২০০৮ সালে চট্টগ্রামের মাটিতে নিল ম্যাকেঞ্জি এবং গ্রায়েম স্মিথের সেই ৪১৫ রানের জুটির কথা মনে আছে? বাংলাদেশের বোলারদের তুলোধুনো করে উদ্বোধনী জুটিতে দুজনে মিলে সর্বোচ্চ রানের বিশ্বরেকর্ডটাই গড়ে ফেলেছিলেন সেদিন। এর আগে যে কোনো উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ রানের জুটিটারও সাক্ষী হয়ে আছে এই চট্টগ্রাম। 

আবারও বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ সেই দক্ষিণ আফ্রিকা। ভেন্যুটাও সেই চট্টগ্রাম। অবশ্য এবার তেমন বিশ্বরেকর্ড না হলেও টাইগার বোলারদের হতাশাময় একটা দিনই উপহার দিয়েছে সফরকারী প্রোটিয়া বাহিনী।

আলোকস্বল্পতার কারণে দিনের খেলা সমাপ্তি টানার আগে ৮১ ওভার বল মাঠে গড়ানো দিনে উইকেটের পতন হয়েছে কেবল দুটি। বিপরীতে সেঞ্চুরি হয়েছে দুটি। তিনশোর কোটা পেরিয়ে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ। ২ উইকেট হারিয়ে ৩০৭ রান তুলেছে তারা। 

চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে প্রোটিয়া দুই ব্যাটারের জন্য। এদিনই নিজেদের ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন ট্রিস্টান স্টাবস ও টনি ডি জর্জি। স্টাবস শতরানের পর থামলেও ২১১ বলে ১৪১ রানে অপরাজিত আছেন জর্জি। 

মিরপুর টেস্টে ৭ উইকেটের বড় জয়ের পর চট্টগ্রামেও প্রথম দিন শেষে চালকের আসনে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা। ইনজুরির কারণে অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার ছিটকে যাওয়া, বলতে গেলে অপেক্ষাকৃত কম অভিজ্ঞ দল নিয়েই বাজিমাত করছে প্রোটিয়ারা। 

অন্যদিকে, ভারতের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর ঘরের মাটিতেও সিরিজে খাবি খাচ্ছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। মিরপুর টেস্টে এক পেসার নিয়ে খেলালেও চট্টলায় সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচে দুই পেসার নিয়ে একাদশ সাজায় টিম টাইগার্স। হাসান মাহমুদ কিংবা নাহিদ রানা—প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের তেমন পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি কেউই। সারা দিনে পতন হওয়া দুটি উইকেটই গেছে স্পিনার তাইজুলের দখলে।  

এর আগে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে শুরুতে ব্যাটিং বেছে নিয়েছিলেন প্রোটিয়া অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে ব্যাট হাতে সফরকারীদের শুরুটাও হয়েছিল দাপুটে। বাংলাদেশের বোলারদের তেমন পাত্তা না দিয়ে দিনের প্রথম সেশনেই দলীয় শতরান পার করেছিল সফরকারী ব্যাটাররা। 

দলীয় ৬৯ রানের মাথায় স্বাগতিকদের প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দিয়েছিলেন তাইজুল ইসলাম। অবশ্য এক্ষেত্রে ব্যাটার মার্করাম উইকেটটা উপহার দিয়ে এসেছেন বললেও বাড়াবাড়ি হবে না। তাইজুলের হাওয়ায় ভাসানো বল ডাউন দ্য উইকেটে এসে উড়িয়ে মারতে গিয়েছিলেন মার্করাম। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। মিড অনে দাঁড়ানো মুমিনুল হকের হাতে ধরে পড়েন। ৫৫ বলে ৩৩ রান করে সাজঘরে ফেরেন মার্করাম। এরপর নিখুঁত ব্যাটিংয়ে স্টাবস ও জর্জির ২০১ রানের জুটিটাই মূলত ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।

টি-টোয়েন্টির দুনিয়ায় এখন পরিচিত মুখ ট্রিস্টান স্টাবস। এখন থেকে হয়তো টেস্ট ক্রিকেটেও বিবেচনায় থাকবেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই ব্যাটার।  চট্টগ্রামে নামার আগে চার ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে তার ফিফটি ছিল একটি। দ্বিতীয়বার পঞ্চাশ ছুঁয়ে সেটিকে তিন অঙ্ক পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেলেন। ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ১৯৪ বলে সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন। অবশ্য শতক হাঁকানোর পরপরই সাজঘরে ফিরে গেছেন।

এবারও ব্রেকথ্রু এনে দিলেন তাইজুল। বাংলাদেশ পায় দিনের দ্বিতীয় সাফল্য। তাইজুলের মিডল স্টাম্প বরাবর করা বলটা একটু পেছনে গিয়ে কাট করতে চেয়েছিলেন স্টাবস, বল কিছুটা নিচু হওয়ায় ব্যাট ফাঁকি দিয়ে সরাসরি স্টাম্পে গিয়ে আঘাত হানে। তার বিদায়ে ভাঙে ৩৪২ বলে ২০১ রানের জুটি। ১০৬ রান করে বিদায় নেন স্টাবস।

এরপর আর কোনো বিপর্যয় হয়নি। ২ উইকেটে ৩০৭ রান করে দিন শেষ করেছে সফরকারীরা। দুই বার জীবন পাওয়া প্রোটিয়া ওপেনার ডি জর্জি ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে আরও বড় রানের দিকে ছুটছেন (২১১ বলে ১৪১ রান)। ডেডিড বেডিংহ্যাম অপরাজিত ১৮ রানে।

এফআই