কী কারণে আইপিএলে দল পেলেন না মুস্তাফিজুর রহমান
আইপিএলের মেগা নিলামের দ্বিতীয় দিনের শেষ ধাপে ১৪৩ জনের নাম জমা দেওয়া হয়েছিল অ্যাক্সিলারেটেড অকশন বা দ্রুততর নিলামের জন্য। যেখানে বাংলাদেশের ১২ জনের মাঝে ছিল কেবল দুজনের নাম। একজন মুস্তাফিজুর রহমান। অন্যজন রিশাদ হোসেন। এদের মাঝে রিশাদের সাম্প্রতিক ভারত সফর ছিল রীতিমত ভুলে যাওয়ার মতোই। যে কারণে তার প্রতি অনাগ্রহ অনেকেরই বোধগম্য।
কিন্তু মুস্তাফিজের দল না পাওয়া যেন মেনে নিতে পারছেন না বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা। বিশেষ করে গেল বছর চেন্নাইয়ের হয়ে ৯ ম্যাচে ১৪ উইকেট পাওয়া এই বোলারের প্রতি আগ্রহ না থাকায় বিষ্মিত অনেকেই। অন্তত চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে মুস্তাফিজকে দ্বিতীয় মৌসুমে প্রত্যাশা করেছিলেন অনেকেই। যদিও আশাভঙ্গ হতে এক মিনিটও ব্যয় হয়নি। অবিক্রিতই থেকেছেন মুস্তাফিজুর রহমান।
বিজ্ঞাপন
মুস্তাফিজুর রহমানের আইপিএল যাত্রাটা যেন এক রোলারকোস্টার। সানরাইজার্স হায়দরাবাদ থেকে শুরু। এরপর মুম্বাই হয়ে গেছেন রাজস্থান। সেখান থেকে দিল্লির দরবার ঘুরে সর্বশেষ চেন্নাইয়ে ভিড়েছিলেন এই পেসার। তবে মেগা নিলামের আগে তাকে ছেড়ে দেয় চেন্নাই। মেগা নিলামে এই বাঁহাতি পেসারের প্রতি আগ্রহ দেখায়নি কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি।
কেন দল পেলেন না মুস্তাফিজ এমন প্রশ্নে অনেক উত্তরই দিতে হতে পারে। যার মাঝে সবার আগে আসবে মুস্তাফিজুর রহমানের পারফরম্যান্সের প্রশ্ন। আলাপের পুরোটা শুরু হতে পারে সেখান থেকেই।
মুস্তাফিজ শুধুই চিদাম্বারামের
৯ ম্যাচে ১৪ উইকেট। যখন আইপিএল ছেড়ে দেশের জন্য চলে এসেছেন তখন তিনি শীর্ষ উইকেটশিকারীদের একজন। এমন একজন হওয়ার পরেও দ্বিতীয়বারের মতো চেন্নাইয়ের পছন্দে ছিলেন না মুস্তাফিজ। কারণটা তার একপেশে পারফরম্যান্স।
আরও পড়ুন
গেল আসরে ১৪ আসরের মাঝে ১১ উইকেটই মুস্তাফিজ পেয়েছেন চেন্নাইয়ের ঘরের মাঠ চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামে। যেখানে তিনি খেলেছেন ৬ ম্যাচ। বাকি ৩ ম্যাচে ৩ উইকেট। সংখ্যার বিচারে সেই পারফরম্যান্সও নেহাত মন্দ না। কিন্তু ঘরের মাঠের বাইরে মুস্তাফিজ রান খরচে উদারহস্ত। চিপাকের বাইরে খেলা ৩ ম্যাচে গত আসরে মুস্তাফিজ রান দিয়েছেন ১৪৫। উইকেট ৩টি। যার অর্থ চিদাম্বারামের বাইরে, তুলনামূলক স্পোর্টিং উইকেটে ফিজ একেকটি উইকেটের জন্য খরচ করেছেন ৪৮ রানের বেশি।
অথচ, খানিক ধীরগতির হোমভেন্যুতে ১৭৩ রান খরচায় পেয়েছেন ১১ উইকেট। প্রতি ১৫ দশমিক ৭৩ রানে ১টি উইকেট। চিদাম্বারামে দুরন্ত মুস্তাফিজ ওয়াংখেড়ে, একানা কিংবা বিশাখাপত্তমে ছিলেন মলিন। মৌসুমের অর্ধেকটাজুড়ে যার পারফরম্যান্স থাকছে অনিশ্চিত, সেই তারকার দিকে হয়ত হাত বাড়াতে চায়নি চেন্নাই। আর তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে অন্যান্য দলগুলোর জন্যও স্পোর্টিং উইকেটে ফিজের দৈন্যদশার খবর অজানা থাকার কথা নয়।
দ্বিতীয় সিজনে মলিন ফিজ
এই প্রশ্নটা কেবলই চেন্নাইয়ের জন্য। দীর্ঘদিনের পথচলায় আইপিএলে এখন পর্যন্ত দুইবার একই দলে পরপর দুই মৌসুম পার করেছেন মুস্তাফিজ। আর সেই সময়ে তার পারফরম্যান্স ছিল ভুলে যাওয়ার মতোই। ২০১৬ সালে হায়দ্রাবাদের হয়ে শিরোপা জিতেছিলেন ফিজ। পরের আসরে একই দলের হয়ে মাত্র ১ ম্যাচেই সুযোগ পেয়েছিলেন।
২.৪ ওভার বল করে মুস্তাফিজ দিয়েছিলেন ৩৪ রান। ওভারপ্রতি ১২ রানের বেশি খরচের পর সেবার হায়দ্রাবাদ স্কোয়াডে আর সুযোগই পাননি ফিজ। এরপর তাকে ছেড়েই দেয় দলটি। পরের দুই দল রাজস্থান এবং মুম্বাই এক আসরের বেশি দলে রাখেনি বাংলাদেশের এই পেসারকে।
ভারতীয় বাংলা গণমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিন অবশ্য নিজেদের বিশ্লেষণে হাজির করেছে একেবারেই ভিন্ন এক ব্যাখ্যা। তাদের মতে, শুধু মুস্তাফিজ নয় বরং বাংলাদেশেরই কোনো খেলোয়াড় আইপিএলে ডাক না পাওয়ার মাঝে আছে অক্রিকেটীয় কারণ। আর সেটা রাজনৈতিক বৈরীতা।
২০২২ আইপিএলে ৮ ম্যাচে ৩০.৫০ গড়ে ৮ উইকেট পেয়েছিলেন দিল্লির হয়ে। স্বাভাবিকভাবেই ফ্র্যাঞ্চাইজটি পরের আসরের জন্য আবার দলে টানে মুস্তাফিজকে। কিন্তু এবারেও হায়দ্রাবাদ কাহিনীর পুনঃমঞ্চায়ন। ২ ম্যাচে ৭৯ রান দিয়েছেন ফিজ। এরপর দলেই আর জায়গা পাওয়া হয়নি। ওভারপ্রতি ১১ এর বেশি রান দেয়া পেসারকে আর বিবেচনায় রাখেনি দিল্লির কোচিং প্যানেল।
বিসিবির খামখেয়ালিপনা এবং আইপিএলের সঙ্গে দূরত্ব
সাম্প্রতিক সময় দেখা গেছে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড প্রতিবারই নিজেদের ক্রিকেটারদের আইপিএলের মাঝপথে ফিরিয়ে এনেছে দেশের হয়ে খেলার তাগিদে। আয়ারল্যান্ড, জিম্বাবুয়ের কিংবা আফগানিস্তানের মতো তুলনামূলক পিছিয়ে থাকা দলের বিপক্ষে খেলাতে খেলোয়াড়দের ফিরিয়ে এনেছে বিসিবি। বিগত সময়ে যে কারণে দূরত্ব বেড়েছে আইপিএল এবং বিসিবির। পুরো আসর খেলতে দেওয়ার মানসিকতা যে নেই ক্রিকেট বোর্ডের।
গেলবার মুস্তাফিজকে মাঝপথে ফিরিয়ে আনার পর বোলারদের নিয়ে বেশ একটা সঙ্কটেই পড়েছিল চেন্নাই। সিমারজিৎ সিং কিংবা মিচেল স্যান্টনারকে নিয়ে ফিজের অভাব পূরণের চেষ্টা করা হয়েছিল। বলাই বাহুল্য সেটা আর কাজে দেয়নি তাদের। অথচ দেশে ফেরানোর পর ফিজকে জিম্বাবুয়ে সিরিজে খেলানো হয়েছিল কেবল দুই ম্যাচে! আইপিএলের দলগুলোও হয়ত সেই কারণেই সরে গিয়েছে মুস্তাফিজ নামের এই পেসারের কাছ থেকে।
২ কোটির প্রাইজট্যাগ আর তালিকার পেছনে অবস্থান
মুস্তাফিজুর রহমান যখন নিলামের ডাকে এসেছেন ততক্ষণে প্রায় সব দলই নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছে। নির্ধারিত ১২০ কোটি প্রায় ফুরোনোর পথে। এমন অবস্থায় বাঁহাতি পেসার ফিজের জন্য ২ কোটি রুপি খরচ করতে রাজি ছিলেন না অনেকেই। যদিও পরবর্তীতে ঠিকই স্থানীয় পেসারদের নিলামে এরচেয়ে বেশি দামে কিনেছে দিল্লি কিংবা চেন্নাই।
কিন্তু নিজ দেশের প্রতিভাদের বাদ দিয়ে বিদেশি কোনো পেসারের জন্য ২ কোটি রুপি খরচ করতে আগ্রহী ছিল না দলগুলো। এবারের নিলামে অবশ্য শুরু থেকেই দেখা গিয়েছে এমন প্রবণতা। যে কারণে চড়া দাম পেয়েছেন ভারতেরই অনেকে। যেখানে বাইরের অনেকে ছিলেন অবিক্রিত
আছে রাজনীতির গুঞ্জন
ভারতীয় বাংলা গণমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিন অবশ্য নিজেদের বিশ্লেষণে হাজির করেছে একেবারেই ভিন্ন এক ব্যাখ্যা। তাদের মতে, শুধু মুস্তাফিজ নয় বরং বাংলাদেশেরই কোনো খেলোয়াড় আইপিএলে ডাক না পাওয়ার মাঝে আছে অক্রিকেটীয় কারণ। আর সেটা রাজনৈতিক বৈরীতা।
বাংলাদেশে গত ৫ই আগস্টের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে। এরপর থেকেই দেশে ভারতবিদ্বেষ অনেকটাই বাড়তি। ভারতেও বাংলাদেশের প্রতি বিরূপ মনোভাব তৈরি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশী ক্রিকেটার নিলে ফ্র্যাঞ্চাইজির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার ঝুঁকি থাকত। যে কারণেই অনেকে পিছিয়ে এসেছে বলে মন্তব্য কলকাতাভিত্তিক সেই গণমাধ্যমের।
জেএ