ভারতীয় স্কোয়াডে সুযোগ পাওয়াই যেন ক্রিকেটারদের জন্য বড় পাওয়া! বিশেষ করে সরফরাজ খান এক্ষেত্রে হয়তো নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন। ভারতের ঘরোয়া টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে টানা রানপ্রসবা ছুটালেও জাতীয় দলে সুযোগ পান কদাচিৎ। শুভমান গিলের ইনজুরি তার জন্য একাদশে ঢোকার রাস্তা খুলে দেয় সবশেষ টেস্টে। এরপর খেলেন ১৫০ রানের দারুণ এক ইনিংস। তবে এরই মাঝে ফিট হয়ে উঠেছেন গিল ও অস্বস্তিতে থাকা রিষাভ পান্ত।

ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হার দিয়ে টেস্ট সিরিজ শুরু করেছে ভারত। বেঙ্গালুরু টেস্টের প্রথম ইনিংসে (৪৬ রানে অলআউট) মহাবিপর্যয়ের পর দ্বিতীয় ইনিংসে রোহিত শর্মার দল ঘুরে দাঁড়ায়। তবে তার আগে প্রথম ইনিংসেই কিউইদের নেওয়া ৩৫৬ রানের বড় লিড ঘাড়ে চেপে বসেছিল। সরফরাজের ১৫০, পান্তের ৯৯ আর রোহিতের ফিফটির সুবাদে সেই রান পেরিয়ে তারা লক্ষ্য দেয় ১০৭ রানের। বিপরীতে নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেট হাতে রেখেই ভারতের মাটিতে ৩৬ বছর পর টেস্ট জয় পায়।

ম্যাচ হারের সময়ই চোটের অস্বস্তিতে ছিলেন পান্ত। তার সেই হাঁটুর চোট ইতোমধ্যে সরে উঠেছে বলে জানিয়েছেন ভারতীয় দলের সহকারী কোচ রায়ান টেন-ডেসকাট। একইসঙ্গে আগের ম্যাচ খেলতে না পারা গিলও টেস্ট খেলার মতো ফিট বলে নিশ্চিত করেছেন। অন্যদিকে, ব্যাট হাতে ফর্মহীন লোকেশ রাহুলের সমালোচনা চলছে সাম্প্রতিক সময়ে। বাংলাদেশ সিরিজের পর কিউইদের বিপক্ষে হারের ম্যাচেও তিনি ব্যর্থ ছিলেন। ফলে রাহুলের জায়গায় গিল দলে ফিরতে পারেন বলে গুঞ্জন ‍উঠেছিল। তবে এখনই রাহুলকে বাদ দেওয়ার অবস্থা তৈরি হয়নি বলে জানালেন সহকারী কোচ।

এমন অবস্থায় তাহলে সরফরাজকেই ফের একাদশের বাইরে পাঠানো হবে কি না এমন প্রশ্ন উঠেছে। রাহুলকে আরও সুযোগ দেওয়ার পক্ষে কোচ গৌতম গম্ভীর, একইসঙ্গে সরফরাজের পারফরম্যান্সও উপেক্ষা করতে পারছেন না। সবমিলিয়ে মধুর সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ভারতীয় কোচিং প্যানেলকে। তবে প্রথম ম্যাচ হারায় দ্বিতীয় টেস্টে বাড়তি মনোযোগ দেবে স্বাগতিকরা। পুনে টেস্টে ভারতের একাদশে কয়টি পরিবর্তন আসবে এবং কারও জায়গায় গিল ঢুকবেন নাকি তাকে বাইরে রেখেই দল সাজানো হবে সেটি জানতে অপেক্ষা করতে হবে ম্যাচের আগপর্যন্ত।

আগামী বৃহস্পতিবার সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট এসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে ভারত-নিউজিল্যান্ড। তার আগে দলে রাহুল ও সরফরাজের মধ্যে প্রতিযোগিতার কথা স্বীকার করে ভারতের সহকারী কোচ বলেন, ‘হ্যাঁ এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, দলে জায়গা পেতে প্রতিযোগিতা চলছে। সরফরাজ দুর্দান্ত খেলেছে শেষ টেস্টে। সেই ম্যাচের পর আমি রাহুলের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছি সে কত বল খেলেছে এবং মিস করেছে কয়টি। সে একটি বলই মিস করেছে, যা তাকে বড় ইনিংস খেলতে দেয়নি।’

ভারতের সহকারী কোচ রায়ান টেন-ডাসকাট

রায়ান টেন-ডেসকাট আরও বলেন, ‘রাহুলকে নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো দ্বিধা নেই, সে ভালো ব্যাট করে, মানসিক অবস্থাও ভালো। তবে আমাদের সাতজনের মধ্যে থেকে ছয়টি স্পটের ব্যক্তি বেছে নিতে হবে। তার আগে আমরা পিচ দেখব এবং দলের জন্য সবচেয়ে ভালো হবে, তেমন সিদ্ধান্তই নেওয়া হবে।’ বেঙ্গালুরু টেস্টে সরফরাজ দুই ইনিংসে যথাক্রমে ০ ও ১৫০ রান করেন। বিপরীতে রাহুল ০ রানের পর পরেরটিতে করেন ১২ রান। রাহুল-জাদেজাদের ব্যর্থতায় মূলত কিউইদের জন্য ভারতের দেওয়া লক্ষ্য বড় হতে পারেনি।

সরফরাজ-রাহুলের মধ্যে কে খেলবেন, বিষয়টি ঝুলন্ত রেখে সহকারী কোচ রায়ান বলেন, ‘বিষয়টি এমন নয় যে আমরা তার ফর্ম নিয়ে উদ্বিগ্ন। তিন মাস আগেও গৌতি যখন এখানে এসেছে, তখন তিনি রাহুলকে যতটা সম্ভব সুযোগ দিতে চান বলে জানান। তার ওপর আমাদের অনেক ভরসা আছে। তবে একই সময়ে এখানে দারুণ প্রতিযোগিতাও তৈরি হয়েছে, সরফরাজ ১৫০–এর বেশি (মূলত ২২২ রানে অপরাজিত) রান করেছে ইরানি ট্রফির ফাইনালেও। এখন সিদ্ধান্ত হবে দলের সবচেয়ে ভালোটা ভেবে, তবে সব ক্রিকেটারের প্রতিই আমাদের সমর্থন থাকবে।’

এএইচএস