সদ্য সমাপ্ত জাতীয় ক্রিকেট লিগে (এনসিএলে) বল হাতে ভেলকি দেখিয়েছেন ঢাকা বিভাগের হয়ে খেলা পেসার এনামুল হক। আসরজুড়ে দারুণ বোলিংয়ে ৩৬ উইকেট নিজের ঝুলিতে পুড়েছেন। টুর্নামেন্টটির এবারের আসরের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকও হয়েছেন।

লিগজুড়ে ধারাবাহিক ভালো বোলিং, মরা পিচেও নিজের সক্ষমতার প্রমাণ এবং ভবিষ্যৎ স্বপ্নসহ আরও নানান বিষয় নিয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন পেসার এনামুল হক।  

ঢাকা পোস্ট: স্বপ্নের মতো এনসিএল কাটালেন...

এনামুল: আলহামদুলিল্লাহ। এনসিএলটা ভালো গেছে, সেরাদের কাতারে থাকার লক্ষ্য ছিল। সবার শীর্ষে থেকে শেষ করতে পেরেছি, এটা আমার জন্য বড় একটা পাওয়া। আমি বুঝলাম যে আমার সময়টা মন্দ কাটছে না। 

ঢাকা পোস্ট : আসরের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক হলেন...

এনামুল: যে কোনো টুর্নামেন্টে একজন বোলারের লক্ষ্য থাকে সেরা হওয়ার। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারলেতো সবারই ভালো লাগে। আশা রয়েছে ভবিষ্যতেও এটা ধরে রাখার।

ঢাকা পোস্ট : আসর শুরুর আগে কি ভেবেছিলেন সবাইকে টপকে সেরা বোলার হবেন...

এনামুল: আমি যখন অনুশীলন শুরু করেছিলাম তখন মনে হয়েছিল এনসিএল অনেক বড় একটা প্ল্যাটফর্ম। ভেবেছিলাম যে সেরা তিনে থাকার চেষ্টা করব, তো এক নাম্বারে থাকতে পেরেছি খুবই ভালো লাগছে। গেল বছরও একই প্রসেসে ছিলাম, এ বছরও একই প্রসেসে কাজ করেছি। এ বছরটা ভালো গিয়েছে, কিন্তু প্রসেস প্রতিবছরই একই থাকে।

ঢাকা পোস্ট : আসর শুরুর আগে এমন কি কাজ করেছেন যে এমন সাফল্য পেলেন....

এনামুল: প্রথম দিকে যখন বোলিং করেছিলাম তখন মনে হয়েছিল বোলিংয়ে অনেক উন্নতি দরকার। এটা নিয়ে শেষ দুই তিন সিজন অনেক কাজ করেছি। এ কাজ করার পরেই উন্নতির ছাপ দেখা গেল। প্রতিবারের মতো এবারো অনুশীলন আর আমার প্রসেস অনুযায়ী কাজ করেছি।

ঢাকা পোস্ট :মরা উইকেটেও আপনি ভালো বল করেছেন, অন্যরা যা পারেনি আপনি করে দেখালেন...

এনামুল: এটা সম্পূর্ণ একটা প্রসেসের ব্যাপার। যখন উইকেট ভালো থাকে না তখন যদি বোলার লাইন লেন্থ ঠিকভাবে মেইনটেইন করে তাহলে হয়ে যায়। আমি সেটাই চেষ্টা করেছি। আর একটু সুইং পেলে ব্যাটসম্যানদের জন্য রান করতে কষ্ট হয় তবে ওই জিনিসটাই চেষ্টা করেছি করার। পেস এবং সুইং এই দুইটাই ফলো করে করেছি।

ঢাকা পোস্ট :দুই পাশেই বল সুইং করাতে পারেন। এটা কার কাছ থেকে রপ্ত করেছেন...

এনামুল: এটা আমার ন্যাচারাল ছিল না। অনেক কাজ করেছি, তো কাজ করতে করতেই আসলে সম্ভব হয়েছে। যে কারণে এই বছর অনেক ভালো ফল পাচ্ছি। এটা প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে আমি এটা নিয়ে কাজ করেছি আলাদা করে। প্রথমে ইন সুইংটা ভালো হতো এরপর আস্তে আস্তে আউট সুইংটা শিখেছি। এখন উন্নতিটা ধীরে ধীরে হচ্ছে।

এখন লক্ষ্য গতি বাড়ানো। আমি সবসময় চাই আমার বল ১৪৫ প্লাস যেন হয়। এজন্য এটা নিয়ে এখন অনেক কাজ করছি। আলহামদুলিল্লাহ যতটুকু হয়েছে ভালোই বলবো। আমি চাচ্ছি বোলিংয়ে পেস বাড়াতে। এটা একটা স্বপ্নের মত আমার কাছে। ১৪৫ এ বল করা স্বপ্ন বলতে পারেন আমার কাছে।

ঢাকা পোস্ট : আপনার প্রিয় কোচ বা কার অধীনে কাজ করে ভালো লেগেছে....

এনামুল: আলাদা করে কারো নাম আমি বলতে চাই না। কয়েকজন কোচের অধীনে কাজ করেছি এটা আমার ভেতরে রাখতে চাই। মাসকোতে কোচিং করেছি, পিকেএসপিতে করেছি; বাংলা ট্র্যাকে করেছি। অনেক কিছুর সাথে কাজ করেছি তো স্পেশাল কয়েকজন কোচ আছে যারা আমার দেখভাল করেন। বোলিংয়ের ক্ষেত্রে ভালো করতে যখন আমার দরকার হয় আমি ওনাদেরকে ফোন দেই, ওনারা আমাকে সাহায্য করেন। এ ছাড়া আমার দলের প্রধান কোচ ডলার মাহমুদ উনিও অনেক হেল্প করেন। ছোট ছোট কিছু ভুল ছিল যেগুলো উনি শুরুতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন এবার। 

ঢাকা পোস্ট : পরবর্তী লক্ষ্য কি?

এনামুল: এখন লক্ষ্য এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে ভালো করা। কিভাবে আরও ভালো করা যায়, নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া যায়। আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা থাকবে। প্রত্যেকটা টুর্নামেন্ট আমার জন্য ভালো করার মঞ্চ থাকবে, নিজেকে চেনানোর মঞ্চ থাকবে।

ঢাকা পোস্ট : জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখেন নিশ্চয়...

এনামুল: চেষ্টা তো থাকবে বাংলাদেশের হয়ে খেলার, কার না থাকে। ঘরোয়া ক্রিকেটের খেলাগুলা নির্বাচকরা সবাই দেখেন ফলো করেন সবসময়। তো এখানে ভালো করলে জাতীয় দলে সুযোগ হয়। আমি এখানে আমার সেরাটা দিয়ে ভালো করতে চাই। যখন উনাদের মনে হবে আমি যোগ্য তখন উনারা ডাকবেন। প্রসেসে থাকলে ইনশাল্লাহ একসময় হবে।

এসএইচ/এফআই