টানা দ্বিতীয়বার যুব এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। এবারের আসরে টাইগারদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন আজিজুল হাকিম তামিম। নেতৃত্ব, পরিকল্পনা কিংবা মাঠের পারফরম্যান্স সবজায়গায় লেটার মার্ক তুলেছেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক।

মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের এই লড়াইয়ে ব্যাট হাতেও আসরের অন্যতম সেরা পারফর্মার তামিম। যশোরের এই তরুণ ৫ ম্যাচে ২৪০ রান করেছেন। এক সেঞ্চুরির সঙ্গে তার নামের পাশে আছে দুই ফিফটি। পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছেন ৪ উইকেট।

শিরোপা জয়ের পর দুবাইয়ের টিম হোটেল থেকে ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদক সাকিব শাওনের সঙ্গে কথা বলেছেন তামিম।

প্রশ্ন: চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অনুভূতি কেমন?

তামিম: আলহামদুলিল্লাহ, খুবই ভালো লাগছে যে আমরা আবারো এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, গতবারও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। ধারাটা ধরে রাখতে পেরেছি, আলহামদুলিল্লাহ। আমরা অনেক কষ্ট করেছি সেটার ফল পেলাম। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আমরা একটা ম্যাচ হেরেছিলাম, তারপরে আমরা আবার পাকিস্তানের সঙ্গে ভালো একটা কামব্যাক করেছিলাম। সবাই অনেক চেষ্টা করেছে, সেটার ফল পেয়েছে। নিজেদের দেওয়া কথা রাখতে পেরেছি।

প্রশ্ন: ফাইনালে বড় স্কোর করতে পারেনি দল, বোলিংয়ে পরিকল্পনা কী ছিল?

তামিম: আমরা ১৯৯ রানের টার্গেট দিয়েছিলাম। আগের ম্যাচে সেমিফাইনালে আমাদের পেস বোলাররা ভালো বোলিং করেছে। আমরা সেই বিশ্বাসটা রেখেছিলাম তাদের ওপরে যে ফাইনালেও পেসাররা সেই ধারাটা ধরে রাখবে, ভালো বোলিং করবে। আলহামদুলিল্লাহ, সবাই সবার কাজটা ঠিকভাবে করেছে।

প্রশ্ন: ফাইনাল ম্যাচে টার্নিং পয়েন্ট কী ছিল?

তামিম: আমাদের রিজান আজকে খুবই ভালো ব্যাটিং করছে এবং বোলিং করছে, সে দুই জায়গাতেই সফল। এছাড়া ফয়সাল, জেমস ভাই তারা অনেক ভালো ব্যাটিং করেছে। বোলিংয়ে দেখেন, তিন উইকেটের পর ইমন দুইটা উইকেট পেয়েছে সেটাই টানিং পয়েন্ট ছিল। ম্যাচ সেখান থেকেই আমাদের কাছে আসতে শুরু করেছে।

প্রশ্ন: ফাহাদ-ইমনদের পারফরম্যান্স নিয়ে কী বলবেন?

তামিম: যাদের নাম বললেন সবাই টুর্নামেন্টে অনেক ভালো করেছে। সবাই সবার দায়িত্বটা পালন করেছে, যখন যেভাবে সুযোগ পেয়েছে সেটা কাজে লাগিয়েছে। তারা সবাই অনূর্ধ্ব-১৯ দলে এই মুহূর্তে সেরা খেলোয়াড়।

প্রশ্ন: বড় আসরে রান পেলেন, কী পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাটিং করেছেন? 

তামিম: আলহামদুলিল্লাহ, সবমিলিয়ে খুশি ছিলাম। তবে আজকে (ফাইনালে) যদি রান করতে পারতাম তাহলে খুবই ভালো লাগতো। আজকে রান করাটা জরুরি ছিল, গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ছিল যেহেতু। তবে আলহামদুলিল্লাহ, তিনটা উইকেট পেয়েছি। ভালো লাগছে ভারতের অধিনায়কের উইকেট নিতে পেরেছি।

প্রশ্ন: প্রথমবার বড় মঞ্চে অধিনায়কত্ব করলেন, এই অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন...

তামিম: ধোনি-পন্টিংদের অধিনায়কত্ব খুবই ফলো করি। তাদেরকে ফলো করার চেষ্টা করি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে। দেখেন মাঠে অবশ্যই ঠান্ডা থাকতে হয় অধিনায়ককে, তাহলে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হয়। আর কাম, কুলনেস বা আগ্রাসন অনেক সময় ভেতর থেকে চলে আসে। চেষ্টা করি অধিনায়কত্ব উপভোগ করতে সবসময়।

প্রশ্ন: ফাইনালে দুই দলই প্রচুর স্লেজিং করেছে, প্রতিপক্ষ ভারত বলেই কি এমনটা হয়েছে?

তামিম: না, তেমনটা আসলে না। দেখেন এটা একটা ক্রিকেট ম্যাচ, ওরাও স্লেজিং করছিল, আমরাও স্লেজিং করছিলাম। এটা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়, খেলার মধ্যে হবেই এটা। আর আম্পায়ারের সঙ্গে যেটা হয়েছে, আমার মনে হচ্ছিল আসলে সেগুলো ওয়াইড হচ্ছিল না। তাই তার সঙ্গে কথা বলছিলাম বারবার। কোনো সমস্যা ছিল না।

প্রশ্ন: ৫ উইকেট হারানোর পর দুই কোচ নাভিদ নেওয়াজ এবং তালহা জুবায়ের মাঠে এসে কী পরামর্শ দিয়েছিলেন?

তামিম: তারা শুধু বলছিল, যাতে আমি উত্তেজিত না হই। আমি যেন ঠাণ্ডা থাকি শেষ পর্যন্ত, তাহলে বাকি খেলোয়াড়রাও ঠান্ডা থাকবে। আমি কোচদের কথা অনুযায়ী মাঠে সেভাবে থাকার চেষ্টা করেছি। সেভাবে কাজ করার চেষ্টা করেছি, সেটাই আমার জন্য মনে হয় ভালো হয়েছে।

প্রশ্ন: মাঠের অধিকাংশ দর্শক বাংলাদেশের পক্ষে ছিল, তাদের অনুপ্রেরণা কতটা আত্মবিশ্বাস দিয়েছে?

তামিম: বাংলাদেশের যত মানুষ আছে সবাই অনেক ক্রিকেটপ্রেমী। সবাই ক্রিকেটকে ভালোবাসে, দুবাইয়ের প্রবাসী দর্শক যারা আছে তারা সকালে না খেয়ে মাঠে এসে আমাদের খেলা দেখেছে। অনেক কষ্ট করে আসছে অনেক দূর থেকে। এজন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আশা করি সামনেও তারা এভাবে আমাদের সাপোর্ট দিবে। আমার তরফ থেকে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং ভালোবাসা জ্ঞাপন করছি।

এসএইচ/এইচজেএস