শতকের পর দর্শক অভিবাদনের জবাব কনওয়ের, পেছন থেকে এসে তাকে অভিনন্দন জানালেন নিকলসও/গেটিইমেজ

স্কোরকার্ড
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৮৬ ওভারে ২৪৬/৩ (ল্যাথাম ২৩, কনওয়ে ১৩৬*, নিকলস ৪৬*; অ্যান্ডারসন ৫৫-১, রবিনসন ৫০-২)।

ডেভন কনওয়েকে মনে থাকার কথা আপনার। বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফরে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তাসকিনদের ত্রাস উপহার দিয়েছিলেন তিনি। সেই কনওয়ে এবার গড়লেন এমন এক কীর্তি, যা নেই ব্রায়ান লারা, শচীন টেন্ডুলকারদেরও। আরেকটু ভালো করে বললে, ক্রিকেটের দুই কিংবদন্তি যেটা পুরো ক্যারিয়ারে করতে পারেননি, কনওয়ে সেটা গড়েছেন অভিষেকেই। লর্ডসে নিজের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেই করেছেন অনবদ্য এক শতক, তাতে তার দল নিউজিল্যান্ডও চলে এসেছে চালকের আসনে। 

ক্যারিয়ার গড় পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই, কিন্তু লর্ডসে এলেই যেন কিছু একটা হয়ে যেত দু’জনের। অন্য অনেক বিষয়ের মতো লারা টেন্ডুলকারকে যেন এক সুতোয় গেঁথেছিল লর্ডস, কাকতালীয়ভাবে এখানে দু’জনের গড়ই ২০, নেই কোনো সেঞ্চুরিও। সঙ্গত কারণেই ‘ক্রিকেটের মক্কা’ খ্যাত লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নেই শচীন-লারার নাম। সেখানেই ‘ডেভন কনওয়ে’ নামটা লিখিয়েছেন নিউজিল্যান্ড ওপেনার। 

তবে আরেকজনের নামও উঠে যেতে পারে আজ, কাকতালীয়ভাবে তিনিও নিজের প্রথম ম্যাচটাই খেলতে নেমেছেন, ওলি রবিনসন। ইংলিশ এই পেসার ম্যাচের শুরুর সেশনেই তুলে নিয়েছেন দুই উইকেট, তাতে নিউজিল্যান্ডও ১১৩ রানে হারিয়েছিল ৩ অভিজ্ঞ ব্যাটার টম ল্যাথাম, কেন উইলিয়ামসন, ও রস টেলরকে।

তুলে নিয়েছেন রস টেলরের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট, অভিষিক্ত ওলি রবিনসন তো উচ্ছ্বসিত হবেনই/গেটিইমেজ

 

অভিষিক্ত রবিনসনের সঙ্গে আরও তিন পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড, জেমস অ্যান্ডারসন আর মার্ক উডকে নিয়ে মাঠে নেমেছিল ইংল্যান্ড। এ ত্রয়ীর সম্মিলিত চেষ্টায় তিন অভিজ্ঞ ব্যাটারকে সাজঘরে ফিরিয়ে স্বাগতিকরা যখন চালকের আসনে চলে যাওয়ার অপেক্ষায়, তখনই শুরু কনওয়ে-প্রতিরোধের। সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন হেনরি নিকলসকে। দু’জনে মিলে উপহার দিয়েছেন প্রায় নিখুঁত এক ব্যাটিং প্রদর্শনী।

কনওয়ে তার পুরো ইনিংসজুড়েই ছিলেন বেশ স্বচ্ছন্দ। তবে সময়ের দাবি মেনে খোলসে ঢুকে পড়তেও পিছপা হননি। মধ্যাহ্ন বিরতির পর যখন কেন উইলিয়ামসন বিদায় নিলেন, এরপরই যেন নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। ৫০ মিনিটে করেছিলেন মোটে ৪ রান।

এরপরই আবার মিলেছে চেনা কনওয়ের দেখা। নড়বড়ে নব্বইয়েও যাতে লাগাম পড়েনি, মাত্র দশ বলে পার হয়েছেন এ বাধা। রবিনসনকে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে দারুণ এক ফ্লিকে চার মেরে তুলে নেন অভিষেকে সেঞ্চুরি, তুলে নেন লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নিজের নামও। 

অনেক কীর্তিও গড়া হয়ে যায় তাতে। নিউজিল্যান্ডের হয়ে ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে পান লর্ডসে শতকের দেখা, তবে কিউইদের কেউই পাননি অভিষেকে সেঞ্চুরি, কনওয়েই প্রথম। আরেকটা দিক থেকেও তিনিই প্রথম। সব মিলিয়ে লর্ডসে অভিষেকেই শতকের দেখা পাওয়া ১২তম ব্যাটার তিনি, তবে আগের ১১টা নামের প্রতিটিই ছিল ইংলিশ কারো, ইংলিশ নন এমন কেউ অভিষেকে লর্ডসে সেঞ্চুরি পেলেন এবারই প্রথম।

পুরো দিনে দুটো অর্ধেক সুযোগ প্রতিপক্ষকে দিয়েছেন তিনি। প্রথমটা ৭৭ রানে, রবিনসনকে ফ্লিক করেছিলেন তিনি, তা বেরিয়ে গেছে লেগ স্লিপে ঝাঁপিয়ে পড়া জ্যাক ক্রাউলির একটু পাশ দিয়ে। এরপর মার্ক উডকে সুইপমতো করেছিলেন, তা টপ এজ হয়ে বেরিয়ে গেছে লাফিয়ে ওঠা উইকেটরক্ষক জেমস ব্রেসির একটু ওপর দিয়ে।

অন্য পাশে নিকলসও ছিলেন প্রায় নিখুঁত। দু’বার তার প্যাডের দেখা পেয়েছিল ইংল্যান্ড, তবে তা এলবিডব্লিউর জন্য যথেষ্ট ছিল না। একবার তো রিভিউতেও বেঁচে ফেরেন নিকলস। উডের বল তার প্যাড ছুঁলে রিভিউ নেয় ইংলিশরা। সেখানে অবশ্য দেখা যায় বলটা পিচ করেছিল লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে, ফলে রক্ষা পান নিকলস। তার আর কনওয়ের কল্যাণে স্বস্তি নিয়েই প্রথম দিন শেষ করেছে সফরকারী নিউজিল্যান্ড।

ইংলিশ গ্রীষ্ম আসবে, আর গ্যালারিতে দর্শক থাকবে না তা কী করে হয়? তবে করোনা সেই চিরচেনা রীতিতে দিয়েছিল বাধা। চলতি গ্রীষ্মের শুরুতেই অবশ্য স্বাভাবিকতা ফিরেছে, মিলেছে দর্শকদের প্রবেশাধিকার/ক্রিকইনফো

তবে সবকিছুর আগে, এ ম্যাচটা বিশেষ কিছু ছিল আরেকটা কারণেও। গত দর্শকশূন্য গ্রীষ্মের পর চলতি ইংলিশ গ্রীষ্মের শুরুতেই দর্শকদের দেওয়া হয়েছিল প্রবেশাধিকার। আর তাতেই যেন গতকাল প্রাণ ফিরেছিল লর্ডসের গ্যালারিতে।

এনইউ