২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় যুব বিশ্বকাপ জিতেছিল বাংলাদেশ। ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে বল হাতে ৩ উইকেট নিলেও অলরাউন্ডার অভিষেক দাস অরণ্য পার্শ্বনায়ক–ই থেকে যান। এর পরের গল্পটা কেবলই হতাশা আর মন খারাপের। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে এখনও মাঠের বাইরে রয়েছেন নড়াইলের এই ক্রিকেটার। বিশ্বকাপ জিতে দেশে ফেরার পরপরই তিনি চোটের কবলে পড়েছিলেন, ইনজেকশন ও রিহ্যাভ নিলেও অভিষেকের আর বাইশ গজে ফেরা হয়নি। 

২০২১ সালে অভিষেককে উন্নত চিকিৎসার জন্য শুরুতে দুবাই নেওয়ার ভাবনা ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)। তবে শেষমুহূর্তে ভারতেই হয়েছিল অভিষেকের পিঠের চিকিৎসা। সেবার ইনজেকশন নিয়েই দেশে ফিরেছিলেন তিনি। ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ভারতের বিপক্ষে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালের পর দেশে ফিরে মার্চ মাসের ১৫ তারিখ একটি লিস্ট-এ ম্যাচ খেলেন অভিষেক। পরে ২০২২ সালে শুধু ব্যাটার হিসেবে খেলেছিলেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ (ডিপিএল)। 

এরপর চোটের কারণে আর কোন প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে খেলা হয়নি তার। এখনও মাঠের বাইরে রয়েছেন অভিষেক, একইসঙ্গে ফেরার লড়াইও চালিয়ে যাচ্ছেন। এক হারিয়ে যাওয়া তারার খোঁজ কেইবা রাখে, ইতিহাসই কি কেবল মনে রাখে জয়ীদের? ভক্ত-সমর্থকরাও যে ভুলতে বসেছেন তাকে দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে থাকায়। তবে বিসিবি এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অভিষেককে মাঠে ফেরাতে। যত্ন নিয়েই তাকে পুরো সারিয়ে তোলার চেষ্টা চলছে।

বড় মঞ্চে নামা না হলেও, বন্ধু শরিফুল ইসলাম-তানজিদ তামিম ও তাওহীদ হৃদয়দের দেখে ভালো লাগে অভিষেকের, ‘খারাপ তো লাগেই, এটা আসলে ভাগ্যের হাতে। ইনজুরি তো আমার হাতে নাই। আর ভালো লাগার একটা বিষয় আছে যে, আমার বন্ধুরা যারা আছে তারা অনেক ভালো ভালো জায়গায় আছে। দেশকে তারা প্রতিনিধিত্ব করছে। আমি চেষ্টা করতেছি আমারও সময় আসবে যখন, তখন ভালো করার চেষ্টা করব।’

বর্তমানে নড়াইলে অবস্থান করছেন এই অলরাউন্ডার। সেখান থেকেই ঢাকা পোস্টকে অভিষেক জানালেন নিজের সবশেষ অবস্থা, ‘ইনজুরি বলতে আমার তো রিকোভারি এখনও চলতেছে। মাঝে কিছুদিন বল শুরু করেছিলাম, তবে ব্যথাটা আবারও শুরু হয়। পরে রিহ্যাব করি, আবার শুরু করি, এভাবে আগাচ্ছি আরকি। পুরোপুরি ব্যথা যাচ্ছিল না, এখনও রিকভারি চলতেছে, আপাতত এটুকুই বলতে পারি।’

ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জয়ের ম্যাচে ৩ উইকেট নেন অভিষেক

এদিকে, নতুন বছর ২০২৫ আসন্ন। ওই সময়ে মাঠে ফেরার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে ফোনের অন্যপাশ থেকে অভিষেক কিছুটা সাহস করেই জানালেন– ‘অবশ্যই (ফিরব)’। পরক্ষণেই যখন জানতে চাওয়া হয় জানুয়ারি নাকি ফেব্রুয়ারিতে। কিছুটা মন খারাপের সুরই শোনাল তার কণ্ঠ, ‘হ্যাঁ, চেষ্টা তো করবোই নতুন বছরে ফেরার জন্য। যেটা বললেন জানুয়ারি না ফেব্রুয়ারি! আসলে এটা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। কারণ মেডিকেল থেকে এখনও ক্লিয়ারেন্স নেই, আমার ইনজুরিটা কমপ্লিকেটেড ও একটু অন্যরকম। পিঠের ইনজুরিটা এখনও ভোগাচ্ছে।’

দেশের হয়ে ভালো কিছু করার সুযোগ থাকলেও ইনজুরির কারণে সেটি আর হয়ে উঠছে না। যে কারণে খারাপ লাগে অভিষেকের, তবে বন্ধু শরিফুল ইসলাম, তানজিদ তামিম ও তাওহীদ হৃদয়দের জন্য ভালোও লাগে তার, ‘খারাপ তো লাগেই, এটা আসলে ভাগ্যের হাতে। আমার ইনজুরি তো আমার হাতে নাই। আর ভালো লাগার একটা বিষয় আছে যে, আমার বন্ধুরা যারা আছে তারা অনেক ভালো ভালো জায়গায় আছে। দেশকে তারা প্রতিনিধিত্ব করছে। আমি চেষ্টা করতেছি আমারও সময় আসবে যখন, তখন ভালো করার চেষ্টা করব।’

দীর্ঘ খারাপ সময়ে বছরের পর বছর ক্যারিয়ার থেকে হারিয়ে যেতে থাকলেও, পরিবারের সমর্থন হারাননি অভিষেক। যা তাকে মানসিকভাবেও শক্ত রাখে বলে জানান, ‘পরিবার থেকে যথেষ্ট সাপোর্ট দিচ্ছে মানসিকভাবে। সেটা আমার ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই, বাবা-মা বলেন কিংবা যারা আছে সবাই অনেক সাপোর্ট করে। বিশেষ করে এই ক্ষেত্রে মানসিক সাপোর্টটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’

২০২০ সালে পাওয়া অভিষেকের ইনজুরির চিকিৎসা শুরু হয়েছিল কিছুটা দেরিতে। যা নিয়ে তিনি আফসোসের সুরে বলেন, ‘একটু দেরিতে আমার চিকিৎসা দেওয়া শুরু হয়েছিল। সেটা যদি একটু দ্রুত হতো, তাহলে আমার মনে হয় আরও ভালো হতো। এখন বিসিবির ডাক্তাররা আমাকে নিয়ে আরেকটা প্ল্যানিং করতেছে, এখন দেখা যাক কি হয়।’

এদিকে অভিষেকের ইনজুরির অবস্থা জানতে যোগাযোগ করা হয় বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরির সঙ্গে। ঢাকা পোস্টকে তিনি জানালেন, ‘অভিষেক আগের মতোই আছে, ৪ বছর বোধহয় দলের বাইরে। ও তো অলরাউন্ডার, বোলিং করতে পারছে না, তবে ব্যাটিং করতে সমস্যা হয়না।’ ভারত, ইংল্যান্ড ও কাতারে পাঠিয়েছে চিকিৎসার জন্য। তবে কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। সে ফিরতেই পারছে না, তার ইনজুরিটা একটু ভিন্ন ক্যাটাগরির। তবে আমরা শেষ একটা চেষ্টা করতে পারি। দেখি কোথায় পাঠানো যায়।

অভিষেককে নিয়ে একটা শেষ টেষ্টা করে দেখতে চান বলেও জানিয়েছেন বিসিবির এই চিকিৎসক, ‘অভিষেককে বিসিবি যথেষ্ট টেক কেয়ার করেছে। ভারত, ইংল্যান্ড ও কাতারে পাঠিয়েছে চিকিৎসার জন্য। তবে কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। সে ফিরতেই পারছে না, তার ইনজুরিটা একটু ভিন্ন ক্যাটাগরির। তবে আমরা শেষ একটা চেষ্টা করতে পারি। দেখি কোথায় পাঠানো যায়। নতুন ম্যানেজমেন্ট এসেছে, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, আরও বিস্তারিত কথা হোক তারপর।’

বিশ্বকাপজয়ী দলের প্রায় সবাই জাতীয় দলে খেললেও, সৌভাগ্য হয়নি অভিষেকের

ঠিক কবে নাগাদ আবারও অভিষেক মাঠে ফিরবেন সেটি নিশ্চিত করে অবশ্য বলা যাচ্ছে না। কবে ২২ গজে ফিরবেন, আবারও–বা কবে প্রতিপক্ষের উইকেট নিয়ে ভোঁ দৌড় দেবেন এই ডানহাতি পেস অলরাউন্ডার। দেশের ক্রিকেটের এই তরুণ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবেন, নাকি আরও বড় মঞ্চে আলো ছড়াবেন সেই প্রশ্ন সময়ের হাতেই তোলা থাকুক! 

এসএইচ/এএইচএস