প্রাক্তনের আঘাতে হঠাৎ ছন্দপতন কোহলিদের 

ব্যাট-বল দু’দিক থেকে বেশ ভারসাম্যপূর্ণ দল নিয়ে এবারের আইপিএল খেলতে নেমেছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। বিরাট কোহলিদের এই দলের প্রথম কোনো শিরোপা জয়ের আক্ষেপ দীর্ঘদিনের। নতুন স্বপ্ন নিয়ে চলতি আসরের প্রথম দুই ম্যাচেই তারা কলকাতা নাইট রাইডার্স ও চেন্নাই ‍সুপার কিংসকে বড় ব্যবধানে হারায়। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা বেঙ্গালুরুর হঠাৎ ছন্দপতন হয়েছে গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে। যেখানে বড় ভূমিকা রেখেছেন দলটির সাবেক তারকা মোহাম্মদ সিরাজ।

আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সর্বশেষ আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়া ভারতীয় স্কোয়াডে জায়গা পাননি ডানহাতি এই পেসারের। যার ব্যাখ্যা হিসেবে অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেছিলেন, পুরনো বলে সিরাজ খুব একটা কার্যকরী নয়। এরপর আইপিএলে রোহিতের স্টাম্প উড়িয়ে হয়তো কিছুটা আক্ষেপ মিটেছে সিরাজের। বাকি ছিল বেঙ্গালুরু, এবারের নিলামে দীর্ঘদিন খেলা ফ্র্যাঞ্চাইজিটি তাকে ছেড়ে দিয়েছিল। তাদের মাঠ চিন্নাস্বামীতেই গতকাল খেলতে নামে সিরাজের নতুন দল গুজরাট। যেখানে তিনি ৪ ওভারে মাত্র ১৯ রান খরচায় গুরুত্বপূর্ণ ৩টি উইকেট নিয়েছেন।

ম্যাচের সবচেয়ে ইকোনোমিক্যাল বোলার সিরাজ সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও পেয়েছেন জয়ের পর। প্রথম তিনি তিন উইকেট নিয়ে মূলত বেঙ্গালুরুর মেরুদণ্ড ভেঙে দেন। শুরুটা করেন দেবদূত পাদিক্কালকে আউট করে। এরপর ফিল সল্টকেও ক্লিন বোল্ড করে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সেই ‘সি…ইউ সেলিব্রেশন’। সিরাজের শেষ শিকার শেষদিকে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা লিভিংস্টোন। শুরুর দিকে তার বোলিং তোপে বিপর্যস্ত হয়েই মূলত আর বড় পুঁজির পথ খুঁজে পায়নি বেঙ্গালুরু। তবে লিভিংস্টোনের ফিফটি, টিম ডেভিড ও জিতেশ শর্মাদের ক্যামিওতে ২০ ওভারে তাদের সংগ্রহ ছিল ৮ উইকেটে ১৬৯ রান।

বেঙ্গালুরু নিজেদের গত দুই ম্যাচে জিতেছিল দাপুটে পারফরম্যান্স দেখিয়ে। যেখানে রান পেয়েছিলেন দারুণ ফর্মে থাকা সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলিও। কাল তিনি আউট হয়ে যান দ্বিতীয় ওভারেই। এরপর বেঙ্গালুরুকেও শুরুর দিকে টেনে নেওয়ার ভারটা কেউ নিতে পারেনি। অধিনায়ক রজত পাতিদার (১২) ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিলেন ম্যাচটিতে। তবে তাদের দেওয়া ১৭০ রানের পুঁজিও যথেষ্ট হতে পারত আগের ম্যাচগুলোর জয়ে অবদান রাখা বোলারদের কল্যাণে। যদিও এদিন ভুবনেশ্বর কুমার ও যশ দয়াল ছাড়া কেউ সেভাবে রানের ধারা আটকাতে পারেননি।

লক্ষ্য তাড়ায় গুজরাট অধিনায়ক শুভমান গিল মাত্র ১৪ রান করে আউট হলেও, বাকি কাজ সেরেছেন টপ অর্ডারের বাকি তিনজন। যদিও হ্যাটট্রিক ফিফটির পথে থাকা ওপেনার সাই সুদর্শন ফিরলেন এক রানের (৪৯) আক্ষেপ নিয়ে। এরপর আর গুজরাটকে পেছনে ফিরতে দেননি বিধ্বংসী ব্যাটার জস বাটলার ও শেরফান রাদারফোর্ড। বাটলার ৩৯ বলে ৫টি চার ও ৬ ছক্কায় ৭৩ এবং রাদারফোর্ড ১৮ বলে ৩০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ১৩ বল ও ৮ উইকেট হাতে রেখে গুজরাটের জয় নিশ্চিত করেন। তিন ম্যাচে এটি তাদের দ্বিতীয় জয়, অন্যদিকে সমান ম্যাচে প্রথম হার দেখল বেঙ্গালুরু।

কোহলিদের পরাজয়ে আইপিএলের পয়েন্ট টেবিলের চূড়ায় উঠে গেল পাঞ্জাব কিংস। যদিও ২ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট সমান ৪। একই অবস্থা দুইয়ে থাকা দিল্লি ক্যাপিটালসের। ৩ ম্যাচে সমান ৪ পয়েন্ট নিয়ে যথাক্রমে পরের দুটি অবস্থানে বেঙ্গালুরু ও গুজরাট। এই ম্যাচ শেষে কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়েছেন বেঙ্গালুরুর প্রাক্তন সিরাজ, ‘আজ ম্যাচের আগে আমি একটু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। আমি এখানে (বেঙ্গালুরু) ৭ বছর খেলেছি। লাল জার্সি ছেড়ে নীল জার্সি পরতেও একটু কষ্ট হচ্ছিল, কিন্তু হাতে বল পাওয়ার পর সব স্বাভাবিক হয়।’

এএইচএস