২০২০ সালে বাংলাদেশকে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে শিরোপা জিতিয়েছিলেন আকবর আলি। এরপর তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তবে এখনও গায়ে তোলা হয়নি বাংলাদেশ জাতীয় দলের জার্সি। প্রথমবারের মতো আয়োজিত এনসিএল টি-টোয়েন্টিতেও সাফল্য পেয়েছেন আকবর। ঢাকা মেট্রোকে হারিয়ে তার দল রংপুর বিভাগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছে। 

আজ (মঙ্গলবার) সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে শিরোপা নির্ধারণী ফাইনালে মুখোমুখি হয় ঢাকা মেট্রো ও রংপুর। মেট্রোর দেওয়া মাত্র ৬৩ রানের লক্ষ্য আকবর আলির দল ৫ উইকেট হাতে রেখে পেরিয়েছে। ঘরোয়া এই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ঢাকা পোস্টের ক্রীড়া প্রতিবেদক সাকিব শাওনের মুখোমুখি হয়ে জানিয়েছেন রংপুর বিভাগের অধিনায়ক। জানিয়েছেন সর্বশেষ টুর্নামেন্ট ও ব্যক্তিগত লক্ষ্যের কথা। 

আসর শুরুর আগে কি ভেবেছিলেন শিরোপা জিততে পারবেন?
আকবর : আশা তো অবশ্যই ছিল। কে আশা করে না? আমাদের বিশ্বাসটা ছিল আসলে। বিশ্বাস না থাকলে আপনি স্বপ্ন দেখবেন কীভাবে। বিশ্বাস ছিল যে আমরা শিরোপা জিততে পারব।

দলে কোনো বড় তারকা না থাকার পরেও শিরোপা জয়ের বিশ্বাসটা কীভাবে পেয়েছেন?
আকবর : টি-টোয়েন্টিতে আসলে বড় নাম দিয়ে তো খেলা হয় না। আমার কাছে মনে হয় সঠিক সময়ে ক্লিক করাটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ব্যাটিং গভীরতা অনেক বড়, আপনি দেখবেন যে (আলাউদ্দিন) বাবু ভাই আমাদের অলরাউন্ডার, সে মাত্র কয়েকটি ম্যাচে ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েছে। এনাম ভাইয়ের খুব কম সুযোগ হয়েছে। এছাড়া রবিউল তো সুযোগই পায়নি ব্যাটিং করার। ব্যাটিং গভীরতা বড় ছিল, এটা একটা ভরসার জায়গা ছিল আমাদের।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট কি তাহলে আনপ্রেডিক্টেবল?

আকবর : হ্যাঁ অবশ্যই। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আপনি আসলে বড় নাম নিয়ে কখনও বলতে পারবেন না যে, আপনি জিতবেনই। হ্যাঁ আপনি বলতে পারেন যে, অন্যান্য দলে অনেক বড় নাম থাকতে পারে। কিন্তু দেখেন আমাদের দলে ওরকম বড় নাম টি-টোয়েন্টির জন্য না থাকলেও কার্যকরী খেলোয়াড় অনেক ছিল।

ঢাকা মেট্রো আসরে উড়ছিল, তাদের দুইবার মাটিতে নামালেন কাজটা মোটেও সহজ ছিল না নিশ্চয়ই…

আকবর : না, মেট্রো অসাধারণ খেলেছে। সত্যি কথা বলতে মেট্রো পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে দারুণ খেলেছে। ওরা রানার-আপ ডিজার্ভ করে। আমরাও ভালো খেলছি, ওরাও ভালো খেলছে। আমার মনে হয় যে যোগ্য দুটো দলই ফাইনাল খেলেছে।

দলের কোন ক্রিকেটারের পারফরম্যান্সে অবাক হয়েছেন বেশি?

আকবর : বাবু ভাই আমাকে মুগ্ধ করেছে। আপনাদের সবার কাছে এখন হয়তো লাগবে যে হ্যাঁ ভালো করছে বা উইকেট পাইছে বলে এখন বলতেছি। কিন্তু না, উনি এত ইনজুরি নিয়েও অনেকদিন পর একটা ভালো ক্রিকেট খেলল। আমার কাছে মনে হয় যে উনার এই ক্যামব্যাকটা অনেক দরকার ছিল। উনার নিজের জন্য, আমাদের দলের জন্যও। বাবু ভাই এভাবে পারফর্ম করবে আমি নিজেও আশা করিনি। হ্যাঁ, আমরা উনাকে নিয়ে যে প্ল্যান করছিলাম, তারচেয়ে অনেক অনেক বেশি সার্ভিস আমরা পেয়েছি।

নামের সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন তকমা পেতে কেমন লাগে?

আকবর : আসলে আমি বিষয়টা এভাবে দেখি না। টিমমেট হিসেবে দলের সবার কাছে ভালো থাকতে চাই। ভালো কালচার তৈরি করতে চাই। তো এভাবে নামের সঙ্গে বড়কিছু থাকা বা এগুলো নিয়ে আসলে আমি অত চিন্তা করি না।

ফাইনাল ম্যাচটা ফাইনালের মতো জমলো না, পিচের সমস্যা নাকি আপনারদের বোলাররা সেরাটা দিয়েছে?

আকবর : সত্যি কথা বলতে উইকেটটা একটু কঠিন ছিল। কারণ সিজনের একদম নতুন উইকেটে খেলা হয়েছিল। পিচের মুভমেন্ট একটু কঠিন হয়ে গিয়েছিল ব্যাটসম্যানদের কাছে। আর আমাদের বোলার তো অবশ্যই ভালো করেছে। আমাদের বোলাররা টুর্নামেন্টের সেরা বোলিং–ই করেছে আজ।

রান না হওয়ায় শেষদিকে কি এনসিএলের রং হারিয়েছে?

আকবর : না, আমার মনে হয় না যে রং হারিয়েছে। আমার মনে হয় পজিটিভ অনেক বিষয় আছে। তবে অবশ্যই কোয়ালিফায়ার এবং ফাইনালে রানটা হয়নি। এখন আমরা মাঠকর্মীদের দোষ দিতে পারবো না। এখানে অনেক খেলা হয়েছে, এত খেলা হয়েছে যে বিশ্রামের সময়টাও পায়নি উইকেট রেডি করার জন্য। পর্যাপ্ত সময়ের প্রয়োজন, সেটাও হয়নি। শুরুর দিকে যদি বলেন যে ১৯০ রান বা কখনও ১৬০ রান চেজ হয়েছে। আবারও ২০০ রানও চেজ হয়েছে সহজে। আমার মনে হয় যে এটা খুব পজিটিভ দিক ছিল।

নিজে বড় বড় ছয় মেরেছেন, রানও করেছেন। পাওয়ার হিটিং নিয়ে কাজ করেছেন কি না…

আকবর : আমি চলতি বছরের তিন মাস সাদা বলে অনেক কাজ করেছি এইচপিতে। লাল বলে খুব কম ফোকাস ছিল। কম বলতে রেড বলে শুধু বেসিক জিনিসটা নিয়েই কাজ করেছি। আর সাদা বলের দিকে লক্ষ্যটা বেশি ছিল। এই পরিশ্রমটাই আসলে কাজে দিয়েছে। 

কোচ নাজিমউদ্দিনকে কথা বলতে কম দেখা যায়, আপনাদেরকে কী মেসেজ দিয়েছিলেন তিনি?

আকবর : না, নাজিম ভাইয়ের সঙ্গে এই বছরই আমি প্রথম কাজ করলাম। এই সিজনে উনাকে যতটুকু এনসিএলে পেলাম আরকি। আমরা যেহেতু টুর্নামেন্টের ভেতরে ছিলাম, উনি টেকনিক্যাল সাইড নিয়ে খুব কমই কথা বলেছেন। তবে উনার চোখে যেগুলো লেগেছে উন্নতির জন্য বলেছেন, আমাকে নোট করে জানিয়েছেন। উনি উনার অভিজ্ঞতাটা শেয়ার করেছেন শুধু আমাদের সঙ্গে। কোন অবস্থায় কীভাবে খেলতে হবে চারদিনের ম্যাচ বা টি-টোয়েন্টি সব পরিস্থিতিতে।

আপনাদের সেই (২০২০ বিশ্বকাপ) যুব চ্যাম্পিয়ন দল বর্তমানে জাতীয় দলে ডমিনেট করছে, আপনি এখনও সুযোগ পাননি। খারাপ লাগে কি না?

আকবর : আমি যদি ভালো পারফর্ম করি আমি অবশ্যই সুযোগ পাব। (খারাপ লাগা প্রসঙ্গে) সত্যি কথা বলতে আমি আসলে এভাবে চিন্তা করি না, পারফর্ম করলে আশা করি সামনে সুযোগ পাব। আর সেভাবে খারাপ লাগা কাজ করে না।

আপনি ব্যক্তিগতভাবে কি মনে করেন– এখন কি জাতীয় দলে খেলতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত?

আকবর : অবশ্যই নিজেকে রেডি রাখার চেষ্টা করি। আর নিজের উন্নতির জায়গা যেগুলো আছে সেগুলো নিয়ে কাজ করতেছি, সামনেও করব। আর সুযোগ আসলে অবশ্যই ভালোভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। সিলেক্টররা যখন আমাকে প্রস্তুত মনে করবেন, অবশ্যই আমাকে ডাকবেন।

বিপিএলে অধিনায়কত্ব পেলে কি করবেন, কাগজে-কলমে রাজশাহীকে ছোট বলা হচ্ছে!

আকবর : সত্যি কথা বলতে মাত্র টুর্নামেন্ট শেষ করলাম, এটা নিয়ে এখনও ভাবিনি, চিন্তাও করিনি। টুর্নামেন্ট শেষ হলো, এখন দুইটা দিন একটু বিশ্রাম নিতে চাই। বিশ্রাম শেষে বিপিএল নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করব। দল কি চায় আসলে সেটাই বিবেচনায় থাকবে।

অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপজয়ী অধিনায়ক আজিজুল হাকিম তামিমকে কেমন লাগল?

আকবর : খুবই ভালো। অসাধারণ লেগেছে আমার কাছে, যেহেতু সামনে থেকে খেলা দেখেছি। অনেক এক্সাইটিং এবং প্রমিজিং প্লেয়ার হবে আশা করি।

এসএইচ/এএইচএস