অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ড ষষ্ঠ শিরোপা জয়ের এক বছর
ভারতের কোটি মানুষের উৎসব বিষাদে রূপ নিয়েছিল এই দিনে
২০ নভেম্বর ২০২৩।
ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আশাভঙ্গের দিন বললেও হয়তো কম বলা হবে। এদিন স্বাগতিকদের উৎসব আয়োজন ভণ্ডুল করে ভারতীয় দর্শকদের সামনে শিরোপার বুনো উল্লাসে মেতে উঠেছিল অস্ট্রেলিয়া।
ঘরের মাঠের বিশ্বকাপের ফাইনালে লড়বে স্বাগতিক দল। আসরজুড়ে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা ভারতের সামনে এক যুগ পর আবারও শিরোপার হাতছানি। ক্রিকেট পাগল দেশটিতে ম্যাচটি নিয়ে তাই উন্মাদনার কোনো কমতি ছিল না। প্রতিটি বাড়ি-মন্দিরে চলছিল বিশেষ প্রার্থনা। ফাইনালের মহারণের ভেন্যু আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে রূপ নিয়েছিল নীল সমুদ্রে।
বিজ্ঞাপন
‘জিতেগা ভারত জিতেগা’ স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছিল দৈত্যাকার মাঠ। শুধু কি মাঠ? সারা ভারতেরই সেদিন যেন কাঁপছিল ক্রিকেট জ্বরে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এই স্টেডিয়ামে দর্শক ধারণক্ষমতা এক লাখ ত্রিশ হাজারের মতো। তবে আরও এমন দুচারটা স্টেডিয়ামের সমান আসন থাকলেও হয়তো কানায় কানায় পূর্ণ থাকতো গ্যালারি।
ফাইনালের দিন দুই তিনেক আগে থেকেই লোকাল মিডিয়ায় ছাপা হচ্ছিল, টিকিটের হাহাকারের খবর। দশ হাজার রুপির টিকিট বিকোচ্ছিল নাকি লাখ টাকায়। তবুও মিলছিল না যে কাঙ্ক্ষিত সোনার হরিণ নামক ওই টিকিট। আহমেদাবাদে ভারতের শিরোপা জয়ের সাক্ষী হতে দেশটির বিভিন্ন প্রদেশ থেকে অনেক ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে মাঠে এসেছিলেন সমর্থকরা। রোহিতদের জন্য প্রস্তুত ছিল মঞ্চ। মাঠে চলে এসেছিলেন খোদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। চ্যাম্পিয়ন দলকে বরণে রাখা হয় নানা আয়োজন। তবে সবকিছুতেই ভারত শেষ পর্যন্ত থেকেছে নীরব দর্শক হয়ে। তাদের সামনে বুনো উল্লাসে মেতেছে অস্ট্রেলিয়া।
ফাইনালে ভারতের দেওয়া ২৪১ রানের টার্গেট অস্ট্রেলিয়া ছুঁয়ে ফেলেছিল ৪২ বল আর ৬ উইকেট হাতে রেখেই। ভারতের শিরোপার পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ট্রাভিস হেড আর মার্নাস ল্যাবুশেন। শুরুতে ৩ উইকেট পড়ার পর এই দুজনই ধীরে ধীরে ভারতের কাছ থেকে ম্যাচটাকে নিয়ে যান অনেক দূরে। শেষ পর্যন্ত তারাই গড়ে দেন পার্থক্য।
ভারতের মাঠে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ছাড়াও বাকি দলগুলোর বড় প্রতিপক্ষ ভারতের সমর্থকরা। স্বাগতিকদের ম্যাচ মানেই কানায় কানায় পূর্ণ গ্যালারি।ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার সামনেও পথের কাটা হতে পারতো তারা। তবে গ্যালারির নীল সমুদ্রকে চুপ করানোর কথা আগেই বলেছিলেন অজি কাপ্তান প্যাট কামিন্স।
ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের এটিকে (বিশাল দর্শক) সাদরে গ্রহণ করতে হবে। এখানকার দর্শক অবশ্যই ভারতের পক্ষে থাকবে। তবে এমন বিশাল দর্শককে চুপ করিয়ে দিতে পারার চেয়ে স্বস্তির কিছু হতে পারে না। এটাই আমাদের লক্ষ্য থাকবে। আমাদের এটিকে মেনে নিতে হবে। ফাইনালের যে কোনো পরিস্থিতিই মেনে নিতে আমরা প্রস্তুত। রাতে অনেক চিৎকার-চেঁচামেচি হবে। এখানে উল্লাসে ভেসে যাওয়া যাবে না। আপনাকে এর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তাহলেই ভালো করতে পারবেন। চেষ্টা করতে হবে কোনো দুঃখ ছাড়াই যেন শেষ করতে পারেন।’
ভারতীয় দর্শকদের স্তব্ধ করে কথা রেখেছিলেন কামিন্স। দর্শকদের প্রসঙ্গে ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার নাসের হুসেন স্কাই স্পোর্টসকে বলছিলেন, মনে হচ্ছে বিশ্বকাপ ফাইনাল হচ্ছে ফাঁকা মাঠে। ভারতের দর্শকদের জন্য লজ্জা’।
এফআই