গত পরশু দিন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ড্রাফট নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করল বিসিবি। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই পরের দিন (মঙ্গলবার) সকালেই ক্রিকেটাঙ্গনের খবর হাথুরুসিংহের বিদায় ঘন্টা বাজছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেলে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে নতুন বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদ বর্তমান কোচ হাথুরুসিংহের বিদায় ও নতুন কোচ হিসেবে ফিল সিমন্সের নাম ঘোষণা করেন। 

জাতীয় দলের কোচকে বিদায় ও নতুন কোচের নাম দু’টো ঘটনাই ঘটেছে আনুষ্ঠানিক কোনো সভা ছাড়াই। বিসিবি’র জাতীয় দল ও এই সংক্রান্ত বিষয়াদি দেখভাল করে অপারেশন্স কমিটি। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বিসিবি’র অনেক স্ট্যান্ডিং কমিটি পুর্নগঠন হয়নি। ফলে অপারেশন্স কমিটি সেই অর্থে সক্রিয় নেই। 

বিসিবি’র গঠনতন্ত্রে পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব ও ক্ষমতা নিয়ে বিশদ বিবরণ রয়েছে। ১৪.১ ধারার (ব) অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে, ‘সকল জাতীয় দল অনুমোদন সহ অধিনায়ক, সহ-অধিনায়ক,কোচ এবং টিম ম্যানেজম্যান্টের সকল সদস্য মনোনয়ন বা নির্বাচনকরণ এবং চুড়ান্ত অনুমোদন।’ গঠনতন্ত্রের ধারা অনুযায়ী জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচ রদবদলের বিষয়টি বোর্ড সভা থেকেই আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত আসার কথা। এক সূত্রের খবর, গত বোর্ড সভায় ফিল সিমন্সকে নিয়ে শুধু প্রাথমিক আলোচনাই হয়েছিল।

গত এক যুগ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি ছিলেন নাজমুল হাসান পাপন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির ক্ষমতা মাত্র ছয়টি। এই ছয় ধারার মধ্যে দুই-তিনটি পরিচালনা বোর্ড সংক্রান্ত একটি বোর্ডে বেতনভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, আরেকটি উপদেষ্টা কমিটি সংক্রান্ত। বোর্ড সভাপতির একটি বিশেষ ক্ষমতার ধারা শুধু ১৫.২.১ ধারার (চ) অনুচ্ছেদ, ‘বোর্ডের কার্যক্রম সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করিবেন’। 

পাপন আমলে বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে এই ধারার চরম অপব্যবহার হয়েছে বলে ধারণা ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের। পাপন ও তার অনুগত ইসমাইল হায়দার মল্লিকের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় মূলত চলেছে ক্রিকেট বোর্ড। এ নিয়ে ক্রিকেট অঙ্গনে সমালোচনা ছিল অনেক। ফারুক আহমেদ কোচ রদবদলের ক্ষেত্রে বোর্ড সভা ছাড়া করে যেন তাদেরই অনুসরণ করলেন।

হাথুরুসিংহের সঙ্গে ফারুক আহমেদের দ্বৈরথ বেশ পুরনোই। বোর্ড প্রধান হওয়ার পরও তিনি হাথুরু সম্পর্কে আগের অবস্থানেই আছেন শুরুতেই জানিয়েছেন। হাথুরুকে আকস্মিক বিদায় এবং নতুন কোচ নিয়োগের সিদ্ধান্ত প্রাতিষ্ঠানিক এবং পেশাদারিত্বের চেয়ে ব্যক্তিগত ইচ্ছের প্রতিফলনই যেন বেশি ঘটেছে। বিসিবি বাংলাদেশের এখন শীর্ষ পেশাদার সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত। সেই বিসিবি কোচ রদবদলে এমন অপেশাদারিত্বের চর্চা হলে অন্য ফেডারেশনগুলোতে পেশাদারিত্ব প্রত্যাশা করা বাতুলতাই !

এজেড/জেএ