সাম্প্রতিক সময়ে মাঠের পারফরম্যান্সে নাজুক অবস্থা পাকিস্তান ক্রিকেটের। বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট তো বটেই, ঘরের মাঠের সিরিজেও তারা খুব একটা স্বস্তিতে নেই। যদিও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চলমান সিরিজে ১-১ সমতা টেনেছে শান মাসুদের দল। অন্যদিকে, এই সময়ে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের নিয়ে চাঁচাছোলা ভাষায় সমালোচনা করতে দেখা যায় সাবেক তারকাদের। যা পাকিস্তান দলের পরিবেশ বিষিয়ে তুলছে বলে মনে করেন টেস্ট কোচ জেসন গিলেস্পি।

এ কারণে পাকিস্তানের তিনি সাবেক ক্রিকেটারদের প্রতি বার্তা দিয়েছেন। তার মতে– তীব্র সমালোচনা ক্রিকেটারদের মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়। এ ছাড়া পাকিস্তানের দায়িত্ব নেওয়ার সময় দল নির্বাচনের অধিকার ছিল গিলেস্পির। বর্তমানে নির্বাচক প্যানেলের সদস্য বাড়ানোয় তার সেই ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। যা নিয়েও সন্তুষ্ট নন গিলেস্পি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক এই অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার বলেন, ‘আমি খেলোয়াড় এবং কোচিং স্টাফদের ব্যাপারে বেশ রক্ষণশীল। তাদের সুষ্ঠুভাবে কাজ করার যেন পরিবেশটা নিরাপদ থাকে এবং তাদের যেন কোনো হতাশার চাপে আচ্ছন্ন হতে না হয় সেটি আমি নিশ্চিত করতে চাই।’ তবে সেই পরিবেশ সাবেক ক্রিকেটারদের আক্রমণাত্মক মন্তব্যের কারণে ঠিক থাকে না বলে মনে করছেন এই কোচ। কারণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা সেসব মন্তব্য ক্রিকেটাররাও দেখেন।

এ প্রসঙ্গে গিলেস্পি বলেন, ‘সাবেক ক্রিকেটারদের অনেকে এখন ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যমে নিজস্ব মতামতের প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছেন। সেসব মন্তব্যের জন্য তারা অর্থও পান। আমি লক্ষ্য করেছি যে, তাদের সেসব ইতিবাচক-নেতিবাচক সব মন্তব্যই ক্রিকেটাররা দেখছে। সেখানে যদি ইতিবাচক কিছু ফিডব্যাক পাওয়া যায় তারা শিশুদের মতো আনন্দিত হয়ে পড়ে, যা তাদেরকে সামনে আরও ভালো করার প্রেরণা জোগায়। তবে বিপরীতটাও দেখা যায়, যদি সাবেক ক্রিকেটাররা তাদের নিয়ে অনেক বেশি সমালোচনা করতে থাকেন।’

দুই বছরের চুক্তিতে গত এপ্রিলে পাকিস্তান টেস্ট দলের প্রধান কোচ পদে নিয়োগ পান গিলেস্পি। এরপর প্রায় তিনমাস তিনি নির্বাচক প্যানেলের দায়িত্বও পালন করেছেন। বাংলাদেশের কাছে সিরিজে ধবলধোলাই হওয়ায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের আগে আবারও নির্বাচক কমিটিতে পরিবর্তন আনে পিসিবি। মোহাম্মদ ইউসুফ সরে দাঁড়ালে নির্বাচক কমিটিতে সদস্যসংখ্যা বাড়ানো হয়। আসাদ শফিকের সঙ্গে দায়িত্ব পান হাসান চিমা, আকিব জাভেদ, আজহার আলী ও সাবেক আম্পায়ার আলিম দার। এভাবে দায়িত্ব কমে যাওয়ার বিষয়টি মোটেও স্বাভাবিকভাবে নেননি গিলেস্পি।

এসব ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করে পাকিস্তানের এই কোচ বলেন, ‘আমি সময়ে সময়ে হতাশ হয়ে পড়ছি। যদিও আমাকে এই কাজের (নির্বাচক) জন্য নিয়ে আসা হয়নি। কিন্তু এটা সেই পরিস্থিতিগুলোর একটি, যা আপনাকে মেনে নিয়েই চলতে হবে। যখন আমি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডে এলাম, আমাকে বলা হলো তাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আছে এবং আমাদের মধ্যকার যোগাযোগে যেন কোনো অস্পষ্টতা না থাকে। তাদের কথামতো আমি সেদিকেই মনোযোগী হয়েছি। কিন্তু আপনি যেভাবে চান, সেভাবে না করা হলে হতাশ হতে পারেন।’

নিজের অপছন্দের কাজ হতে দেখলেও পাকিস্তান ক্রিকেটকে সাহায্য করতে চান ৪৯ বছর বয়সী গিলেস্পি, ‘এর আগে আমি আলাদা পরিবেশে কাজ করেছি এবং সেখানকার কাজগুলোতে ভিন্নভাবে করা হতো। সেটা নিয়ে যে কেউ একমত হতে পারে অথবা দ্বিমত থাকতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি এখানে আছি পাকিস্তান দলকে সাহায্য করতে, খেলোয়াড়দের ভালো করায় সাহায্য করতে।’

এএইচএস