ক্ষমতার পালাবদল ঘটছে বিশ্বক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির। নতুন করে সংস্থাটির সভাপতি পদে দায়িত্ব নিচ্ছেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআইয়ের সচিব জয় শাহ। শুরুতেই তিনি আইসিসির সভা ডেকেছেন। সেই সভায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে চলমান ধোঁয়াশা কাটবে কি না সেই আলোচনা চলছে। যদিও ক্রীড়াভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজের তথ্যমতে– এই সভায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা কম!

আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) জয় শাহ আইসিসির সভাপতি হওয়ার পর প্রথম সভা করতে যাচ্ছেন। তাই সভাটি মূলত তার পরিচিতি-মূলক হবে বলে ধারণা করছে ক্রিকবাজ। আনুষ্ঠানিকভাবে গত ১ ডিসেম্বর আইসিসির দায়িত্ব গ্রহণ করেন জয় শাহ। সেদিনই আইসিসি জানিয়েছিল, ‘বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে। আইসিসি নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি জয় শাহ’র যাত্রাকালে সঙ্গী হতে পেরে আনন্দিত।’

কয়েকদিনের মধ্যেই ভারতীয় বোর্ডের এই কর্মকর্তা আইসিসির দায়িত্ব পুরোপুরি গ্রহণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। যার শুরুটা হবে ৫ ডিসেম্বর আইসিসির ভার্চুয়াল সভা দিয়ে। বোর্ড সভাপতিদের সঙ্গে হতে যাওয়া এই সভায় নির্দিষ্ট কোনো ইস্যু নেই। ফলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ভেন্যু নির্ধারণ কিংবা এ বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে কি না সেটি এখনও স্পষ্ট নয়। এর আগে শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) আইসিসি সভায় বসলেও কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই ১৫ মিনিটেরও কম সময়ের মাঝে শেষ হয়ে যায়

পরবর্তী কয়েকদিনের মাঝেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ধোঁয়াশা কাটিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে সূত্রমতে জানিয়েছিল গণমাধ্যমগুলো। তবে এ নিয়ে আর কোনো ইঙ্গিত বা বার্তা দেয়নি আইসিসি। তবে জানা গেছে, পাকিস্তান ও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ভারত পাকিস্তানের মাটিতে গিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলবে না বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল আগেই। এমনকি পিসিবিও জানিয়ে দেয় তারা হাইব্রিড মডেলে টুর্নামেন্ট হলে অংশ নেবে না। যদিও পরবর্তীতে দুই দেশের গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তান হাইব্রিড মডেলে শর্তসাপেক্ষে অংশ নিতে রাজি।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হাইব্রিড মডেলে আয়োজন করতে হলে, ‘পার্টনারশিপ’, ‘ফিউশন’ বা সমতা ফর্মুলা চালুর দাবি জানান পিসিবি সভাপতি মহসিন নাকভি। তিনি জানান, ‘আমরা কোনো একপক্ষীয় সিদ্ধান্ত মানব না। সমতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত আসতে হবে। এই টুর্নামেন্ট আমাদের দেশের সম্মানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রতিটি দলকেই উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাব এবং তাদের বিশ্বমানের অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতেও আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সবসময় ভারত চায় পাকিস্তান তাদের দেশে খেলতে যাক, আমরা সেটি মেনে নিই। কিন্তু তারা পাকিস্তানে আসতে রাজি নয়। নিজেদের বেলায় অজুহাত দেখানো হয়। প্রতিটি দেশের জন্যই একই নিয়ম এবং তাদের একই আচরণ প্রাপ্য।’

পাকিস্তানের দেওয়া পার্টনারশিপ ফর্মুলা বিসিসিআই মানলে, ভারতের মাটিতে হতে যাওয়া আসন্ন বৈশ্বিক আসরগুলোও হাইব্রিড মডেলে আয়োজন করতে হবে। অর্থাৎ, পাকিস্তানও আর ভারতে খেলতে যাবে না, তাদের ম্যাচ হতে হবে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে। যা মানতে হবে পরবর্তী তিন বছর পর্যন্ত। আগামী বছর নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ রয়েছে ভারতে, এরপর ২০২৬ সালে পুরুষদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজক যৌথভাবে ভারত ও শ্রীলঙ্কা। ২০২৫ পুরুষ এশিয়া কাপের আয়োজকও ভারত।

তবে বিসিসিআই সে শর্ত মানার সম্ভাবনা কম বলে উল্লেখ করেছে ক্রিকবাজ। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে রোহিত-কোহলিদের ক্রিকেট বোর্ড ভারত সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করতে চায়। আর এটি স্পষ্ট যে, পাকিস্তানের ব্যাপারে ভারত সরকারের অবস্থান খুবই দৃঢ়। সরকার চায় না বলেই পাকিস্তানে দল পাঠাবে না বলে জানিয়েছেন বিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি রাজিব শুক্লা।

সবমিলিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানতে ক্রিকেটবিশ্বকে আরও কত সময় অপেক্ষায় থাকতে হবে তা সহজে বলা যাচ্ছে না। এর আগে পিসিবির প্রস্তাবিত সূচিতে বলা হয়েছিল- পাকিস্তানের মাটিতে আগামী বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ মার্চ তিনটি ভেন্যু লাহোর, করাচি এবং রাওয়ালপিন্ডিতে টুর্নামেন্টটি মাঠে গড়াবে!

এএইচএস