আগামী বছরের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত চাকরির মেয়াদ ছিল চন্ডিকা হাথুরুসিংহের। তবে শৃঙ্খলাভঙ্গ ও অসদাচারণের অভিযোগে গেল মঙ্গলবার তাকে বরখাস্তের পথে হাঁটে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। লঙ্কান এই কোচের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে বাংলাদেশের কোচের পদ থেকে এবার চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করল বিসিবি। 

আজ (বৃহস্পতিবার) মিরপুরে বিসিবির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত পরিচালকদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দুবাই অবস্থানরত বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ জুম সংযোগে সভায় সভাপতিত্ব করেন। এ ছাড়া নতুন কোচ ফিল সিমন্সের সঙ্গে চুক্তির বিষয়টিও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মিটিংয়ে উপস্থিত থাকা এক পরিচালক ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করছেন। 

এর আগে গত মঙ্গলবার হাথুরুসিংহেকে বহিস্কার করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশও দিতে বলা হয় বিসিবি থেকে। বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদ হাথুরুসিংহের সঙ্গে চুক্তি বাতিল প্রসঙ্গে বলছিলেন,  আইনগত কিছু বিষয় থাকায় শুরুতে তাকে শোকজ ও সাসপেন্ডের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। এরপরই আনুষ্ঠানিক বরখাস্ত। অবশেষে সেই পথে গেল বিসিবি।

এদিকে, বিসিবির এমন সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় আইনি লড়াইয়ের কথা বলেছিলেন হাথুরুসিংহে। আজকের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, হাথুরু যদি আইনি পথে যান বিসিবি তা আইনিভাবেই মোকাবিলা করবে। 

এর আগে হাথুরুকে বরখাস্তের কারণ জানিয়ে ফারুক বলেছিলেন, দুই-তিনটা ঘটনা ঘটেছে যেগুলো মেনে নেওয়া একজন সাবেক খেলোয়াড় হিসেবে আমার কাছে খুব পীড়াদায়ক ছিল। এটা ভালো উদাহরণ ছিল না আরকি। 

হাথুরুর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল এক ক্রিকেটারকে শারীরিক হেনস্থার। বিসিবি সভাপতি সরাসরি নাম না বললেও ভুক্তভোগী ওই ক্রিকেটার ছিলেন নাসুম আহমেদ। হাথুরু-নাসুম ইস্যুতে ফারুক বলছিলেন, ‘আমরা মানুষ। হিট অব দ্য মোমেন্টে অনেক কিছু হতেই পারে। তবে একজন জাতীয় দলের ক্রিকেটারকে আপনি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতে পারেন না। সে কারণে যে শাস্তি পেতে হয়, সেটাই হচ্ছে (ছাঁটাই)। এটা আরও আগে হওয়া উচিত ছিল। এখন হয়েছে, আমি খুশি।’ 

হাথুরুর বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ ছিল ছুটি কাটানো নিয়ে। এ প্রসঙ্গে ফারুক বলেন, ‘একজনের অসদাচরণের বিরুদ্ধে নোটিশ দেওয়ার কিছু নেই। সে যে সময় ছুটি কাটিয়েছে, সেটা ৩ মাসের বেশি। ওটাও অসদাচরণের অংশ। বিচ্ছিন্নভাবে তিনি ই-মেইলে জানিয়েছেন, তবে সেটা তিন মাসের বেশি হওয়ার সুযোগ নেই। আপনার জবাবদিহি থাকতে হবে। এখানে নিয়ম ভেঙেছেন, আমরা জানিয়েছি যে খেলোয়াড়ের সঙ্গে তার অসদাচরণ এবং একজন কর্মী হিসেবে নিজের অসদাচরণ।’ 

২০১৪ সালের জুন থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে বাংলাদেশ জাতীয় দলের হেড কোচ ছিলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। কিন্তু সেবার তার চুক্তির মেয়াদ ছিল ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত। চুক্তি শেষের আগেই হাথুরুসিংহে অনেকটা আকস্মিকভাবে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান। সেই সময়ে আলোচনা ওঠে, কোনও ক্রিকেটার বা বোর্ড কর্তার সঙ্গে খারাপ সম্পর্কের কারণেই হয়ত দেশ ছাড়েন তিনি। যদিও অনেক পরে এসে জানান, শ্রীলঙ্কার কোচ হওয়ার কারণেই সেই সময়ে বাংলাদেশের দায়িত্ব ছাড়েন তিনি।

২০২৩ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের কোচ হয়ে আসেন শ্রীলঙ্কার কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। ৩৫ হাজার ডলারে তার সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে। যে চুক্তির মেয়াদ ছিল ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে চুক্তি শেষের আগেই বাংলাদেশ অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে এবারও। 

এসএইচ/এফআই