মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বাংলাদেশের বিপদে ঢাল হয়ে দাঁড়ানোর নজির রয়েছে অনেক। তবে তানজিম হাসান সাকিব আজ (মঙ্গলবার) সুযোগ পেয়ে স্বীকৃত ব্যাটারদের যেন ব্যাটিং শেখানোর দায়িত্ব পালন করলেন! ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের সামনে খেই হারিয়ে ১১৫ রানেই ৭ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে রিয়াদ-তানজিমের ৯২ রানের জুটি সফরকারীদের মান বাঁচানো ২২৭ রানের পুঁজি এনে দিয়েছে।

সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে প্রথম ওয়ানডে খেলেই বাংলাদেশ জেনে গিয়েছিল– ২৯৪ রানও এখানে নিরাপদ নয়। একই পিচে আজ দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তারা যাচ্ছেতাই ব্যাটিং করেছে। অভিজ্ঞ ব্যাটাররাও উইকেট উপহার দিয়ে এসেছেন অনায়াসে। রিয়াদের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৬২, তানজিদ হাসান তামিমের ৪৬ এবং তানজিম সাকিবের ৪৫ রানের ইনিংস ছাড়া বাকি ব্যাটাররা পুরোদমে ব্যর্থ। ফলে ৪৫.৫ ওভারেই ২২৭ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ।

এর আগে সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে বাংলাদেশ টস হেরে আজ আগে ব্যাটিংয়ে নামে। তানজিদ তামিম আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে উড়ন্ত সূচনা দিতে চাইলেও, অপরপ্রান্তে সৌম্য সরকার আউট হয়ে যান মাত্র ২ রান করে। আগের ম্যাচে ভালো শুরুর পরও আউট হন ১৯ রানে, আজ তার ধারেকাছেও যেতে পারেননি এই ওপেনার। চতুর্থ ওভারে জেইডেন সিলসের প্রথম বলে তিনি মিড অনে ক্যাচ দিয়েছেন। তিনে নেমে যথারীতি ব্যর্থ লিটন দাসও। অনেকটা টেস্ট মেজাজে খেলছিলেন, একপর্যায়ে ধৈর্য হারিয়ে জোরালো শট নেন তিনি। সেটি ঠিকঠাক লাগেনি, ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে তালুবন্দী হন ৪ রানে (১৮ বল)।

আগের ম্যাচে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত (৭৪) রান করা অধিনায়ক মেহেদি মিরাজের ওপর আজকেও বিপর্যয় সামলানোর দায়িত্ব এসে পড়ে। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হলেন আজ। সিলসের বল ছাড়তে গিয়েও তিনি ছাড়েননি। ফলে বল তার ব্যাট ছুঁয়ে স্টাম্পের বেল ভেঙে দেয়। মাত্র ১ রান করে বিপদ বাড়িয়ে বিদায় নেন টাইগারদের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক। একপ্রান্তে সতীর্থদের যাওয়া-আসার মিছিল দেখে হয়তো একপর্যায়ে মনোযোগ হারিয়েছেন তানজিদ। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টের ওপর দিয়ে মারতে গিয়ে সেখানে থাকা রোস্টন চেজের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে বসেন তানজিদ। বাংলাদেশের ইনিংসে বলার মতো কেবল পারফর্ম করছিলেন এই বাঁ-হাতি, ৩৩ বলে ৪৬ রান করে আউট হন তিনি। 

৬৪ রানে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশের বিপর্যয়ে কিছুটা হলেও আশা দেখাচ্ছিল আফিফ-রিয়াদের জুটি। কিন্তু দলীয় সেঞ্চুরি হতেই আফিফ কাণ্ডজ্ঞানহীন শট খেলে আউট হয়ে যান। উইন্ডিজ স্পিনার গুদাকেশ মোতির বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে লং অফ বরাবর ক্যাচ দিয়েছেন ২৪ রান করে।

প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বড় পুঁজিতে শেষদিকে মূল অবদান রেখেছিল মাহমুদউল্লাহ-জাকের আলির জুটি। কিন্তু তরুণ জাকের আজ ফিরলেন মোতির অফ-স্টাম্পে করা এক সাধারণ ডেলিভারিতে। যদিও বলটি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা ওপরে উঠে যায়। লেগ বিফোরের আবেদনে সাড়া দিয়ে আউট দিয়েছেন আম্পায়ার, যাতে রিভিউ নিয়েও রক্ষা হয়নি জাকেরের। ৯ বলে মাত্র ৩ রান করে তিনি দলের বিপর্যয়ের ষোলকলা পূর্ণ করে ফিরলেন।

এর মাত্র ৮ রানের ব্যবধানে ১১৫–তে সপ্তম উইকেট হিসেবে বিদায় নেন রিশাদ হোসেন। কি শট খেলেছেন সেই উত্তর হয়তো তার কাছেও নেই! অভিষিক্ত মারকিনো মাইন্ডলির বলে চেজের হাতে তিনি শূন্য রানেই ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন। অষ্টম উইকেটটি বাংলাদেশের সেই বিপদ থেকে টেনে তুলেছে। হয়তো ম্যাচ জয়ের জন্য যথেষ্ট পুঁজি আসেনি, তবে দেড়শতে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা উড়িয়েছেন রিয়াদ-তানজিম। প্রতিরোধ গড়ে দুজন মিলে ৯২ রানের জুটি বাধেন।

ওয়ানডেতে আগের ৪ ইনিংসে ব্যাট করা তানজিমের সর্বোচ্চ রান ছিল ১৬। তিনি আজ খেললেন ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস। ৬২ বলে ৪৫ রানের ইনিংসে তিনি ব্যাটারদের দেখালেন কীভাবে ব্যাটিং করা দরকার ছিল! পরে তার বিদায়ে রিয়াদের সঙ্গে অনবদ্য জুটি ভাঙে। তবে রিয়াদ ঠিকই টানা দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নিয়েছেন। ৯২ বলে ৪ ছক্কা ও ২ চারে ৬২ রান করেন রিয়াদ। শেষদিকে ১৫ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেছেন শরিফুল ইসলাম। 

উইন্ডিজদের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়েছেন সিলস। গুদাকেশ মোতি নেন ২ উইকেট।

এএইচএস