ভারতের মাটিতে খেলতে গিয়ে ১০০ রানের বেশি টার্গেটে এর আগে সর্বশেষ টেস্ট জয়ের ইতিহাস আছে দক্ষিণ আফ্রিকার। ২০০০ সালের পর আর এমন কীর্তি দেখা যায়নি। আবার একই ভেন্যু মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে সর্বনিম্ন ১০৭ রান লক্ষ্য দিয়েও ভারতের জয়ের রেকর্ড ছিল। কাকতালীয়ভাবে বেঙ্গালুরু টেস্টেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সমান ১০৭ রানের লক্ষ্য দেয় রোহিত শর্মারা। তবে এবার আর কোনো রূপকথা নয়, নিউজিল্যান্ড ম্যাচ জিতল ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে।

বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে পঞ্চম দিন বৃষ্টির বাগড়ায় পড়ার শঙ্কা ছিল। কিন্তু প্রকৃতিও সহায় হয়নি ভারতের। যদিও দিনের শুরুতে জাসপ্রিত বুমরাহ ও মোহাম্মদ সিরাজরা সুইংয়ে কাবু করতে চেয়েছেন কিউই ব্যাটারদের। ২ উইকেটও তুলে নেন ৩৫ রানে। তবে বাকি পথ দেখেশুনে পার করেছেন উইল ইয়ং ও রাচিন রবীন্দ্ররা। শেষ পর্যন্ত ইয়ং ৪৫ আর রাচিন ৩৯ রানে অপরাজিত থেকে কিউইদের জয় নিশ্চিত করেছেন।

ভারতের মাটিতে এর আগে নিউজিল্যান্ডের সর্বশেষ টেস্ট ম্যাচ জয়ের নজির ছিল ১৯৮৮ সালে। সফরকারী হয়ে আরেকটি জয় পেতে তাদের ৩৬ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। যা ভারতে নিউজিল্যান্ডের তৃতীয় টেস্ট জয়। যদিও রোহিত-কোহলিদের বিপক্ষে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে জয়ের সুখস্মৃতি আছে কিউইদের। ভারতের স্বপ্নভঙ্গ করে ২০২১ সালে ফরম্যাটটির প্রথম বিশ্বআসরে কেইন উইলিয়ামসনের নিউজিল্যান্ড শিরোপা জিতেছিল।

ভারত প্রথম ইনিংসে ঘরের মাঠে সর্বনিম্ন ৪৬ রানে অলআউট হয়ে মহাবিপর্যয় দেখেছিল। তবে ঠিকই পরের ইনিংসে ঝড় তুলে সংগ্রহ করে ৪৬২ রান। তাতে কী হয়েছে, তারা যে প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে ছিল ৩৫৬ রানে। টেস্ট ইতিহাসে প্রথম ইনিংসে ২৯১ রানের চেয়ে বেশি পিছিয়ে থেকে কোনো দল এর আগে টেস্ট জিততে পারেনি। ফলে ভারতকে জিততে হতো বিশ্বরেকর্ড গড়ে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের লিড ৩৫৬ রান পেরিয়ে ভারতের পুঁজি দাঁড়ায় কেবল ১০৭ রানের। সেটি যে যথেষ্ট নয় এবং হাতে পুরো একদিন বাকি তা জানা ছিল খোদ রোহিতদেরও।

আগেরদিন নির্ধারিত সময়ের আগেই খেলা শেষ হয়ে যায় বৃষ্টির কবলে। ফলে আজ (রোববার) পঞ্চম দিনে কেমন রোমাঞ্চ অপেক্ষা করছে, তা দেখতে মুখিয়ে ছিলেন ক্রিকেটভক্তরা। তবে নিউজিল্যান্ড ঠান্ডা মাথায় ব্যাটিং করে ভারতের আশা গুঁড়েবালি করে দেয়। অথচ দিনের দ্বিতীয় বলেই সফরকারী কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথামকে দলীয় রানের খাতা খোলার আগেই লেগবিফোরের ফাঁদে ফেলেন বুমরাহ। ইনিংসের ১৩তম ওভারে তিনিই ফের দ্বিতীয় আঘাত হানেন ডেভন কনওয়েকে (১৭) ফিরিয়ে।

এরপর কোনো ঝুঁকি না নিয়েই ডানহাতি ব্যাটার ইয়‌ং ও আগের ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান রাচিন সাবলীলভাবে জয়ের পথে এগিয়ে যান। ক্রিজে থিতু হয়ে তারা তৃতীয় উইকেট জুটিতে দ্রুত রান তুলেছেন। সে সময় কুলদীপ যাদব, সিরাজ ও রবীন্দ্র জাদেজারা সেভাবে তাদের সমস্যায় ফেলতে পারেননি। কিউইরা যখন জয় থেকে আর মাত্র ১০ রান দূরে তখন রবীচন্দ্রন অশ্বিনকে আক্রমণে আনেন রোহিত। তবে জয় পেতে অসুবিধা হয়নি সফরকারীদের। তিন ম্যাচের প্রথম টেস্ট জিতে তারা ১-০ ব্যবধানে সিরিজে এগিয়ে গেল।

এর আগে দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের বড় পুঁজির (৪৬২ রান) পথে ১৭৭ রানের জুটি গড়েন সরফরাজ খান ও ঋষভ পান্ত। পান্ত ১০৫ বলে ৯৯ রানের ইনিংসে মেরেছেন ৯টি চার ও ৫টি ছয়। সরফরাজ আউট হওয়ার আগে ১৮টি চার ও ৩টি ছয়ে ১৯৫ বলে করেছেন ১৫০ রান। তাদের বিদায়ের পরই তাসের ঘরের ভেঙে পড়ে ভারতের ইনিংস। শেষ ৫৪ রানে পড়েছে ৭ উইকেট। কিউইদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩টি করে উইকেট নেন ম্যাট হেনরি ও উইলিয়াম ও’রুর্ক।

এএইচএস