ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা নারী ক্রিকেটার মিতালি রাজ। ভারতকে দুটি বিশ্বকাপ ফাইনালে নেতৃত্ব দেওয়া কিংবদন্তী এই ক্রিকেটারও বিয়ে নিয়ে বাজে অভিজ্ঞতার মুখে পড়েছিলেন। সেই গল্পই শোনালেন সম্প্রতি এক পডকাস্ট শোতে। 

বিয়ে করতে গেলে কখনো কখনো কত অদ্ভূত পরিস্থিতিতে পড়তে হয়, সেটাই যেন মুখ ফুটে বলে দিলেন ভারত নারী ক্রিকেট দলের সাবেক এই অধিনায়ক। বরাবরই নিজের জীবনের আগে ক্রিকেটকেই বেছে নিয়েছিলেন মিতালি রাজ।

সব ফরম্যাটের ক্রিকেট থেকেই বিদায় নিয়েছেন। বয়স ৪১ পেরোলেও এখনও অবিবাহিতই থেকে গেছেন। যদিও বেশ কয়েকবার পরিবারের সদস্যদের ইচ্ছাতে একাধিক পাত্রের সঙ্গেই তাকে কথা বলতে হয়েছিল। আর তখনই তাকে কীসব অদ্ভূত সব প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে, সেটিই এবার প্রকাশ্যে আনলেন মিতালি।

বিশ্ব ক্রিকেটে অন্যতম সফল নারী ক্রিকেটার। অথচ খেলা চলাকালীনই তাকে বলা হয়েছিল, বিয়ের পর খেলাধূলার পাঠ চুকিয়ে সংসারে মন দিয়ে বাচ্চা মানুষ করতে হবে। মিতালি রাজ বলছেন, ‘আমি সত্যিই কিছু কথার কোনো মানে খুঁজে পাই না। আমার এক নিকটাত্মীয় কয়েকটা পাত্র খুঁজেছিল, আমায় তাদের সঙ্গে কথা বলতে হয়েছিল। আমি রাজি হয়েছিলাম। একটু কথা বলার পরই সবাই সোজা বিয়ে পরবর্তী চিন্তাভাবনায় চলে যেত। যে কতগুলো বাচ্ছা আমাদের দরকার আমি এসব কথা বলায় একটু পিছিয়েই পড়তাম। আমি তখনও দেশের ক্রিকেটের কথাই ভাবতাম, তখনও আমায় বলত যে ক্রিকেট ছেড়ে দিতে হবে।’

রণবীর আলাবাদিয়ার শোতে মিতালি আরও বলছেন, ‘আমি সেই সময় ভারতীয় দলের অধিনায়ক। একজন পাত্র আমায় বলল, বিয়ের পর তোমায় খেলা ছেড়ে দিতে হবে, বাচ্চাদের দেখাশোনা করতে হবে। আমি তখনও ওর কথাগুলো শুনে নিচ্ছিলাম। এরপর হঠাৎই জিজ্ঞাসা করল, যে তার মায়ের কিছু হলে আমি ক্রিকেট খেলব না তাকে দেখব? আমিও পাল্টা বললাম, এটা কি ধরণের প্রশ্ন? তখন সে বলছে, আমি দেখতে চাই তোমার কাছে কে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এরপর আমি বললাম, যে পরিস্থিতির ওপর সব নির্ভর করে। আমি ছেলেটার নাম জানি না, তবে বিষয়টা আমায় খুব বিরক্ত করেছে’।

মিতালি আরও বলেন, তার বন্ধুরাও নাকি তাকে বলত একটু পার্টনারের বিষয় মানিয়ে নিতে হবে। মিতালির কথায়,  ‘আমার মনে আছে, আমার একজন ক্রিকেটার বন্ধু আমায় বলেছিল কিছু বিষয় মানিয়ে নিতে হবে, কারণ কেউ আমায় আমার বর্তমান লাইফস্টাইল নিয়ে থাকতে দেবে না। আমি ওকে বলেছিলাম, যে ওসব প্রশ্নের কোনো মানেই নেই। কিন্তু ও বলেছিল, অনেক ছেলেরাই এরকম প্রশ্ন করে। তখনও আমি কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি, পরে আমি ভাবলাম। আমার মা-বাবা এত কষ্ট করে আমার কেরিয়ার বানিয়েছে, এত কিছু ত্যাগ করেছে। তাই কোনও অচেনা অজানা লোকের জন্য এভাবে আমি আমার ক্রিকেট বা ক্যারিয়ারকে ত্যাগ করতে পারব না।’

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে ৩৯ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নেন মেয়েদের ক্রিকেটের এই কিংবদন্তি। ক্যারিয়ারে ১২টি টেস্টের সঙ্গে ২৩২টি ওয়ানডে ও ৮৯টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন মিতালি। তিন সংস্করণ মিলিয়ে মিতালির রান ১০ হাজার ৮৬৮ রান, মেয়েদের ক্রিকেটে যা সর্বোচ্চ।

এফআই