ভারতের মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রকে বলা হয় রাজাদের শহর। দুর্গ, রাজপ্রাসাদ, নানা রকম স্থাপত্যশৈলীতে ঘেরা এই শহর যেন আস্ত এক ইতিহাসের পাঠ। গোয়ালিয়রের নতুন স্টেডিয়ামের নামকরণও করা হয়েছে সিন্ধিয়া রাজা জিভাজিরাওর ছেলে শ্রীমন্ত মাধবরাওয়ের নামে। রাজাদের শহরে এবার ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের সামনে।

দুঃস্বপ্নের মতো টেস্ট সিরিজের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজে জয়ের আশার কথাই শুনিয়েছেন টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। সিরিজ শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন, ‘এই সিরিজে আমাদের খেলোয়াড়রা অন্য এক অ্যাপ্রোচে খেলার চেষ্টা করছে। সবাই জয়ের জন্য খেলবে।’

অন্যদিকে, রোহিত, কোহলিদের মতো তারকা ক্রিকেটারদের অবসরের পর ভারতের টি-টোয়েন্টি দল একটি বড় পরিবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে অপেক্ষাকৃত কম অভিজ্ঞ ও দ্বিতীয় সারির দল নিয়েই নামছে টি-টোয়েন্টির বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। তরুণদের নিয়ে ঘরের মাঠে পরীক্ষা নিরীক্ষার এই সিরিজে স্বাগতিকদের নেতৃত্বে আছেন সূর্যকুমার যাদব।

অভিজ্ঞতায় এগিয়ে বাংলাদেশ

বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে অভিজ্ঞতায় অনেক এগিয়ে বাংলাদেশ। এক পরিসংখ্যান বলছে, আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া এই সিরিজে বাংলাদেশের স্কোয়াডে থাকা ক্রিকেটারদের খেলা ম্যাচের সংখ্যার সমষ্টি যেখানে ৬৪৪, সেখানে ভারতের মাত্র ৩৮৯।

সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জেতার পরপরই সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে ফেলেছেন ভারতের তিন তারকা বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা এবং রবীন্দ্র জাদেজা। যে কারণে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে তারা নেই। এ ছাড়া দীর্ঘ বিরতি কাটিয়ে ক্রিকেটে ফেরা ঋষভ পান্ত, ওপেনার শুভমান গিল এবং তারকা পেসার জসপ্রীত বুমরাহকেও টি-টোয়েন্টি সিরিজে বিশ্রামে রেখেছে ভারতীয় বোর্ড।

অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের তালিকায় আছেন কেবল সূর্যকুমার যাদব, হার্দিক পাণ্ডিয়া এবং আর্শদীপ সিং। একশ’র বেশি টি-টোয়েন্টি খেলেছে দলটিতে এমন অভিজ্ঞতা আছে কেবল হার্দিকের। এ ছাড়া বেশিরভাগ ক্রিকেটারই সবে দলে ঢুকেছেন, কেউ আবার অভিষেকের অপেক্ষায়। 

অন্যদিকে, টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান এরই মধ্যে টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলে দিলেও ভারতের বিপক্ষে অভিজ্ঞ দলই পাচ্ছে বাংলাদেশ। টাইগার ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়সী ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এখন পর্যন্ত খেলেছেন ১৩৮টি টি-টোয়েন্টি। এ ছাড়া শান্ত, তাসকিন, মুস্তাফিজ ও লিটনদের ম্যাচ সংখ্যাও পঞ্চাশের বেশি। 

টেস্ট সিরিজ খেলা বাংলাদেশের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই টি-টোয়েন্টি দলে থাকলেও ভারতের টেস্ট দলের কোনো খেলোয়াড়েরই সংক্ষিপ্ত সংস্করণের সিরিজের স্কোয়াডে রাখা হয়নি। অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও দক্ষতা এবং পারফরম্যান্স বিবেচনায় নিলে ভারতের পাল্লাই ভারি থাকবে। আইপিএলের কারণে দেশটির বেশিরভাগ ক্রিকেটারই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অভ্যস্ত। রোহিত-কোহলিদের উত্তরসূরীরা যে কোনো দলের জন্যই হতে পারে বড় হুমকি। এখন দেখার বিষয় তারুণ্যনির্ভর ভারত নাকি অভিজ্ঞ বাংলাদেশ কার জয় হয়! 

দুই দলের কাছেই অচেনা মাঠ

বাংলাদেশ-ভারত সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি দিয়েই গোয়ালিওরের নতুন মাঠ শ্রীমান্ত মাধবরাও সিন্ধিয়া স্টেডিয়ামের আন্তর্জাতিক অভিষেক হতে যাচ্ছে। সবশেষ ১৪ বছর আগে এই শহরে আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই ম্যাচে একদিনের ক্রিকেটে সর্বপ্রথম ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। এক যুগের বেশি সময় গোয়ালিওরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরলেও শচীনের রেকর্ডকরা সেই স্টেডিয়ামে হচ্ছে না খেলা। 

ভারতের ঘরের মাঠে খেলা হলেও বাংলাদেশের মতো স্বাগতিক দলের জন্যও অচেনাই থাকছে নতুন এই স্টেডিয়াম। এখানেও বাংলাদেশের ভালো করার সুযোগ দেখা হচ্ছে। অবশ্য নতুন মাঠে বাংলাদেশের বাড়তি চ্যালেঞ্জ হতে পারে স্বাগতিক দর্শকরা। কানপুরে সিরিজের শেষ টেস্টেও প্রচুর দর্শক ছিল। আজকের খেলার ফরম্যাটটা টি-টোয়েন্টির, কানায় কানায় পূর্ণ গ্যালারিই আশা করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের রাজনীতি অস্থির সময় পার করছে। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে এমন দাবি করে গোয়ালিওরের আজকের ম্যাচ বয়কটের ডাক দিয়েছিল উগ্রপন্থী এক সংগঠন। যদিও প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে ম্যাচ ঠিকই মাঠে গড়াতে যাচ্ছে। তবে গ্যালারিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে স্লোগানে একটু বেশি ‘তেজ’ই থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নতুন শুরুর আশায় থাকা বাংলাদেশকে জিততে হলে প্রতিপক্ষের ক্রিকেটারদের পাশাপাশি গ্যালারির চাপও সামলাতে হবে। 

এফআই