সাহসী ক্রিকেট বলুন, বাজবল বলুন কিংবা প্রতি-আক্রমণ, কিংস্টন টেস্টের তৃতীয় দিনে বাংলাদেশ যা করে দেখিয়েছে– তাকে যে নামেই ডাকা হোক না কেন, সেটা টাইগার ক্রিকেটে বেশ একটা বিরল দৃশ্যই বলা চলে। অন্তত বিগত কয়েক মাসের বিচারে। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের পর ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এমন সাহসী ক্রিকেট দেখা যায়নি বাংলাদেশের কাছ থেকে। 

ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্লেজিংয়ের বিপরীতে বাংলাদেশের দ্রুতগতির ব্যাটিং। রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে সাবলীল খেলা, অহেতুক বল ছেড়ে দেয়ার বদলে প্রতি বল থেকেই রান তোলার প্রবণতা। জ্যামাইকায় বাংলাদেশের কোনো ব্যাটার ফিফটি বা সেঞ্চুরি করেননি সত্য, কিন্তু স্কোরবোর্ড করেছেন সমৃদ্ধ। দিনের খেলা শেষে তাই বাংলাদেশের লিড ২১১ রানের। 

দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ এখন পর্যন্ত ৫ উইকেট ১৯৩ রান। ক্রিজে আছেন দুই অপরাজিত ব্যাটার জাকের আলী অনিক এবং তাইজুল ইসলাম। ২৯ রানে ক্রিজে অপরাজিত জাকের আলী। ৯ রানে অন্য প্রান্ত আগলে রেখেছেন তাইজুল ইসলাম। ষষ্ঠ উইকেটে দুজনে ৪৭ বলে ২০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে মাঠ ছাড়েন।  

অবশ্য ব্যাটারদের গল্পটা বলার আগে বাংলাদেশের বোলিং লাইনআপের প্রশংসা করতেই হয়। যেখানে মূলত গল্পটা নাহিদ রানার। আলোচিত ছিলেন বেশ কিছুদিন ধরেই। গতির ঝড় তুলেছেন রাওয়ালপিন্ডি থেকে অ্যান্টিগা পর্যন্ত। জ্যামাইকায় এসে পেলেন ক্যারিয়ারের প্রথম ফাইফার। 

রানা ৫ উইকেট নিতে খরচা করেছেন ৬১ রান। তাকে সঙ্গ দিয়েছেন প্রত্যেকেই। বাংলাদেশের বোলারদের মাঝে উইকেটবিহীন ছিলেন না কেউই। ক্যারিবিয়ানরা গুটিয়ে যায় ১৪৬ রানে। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটা দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর। আর দেশের বাইরে এটিই বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বনিম্ন স্কোর। 

 

নাহিদ রানার বোলিং তোপে বাংলাদেশের লিড ছিল ১৮ রানের। স্বল্প এই লিডই যেন বাংলাদেশকে মানসিকভাবে এগিয়ে দেয় অনেকটা। মাহমুদুল হাসান জয় ৫ বলে ০ রানে ফিরেছেন বটে। তবে এরপর থেকে ইতিবাচক দিকই বেশি পাওয়া যাবে বাংলাদেশের ইনিংসে। 

ব্যাট করতে নেমেই দ্রুত রান তুলে লিডটাকে বেশ ভালো অবস্থানে নিয়ে গেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় সেশনেই ২ উইকেটে দলের স্কোরবোর্ডে ১১০ রান তুলে ফেলে টাইগারদের ব্যাটিং অর্ডার।  চা বিরতিতেই ১২৮ রানের লিড নিয়েছে বাংলাদেশ। 

উইন্ডিজ পেসারদের গতি আর স্লেজিংয়ের জবাব দিতে এদিন শাহাদাত দীপু খেলেছেন আরেকটি ভালো ইনিংস। সাধারণত ধীরগতির ব্যাটিং করা দীপু এদিন ২৮ বলে করেছেন ২৬ রান। আলজারি জোসেফের বলে লেংথ বুঝতে ভুল করে মিড অফে ক্যাচ দেন। তার আউটে ভেঙেছে দ্বিতীয় উইকেটে ৫৮ বলে ৪৭ রানের জুটি।

এতক্ষণ ধীরে খেলা সাদমান এরপর খেলেছেন ওয়ানডে মেজাজে। সঙ্গী ছিলেন মিরাজ। তাদের জুটিটা হলো আরও দারুণ। স্কোরবোর্ডে যুক্ত হলো ৭০ রান। এরপরেই জাকের আলী অনিকের মাধ্যমে বাংলাদেশ পায় আরও দুই জুটি। লিটনের সঙ্গে জাকেরের ৫২ বলে ৪১ রানের জুটি লিড নিয়ে যায় ২০০ এর ঘরে। 

আজ টেস্টের চতুর্থ দিন। গতকাল অসুস্থ থাকায় ক্রিজে নামেননি মুমিনুল হক। আজ তাকেও পাওয়া যেতে পারে মাঠে। কিংস্টনে আরও একটা ভালো দিনের প্রত্যাশা তাই বাংলাদেশ করতেই পারে। 

জেএ