ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলরাউন্ডার জাস্টিন গ্রিভস তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশকে ২৭৫ রানের মধ্যে আটকে রাখার লক্ষ্য জানিয়েছিলেন। সেই সীমা জাকের আলি অনিকের ৯১ রানের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে পেরিয়েছে বাংলাদেশ। কেবল তাই নয়, জ্যামাইকার কিংস্টন ওভালে যে রানের ধারেকাছে যাওয়ারও রেকর্ড নেই, সেটাই স্কোরবোর্ডে তুলেছে সফরকারীরা। ফলে ইতিহাস গড়েই জিততে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। তাদের সামনে লক্ষ্যটা ২৮৭ রানের।

সিরিজ বাঁচানোর লক্ষ্যে শেষ টেস্টে বোলারদের কল্যাণে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। এরপর তৃতীয় দিন শেষে টাইগাররা ব্যাটিংয়ে নিজেদের সামর্থ্য দেখিয়েছে। ৫ উইকেটে ১৯৩ রানে দিন শেষ করা সফরকারী দলটি আজ তুলেছে ৭৫ রান। ২৬৮ রানের এই পুঁজির সঙ্গে প্রথম ইনিংসের ১৮ রানের লিড মিলিয়ে লক্ষ্যটা নিয়ে চ্যালেঞ্জিং অবস্থানে।

আগেরদিন ২৯ রানে অপরাজিত থাকা জাকের ব্যক্তিগত ইনিংসকে টেনে নিয়ে গেছেন ৯১ পর্যন্ত। দলের প্রয়োজনে যেমন তিনি দেখেশুনে রক্ষণাত্মক মনোভাব দেখিয়েছেন, তেমনি প্রয়োজনে চার-ছক্কায় সীমানাছাড়া করেছেন অনেকবার। ১০৬ বলের ইনিংসে ৮টি চার ও ৫টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন ডানহাতি এই তরুণ ব্যাটার। শেষ উইকেটে তাকে শট খেলতেই হতো, আর সেই চেষ্টায় তিনি ক্যাচআউট হয়েছেন সীমানা দড়ির কাছে।

এই ভেন্যুতে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ২১২ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড রয়েছে উইন্ডিজদের। ব্রায়ান লারার নেতৃত্বাধীন দল ২০০৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি জিতেছিল। তারচেয়ে আরও ৭৫ রান বেশি লক্ষ্য পেয়েছে বাংলাদেশের বিপক্ষে। ফলে সেটি অনেকটা অসম্ভবই বটে! জাকের ছাড়া বাংলাদেশের পক্ষে তৃতীয় দিন ফিফটির পথে থেকেও আক্ষেপে পুড়েছেন সাদমান ইসলাম ও মেহেদি হাসান মিরাজ। সাদমান ৪৬ ও মিরাজ আউট হন ৪২ রানে। টাইগারদের তৃতীয় দিন শেষ হয় ২১১ রানের লিড নিয়ে।

জাকের চতুর্থ দিন ব্যাটিংয়ে নামেন তাইজুলকে সঙ্গে নিয়ে। আজ দিনের অষ্টম ওভারে প্রথম উইকেট হিসেবে তাইজুলকে হারায় বাংলাদেশ। এর আগপর্যন্ত দুই প্রান্তে থাকা জাকের-তাইজুল দুজনকেই শর্ট বাউন্সারে বেশ ভুগিয়েছেন উইন্ডিজ পেসাররা। এর মধ্যে জাকেরের হেলমেট এবং তাইজুলের হাতে ভিন্ন দুটি বল আঘাতও হানে। ধারাবাহিক বাউন্সারেই সাফল্য পেলেন আলজারি জোসেফ। ডানহাতি এই পেসারের শর্ট বল কিছুটা সরে ঠেকাতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন তাইজুল। তার গ্লাভস থেকে হেলমেটের গ্রিলে লেগে সেটি প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো কাভেম হজের হাতে ধরা পড়েছে। ৫০ বলে ১৪ রানের কার্যকরী এক ইনিংস খেলে ফিরলেন তাইজুল।

তখনও হয়তো টাইগারভক্তদের ভরসা ছিলেন জাকেরের অপরপ্রান্তে নামা স্বীকৃত ব্যাটার মুমিনুল। কিন্তু তিনি এবারও হতাশই করলেন। অফ-স্টাম্পের অনেক বাইরে দিয়ে বলটা করেছিলেন কেমার রোচ। যা নির্দ্বিধায় ছেড়ে দিতে পারতেন মুমিনুল। কিন্তু ড্রাইভ করতে গিয়েই ভুলটা করলেন। ব্যাটে কোনা ঘেঁষে সেটিও গেছে প্রথম স্লিপে থাকা কাভেম হজের হাতে। প্রথম ইনিংসের পর এবারও তিনি রানের খাতা খুলতে ব্যর্থ হয়েছেন। আগের ইনিংসে ডাক মেরে টেস্টে বাংলাদেশি ব্যাটারদের সর্বোচ্চ সংখ্যক (১৭) শূন্য রানে আউটের লজ্জার নজির গড়েন মুমিনুল। এর আগে ১৬টি ডাক নিয়ে রেকর্ডটি ছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের দখলে।

এরপর হাসান মাহমুদ ও তাসকিন আহমেদরা দ্রুত আউট হয়ে গেলে পুরো দায়িত্ব আসে জাকেরের কাঁধে। নাহিদ রানাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি শেষ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ২২ রান যোগ করেন থেমেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ক্যারিবীয়দের হয়ে সর্বোচ্চ ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন আলজারি জোসেফ ও কেমার রোচ।

এর আগে কিংস্টন টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ মাত্র ১৬৪ রানে গুটিয়ে যায়। দুর্দান্ত বোলিংয়ে আবার ম্যাচে ফেরে সফরকারীরা। নাহিদ রানার টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথম ফাইফারে (৫ উইকেট) ১৪৬ রানেই তারা উইন্ডিজদের প্রথম ইনিংসের ইতি টানে। ফলে মিরাজের দল ১৮ রানের লিড পায়। দ্বিতীয় ইনিংসে জাকের-মিরাজ-সাদমানদের ব্যাটিং এখন বাংলাদেশকে জয়ের আশা দেখাচ্ছে! 

এএইচএস