‘নিলামে মোহাম্মদ শামির দাম কমবে’ বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জরেকার। চোটপ্রবণতার কারণেই তার প্রতি ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর অনীহা থাকতে পারে বলে যুক্তি দেখিয়েছিলেন মাঞ্জরেকার। তবে স্বদেশীর এমন মন্তব্য ভালোভাবে নেননি শামি। পাল্টা খোঁচা দিয়েছিলেন। অবশ্য ভারতীয় পেসারকে নিয়ে মাঞ্জরেকারের ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হলো না।

ইনজুরির কারণে দীর্ঘদিন জাতীয় দলের বাইরে থাকা শামিকে ১০ কোটি রুপিতে দলে ভিড়িয়েছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। এর আগে গুজরাট টাইটান্সের হয়ে খেলেছেন ভারতের এই তারকা পেসার। 

শামির জন্য প্রথম বিড শুরু করেছিল কলকাতা। দ্রুতই যোগ দেয় চেন্নাই সুপার কিংসও। ৮ কোটিতে বিড করে লখনৌ সুপার জায়ান্টস। ভারতীয় তারকাকে দলে ভেড়াতে ত্রিমুখী লড়াই চলে। প্রথমে হাল ছেড়ে দেয় লখনৌ। কলকাতা তখনো টিকেছিল। তারা দর দেয় ৯.৭৫ কোটি। শামির জন্য আরটিএম ব্যবহার করতে চায়নি গুজরাট। তখন থেকেই সানরাইজার্স ঢোকে লড়াইয়ে। ১০ কোটিতে দান ছাড়ে কলকাতা। সানরাইজার্স ১০ কোটি দর তোলে শামিকে।

গতবার মোহাম্মদ শামির দাম ছিল ৬.২৫ কোটি রুপি। এবার প্রায় ৪ কোটির মতো দর বেড়েছে তার। চোট সারিয়ে শামির মাঠে ফেরা কিন্তু গল্পকেও হার মানাবে। ঘরের মাঠে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনাল হারের পর ভারতীয় এই তারকা পেসার বলতে গেলে ভেঙে পড়েছিলেন। সর্বস্ব দিয়েও ট্রফি জিততে না পারলে হৃদয় ভাঙারই কথা। তার মাঝে বিশ্বকাপের পর থেকেই চোটের কারণে বাইরে। একটা বছর হতাশায় কেটেছিল। এ মৌসুমে তাকে গুজরাট টাইটান্স রিটেইন করেনি।

গত বছর ঘরের মাঠে ওয়ানডে বিশ্বকাপের পরই চোটের কারণে ছিটকে গিয়েছিলেন। ফলে আইপিএলেও খেলতে পারেননি। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে তার প্রবেশ অনেক আগেই। ঘরোয়া ক্রিকেটে অনবদ্য পারফরম্যান্সের জেরে সেই ২০১১ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্স তাকে নিয়েছিল। যদিও ম্যাচ খেলার সুযোগ পান ২০১৩ সালের আইপিএলে। মাত্র তিন ম্যাচ খেলেন।

পরের বছরই নতুন দল। শামিকে নেয় দিল্লি ডেয়ারডেভিলস (বর্তমানে দিল্লি ক্যাপিটালস)। ২০১৪-২০১৮ দিল্লির টিমেই ছিলেন শামি। দিল্লির জার্সিতেও সেই অর্থে সুযোগ পাচ্ছিলেন না। ২০১৯ সালের আইপিএলে তাকে নেয় পাঞ্জাব কিংস। এখান থেকেই আইপিএলে যেন নতুন শামিকে পাওয়া যায়। ২০১৯ সালে ১৪ ম্যাচে ১৯টি, ২০২০ আইপিএলে ১৪ ম্যাচে ২০টি এবং ২০২১-এর আইপিএলে ১৪ ম্যাচে ১৯ উইকেট।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে ২০২২ সালে নতুন দুটি দল যোগ হয়। যার একটি গুজরাট টাইটান্স। শামিকে নিয়েছিল টাইটান্স। হার্দিক পান্ডিয়ার নেতৃত্বে অভিষেক মৌসুমেই চ্যাম্পিয়ন। ২০২৩ সালে রানার্সআপ। দু’বারই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল শামির। টাইটান্সের হয়ে পরপর দু-মৌসুম ১৬ ও ১৭ ম্যাচে নিয়েছেন যথাক্রমে ২০ ও ২৮ উইকেট। এর বেশির ভাগই পাওয়ার প্লে-তে। যে কারণে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে শামিকে পাওয়ার প্লে স্পেশালিস্টও বলা হয়ে থাকে। 

এদিকে, দিন কয়েক আগেই শামিকে নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন মাঞ্জরেকার। বলছিলেন,  ‘শামিকে নিতে অনেক দলই আগ্রহী হবে। কিন্তু শামি বারবার চোটের কবলে পড়েছে। তাই আইপিএল চলাকালীনও সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ফলে কোনো দল তাকে নিয়েও যদি মাঝপথে না পায়, তাহলে সমস্যা হবে। আর সেই কারণেই তার দর পড়তে পারে।’

সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটারের এমন ভবিষ্যদ্বাণীতে ক্ষেপে গিয়েছিলেন শামি। কোনো রাখঢাক না রেখে ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে কটাক্ষের সুরে লেখেন, ‘বাবার জয় হোক। নিজের ভবিষ্যতের জন্যও একটু জ্ঞান বাঁচিয়ে রাখুন। কাজে দেবে। কেউ নিজের ভবিষ্যৎ জানতে চাইলে স্যারের সঙ্গে দেখা করুন।’

এফআই