৬১, ২৮, ৪৩, ২৭, ৩৭*, ২৭, ৫৭, ২১৩, ১০১, ৫৬, ৩৮*—চলমান জাতীয় ক্রিকেট লিগে (এনসিএলে) অমিত হাসানের স্কোর। এবারের আসরের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিতে বেশ সাড়া ফেলেছিলেন সিলেট বিভাগের এই অধিনায়ক। ব্যাট হাতে দ্যুতি ছড়ানো এই ব্যাটার এখনও পর্যন্ত চলমান আসরের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক।

তার নেতৃত্বে এরই মধ্যে প্রথমবারের মতো শিরোপা নিশ্চিত করে ফেলেছে সিলেট বিভাগ। ব্যাট হাতে ছন্দে থাকা অমিত ‘জাতীয় দলের খুব কাছাকাছি আছেন’ বলে গুঞ্জন রয়েছে। যদিও দলে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে চায় না বিসিবি। 

সিলেটকে প্রথম শিরোপার স্বাদ দেওয়া, নিজের ব্যাটিং ও জাতীয় দলসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে সম্প্রতি ঢাকা পোস্টের ক্রীড়া প্রতিবেদক সাকিব শাওনের মুখোমুখি হয়েছিলেন অমিত হাসান। 

ঢাকা পোস্ট: চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক। কেমন লাগছে...

অমিত: প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি এটা অন্যরকম একটা অনুভূতি বা ভালোলাগা বলতে পারেন। এনসিএলের ইতিহাসে প্রথমবার সিলেট জিতল, অধিনায়ক আমি, যে কারণে ভালো লাগাটা একটু বেশি। চেষ্টা থাকবে পরের বছরও যাতে এ ধারা অব্যাহত রাখতে পারি।

ঢাকা পোস্ট: দলে সিনিয়র ক্রিকেটাররা থাকলেও অধিনায়কের গুরুদায়িত্ব পেলেন, ভরসার প্রতিদানও দিলেন....

অমিত:  সত্যি কথা বলতে আমার কাছে এটা বিশেষ কিছু। যেটা আপনি বললেন যে আমি আসলে সিনিয়রও না আবার একদম জুনিয়রও না। মাঝামাঝি বয়সের বলা যায়। সতীর্থ ক্রিকেটারদের জন্য আমার জন্য কাজটা সহজ হয়েছে। আমাদের দলে যারা ছিলেন, অনেকেই জাতীয় দলে খেলেছে বা ভালো ভালো জায়গায় খেলেছে। আমি যেভাবে বলেছি তারা সেটা বুঝতে পেরেছে। সবাই সবার দায়িত্বটা ঠিকভাবে পালন করেছে। যে কারণেই চ্যাম্পিয়ন হতে পারলাম।

ঢাকা পোস্ট: আসরে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক।

অমিত: এখনো তো শেষ হয়নি খেলা, একটা বাকি। আসলে একটা ম্যাচ বাকি আছে চেষ্টা থাকবে এ ধারাটা ধরে রাখার। শেষ ম্যাচটা ভালো করার চেষ্টা থাকবে। দেখুন, একটা টুর্নামেন্ট বলেন বা একটা সিরিজ যদি সর্বোচ্চ রানের মালিক হওয়া যায়। তাহলে নিজের ভেতরে কিন্তু একটা আলাদা ভালো লাগা কাজ করে। তো আমারও সেই ভালো লাগাটা আছে, চেষ্টা থাকবে যেন সবসময় এটা ধরে রাখতে পারি।

ঢাকা পোস্ট: নারায়ণগঞ্জ থেকে সিলেটের ঘরের ছেলে হয়ে গেলেন...

অমিত: ভালো বলেছেন। ২০১৯ সালে যখন আমি এখানে (সিলেট) এসেছিলাম। তখনও যেমন ছিল এখনও তেমনটাই আছে কোনো পরিবর্তন হয়নি। যখন শুরু করেছিলাম তখন দলের সবাই আমাকে ভালোভাবেই গ্রহণ করেছিল। আমার মনেই হয়নি যে আমি আমার বিভাগের বাইরে গিয়ে খেলছি, বা অন্য দলে খেলছি। আমার ঘরের দলই মনে হয়েছে। 

ঢাকা পোস্ট : কোচ টিমমেটদের থেকে কেমন সাপোর্ট পান?

অমিত: অনেক সাপোর্ট পাই। যেটা আসলে বলে বোঝানো যাবে না। দেখেন পাঁচ বছর ধরে আমি এই টিমে খেলছি নিজের পরিবারের মতই হয়ে গেছে। আর সবাই খুব সাপোর্ট করে। রাজিন স্যারের সাথে ২০১৯ সাল থেকেই আছি, এইচপিতেও কাজ করেছি স্যারের সাথে। স্যারের সাথে অন্যরকম একটা সম্পর্ক আমার সবসময়। উনি খুব হেল্পফুল এটা আসলে বলে প্রকাশ করার মতো না। এ ছাড়া স্যারের অনেক বড় অবদান আছে আমার কাছে সবসময়।

ঢাকা পোস্ট : দেশের সিনিয়র জুনিয়র সব ক্রিকেটার আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ, কেমন লাগছে?

অমিত: সত্যি কথা বলতে যখন সিনিয়র বড় ভাইয়েরা প্রশংসা করে তখন আসলেই ভালো লাগে। নিজের ভেতরে একটা ইনস্পিরেশন কাজ করে। অনেকে বলেছে দেখেছি, আর বিশেষ করে যখন সিনিয়ররা এসে বলে তখন তো ভালো লাগাটা আরও বেশি কাজ করে ভেতরে।

ঢাকা পোস্ট : ব্যাটিং নিয়ে কী কাজ করে এমন সফলতা পেলেন?

অমিত: সফলতার কথা যেটা বললেন যে আমি আসলে অনেক ম্যাচ খেলতাম। প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলতাম যখনই সুযোগ পেতাম ম্যাচ খেলার চেষ্টা করতাম। আমার কাছে মনে হয় যে আমি বেশি বেশি ম্যাচ খেলার কারণে আমার টেস্ট ক্রিকেটের মত এই টেম্পারমেন্ট। এখন আমার কাছে আসলে ওই কাজটা সহজ হয়ে গিয়েছে, এখন দেখা যাক চেষ্টা থাকবে এটা ধরে রাখার।

ঢাকা পোস্ট : জাতীয় দলের খুব কাছে, তবুও কী মনে হচ্ছে অনেক দূরে?

অমিত: আমি এটা নিয়ে আসলে তেমন ভাবছি না। টিম ম্যানেজমেন্ট আছে নির্বাচকরা আছে, তারা যখন মনে করবে যে আমি ঠিক আছি। তখন নিতে পারে, এটা সম্পূর্ণ তাদের ব্যাপার। এটা নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।

ঢাকা পোস্ট : ঘরোয়াতে অনেকে সাফল্য পেলেও জাতীয় দলে এসে তেমন একটা সুবিধা করতে পারেন না। আপনি কিভাবে দেখেন বিষয়টা?

অমিত: ওরকম আসলে তো এখনো আমার সুযোগ আসেনি। সে জন্য এভাবে গভীরভাবে চিন্তাটাও আসেনি। তো ওরকম চিন্তা করছি না যে ওখানে গেলে আসলে কি হবে। এখানে যে এখন যেমন প্রসেসে খেলছি সেই একই প্রসেসে খেলতে চাই জাতীয় দলেও। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।

ঢাকা পোস্ট : ক্রিকেটারদের ব্যক্তি জীবনে খুব ডিসিপ্লিন হতে হয়, আপনি কেমন?

অমিত: একজন ক্রিকেটারকে অবশ্যই ডিসিপ্লিন মেইনটেইন করতে হবে। যদি ভালো করতে চান। ডিসিপ্লিন অনেক বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। দেখুন, সারাদিন মাঠে পরিশ্রম করার পরে যদি আপনি আবার রাত জাগেন তাহলে একটু কঠিন হয়ে যায় তখন। আবার একেজনের একেকরকম হতে পারে। আমি খুব সকালে ওঠার চেষ্টা করি সবসময়, আর রাতে নয়টার ভেতরে ঘুমিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। সবসময় ডিসিপ্লিন থাকলে অনেক সুবিধা হয় ক্রিকেটারের ক্ষেত্রে।

ঢাকা পোস্ট : আপনার ব্যাটিং আউডল কে, কার ব্যাটিং ভালো লাগে?

অমিত: আমি ছোটবেলা থেকেই তো টিভিতে মুশফিকুর রহিম ভাইকে দেখে বড় হয়েছি। দেশের বাইরে যদি বলতে বলেন তাহলে অনেকের খেলাই আমার ভালো লাগে। তবে দেশের ভেতরে বলতে গেলে মুশফিক ভাই।

ঢাকা পোস্ট : ব্যাটিং নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে সিনিয়র ক্রিকেটার বা ম্যানেজমেন্ট থেকে কেউ কিছু বলেছে কি না?

অমিত: আমার সবচেয়ে বেশি কথা হয় রাজিন স্যারের সাথে। পাশাপাশি হান্নান স্যারের সাথেও আমার অনেক কথা হয় ব্যাটিং নিয়ে। উনারা নানান পরামর্শ দেন। 

এসএইচ/এফআই