সবচেয়ে ভালো বোলিং ছিল প্রাইম ব্যাংকের। মুস্তাফিজ, শরিফুল, রুবেল এ ধরনের বোলাররা ছিল। কয়েকটা দল সংগ্রাম করেছে যেহেতু জাতীয় দলের কিছু তারকা খেলোয়াড় খেলেনি। এজন্য অনেক দল একটু দুর্বল হয়ে গেছে। ওরা খেললে কী হত চিন্তা করে দেখুন। অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলা হয়েছে। এটাই ক্রিকেটের সৌন্দর্য। 

জাতীয় দলের বাইরেও অনেকে ভালো করেছে। মিজান ভালো করেছে, সোহান ভালো করেছে। মাহমুদুল হাসান জয় দুর্দান্ত। সেদিন শামীম যে ইনিংস খেলল, অসাধারণ ইনিংস। আমাদের পাইপলাইনে অনেক দক্ষ খেলোয়াড় আছে এটা তো দেশবাসী বুঝতে পারছে। তারা নিশ্চয়ই আনন্দ পাচ্ছে। এই যে নতুন নতুন ছেলেদের দেখতে পাচ্ছি এটা হয়েছে সরাসরি সম্প্রচারের জন্য। আমি আশা করব আমরা এখন থেকে সব খেলা যদি সরাসরি দেখাতে পারি, কোনো চ্যানেলের সাথে লম্বা চুক্তিতে যেতে পারি কি না সেটা দেখছি। 

তা না হলে যদি ক্রিকেটের জন্য আলাদা চ্যানেল নিতে হয় সেটার জন্য আমি চেষ্টা করব যাতে করে আমাদের এনসিএল থেকে শুরু করে সব ঘরোয়া ক্রিকেট। সব যদি দেখাতে পারতাম টিভিতে, খেলার মান বারত। এতে শুধু খেলোয়াড়দের না, আম্পায়ারিংয়ের মানও বাড়বে কারণ সবাই দেখবে। খেলোয়াড়দের বাড়তি তারনা থাকে আমাকে আজ ভালো খেলতে হবে। সরাসরি সম্প্রচারের একটা ভূমিকা ছিল। আমার কাছে মনে হয়েছে খুবই ভালো একটা টুর্নামেন্ট হচ্ছে।

টিআইএস