একদিনে ১৭ উইকেট। চেন্নাইয়ের এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামের ইতিহাসে টেস্টের একদিনে সর্বোচ্চ উইকেট পতনের রেকর্ডটা নতুন করে লেখা হলো আজ। উইকেটের মিছিলে ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিলেন দুই দলের ব্যাটাররা। বাংলাদেশের পেসার হাসান মাহমুদ-তাসকিন আহমেদদের ইটের বদলায় পাটকেল ছুড়লেন বুমরাহ-আকাশ দীপরা। আর তাতে আত্মহুতি দিলেন সাকিব-লিটনরা।

প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকদের ৩৭৬ রানের জবাবে খেলতে নেমে মাত্র ১৪৯ রানেই থেমে গেছে টিম টাইগার্সের ইনিংস। প্রতিপক্ষকে ফলো অন না করিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে ভারত দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে ৩ উইকেটে ৮৩ রান করে।

দিন শেষে ভারত এগিয়ে আছে ৩০৮ রানে। হাতে উইকেট আছে এখনো সাতটি। খেলা বাকি আরও তিন দিনের। দেখার বিষয় কত রানে গিয়ে থামে রোহিত শর্মার দল। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের সামনে টার্গেটটাই বা কততে গিয়ে ঠেকে। 

২২৭ রানের লিড নিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দ্রুত ফিরে গেছেন স্বাগতিক দুই ওপেনার। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই সাফল্য পেলেন তাসকিন আহমেদ। স্লিপে জাকিরের ক্যাচে পরিণত হয়ে ৭ বলে ৫ রান করে আউট হন রোহিত। ভারতীয় অধিনায়কের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না আরেক ওপেনার জয়সাওয়ালও। তাকে সাজঘরে পাঠিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেটের খাতা খোলেন নাহিদ রানা। 

ভারতীয় তৃতীয় উইকেটের পতন হয় কোহলির বিদায়ে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে ‘আনলাকি’ বলতে হবে ভারতীয় ব্যাটারকে। প্রথম ইনিংসে মাত্র ৬ রান করা কোহলি দ্বিতীয় ইনিংসে দেখেশুনেই খেলছিলেন। ইনিংসের ২০ তম ওভারে মিরাজের বলে এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়েন ব্যক্তিগত ১৭ রানের মাথায়। টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে, বল প্যাডে লাগার আগে কোহলির ব্যাট ছুঁয়েছিল। অর্থাৎ, রিভিউ নিলে বেঁচে যেতে পারতেন কোহলি।

কোহলির দুর্ভাগ্যজনক আউটের পর আর কোনো উইকেট হারায়নি ভারত। ৩৩ রান নিয়ে উইকেটে আছেন শুভমান গিল। তার সঙ্গী ঋষভ পান্তের রান ১২। বাংলাদেশের হয়ে উইকেট তিনটি নিয়েছেন তাসকিন , নাহিদ ও মিরাজ।

চেন্নাই টেস্টে টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৯১ ওভার ২ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে ৩৭৬ রান সংগ্রহ করেছিল ভারত। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১১৩ রান করেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। এ ছাড়া ৮৬ রান এসেছে রবীন্দ্র জাদেজার ব্যাট থেকে। জবাবে খেলতে নেমে ভারতীয় বোলারদের তোপের মুখে পড়েন সফরকারী ব্যাটাররা। 

নতুন বলে রীতিমতো আগুন ঝরিয়েছেন জাসপ্রিত বুমরাহ। ইনিংসের প্রথম ওভারেই সাফল্যের দেখা পেয়েছেন এই ডানহাতি পেসার। ওভারের শেষ বলটি গুড লেংথে অফ স্টাম্পের ওপর করেছিলেন বুমরাহ। আউট সুইংয়ের আশায় ব্যাট উঁচিয়ে বল ছেড়ে দিয়েছিলেন সাদমান ইসলাম, তবে তার ধারণা ভুল প্রমাণিত হল। ইনসুইং করে অফ স্টাম্পে আঘাত হানে বল। ২ রান করে বিদায় নেন সাদমান।

এরপর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে বেশ সতর্ক ছিলেন জাকির হাসান-শান। তবে লাঞ্চ ব্রেকের ঠিক আগের ওভারেই জাকিরকে বোল্ড করেন আকাশ দীপ। ইনিংসের ৯ম ওভারের প্রথম বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে ইনসুইং করে জাকিরের মিডল স্টাম্প উপড়ে দেয়। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২২ বলে ৩ রান।

পরের বলটিও একই জায়গায় করেন আকাশ, ফলাফলই এসেছে একই। ঠিক যেন আগের বলে কার্বন কপি। এবার শুধু ব্যাটার বদল, জাকিরের জায়গায় মুমিনুল হক। দুই ওপেনারের ব্যর্থতার দিনে গুরু দায়িত্ব ছিল মুমিনুলের কাঁধে। তবে ব্যর্থ হয়েছেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটারও। গোল্ডেন ডাক খেয়ে দলের বিপদ আরও বাড়িয়েছেন তিনি।

লাঞ্চ বিরতি থেকে ফিরে আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি শান্ত। দ্বিতীয় সেশনের তৃতীয় ওভারেই সাজঘরে ফিরেছেন তিনি। মোহাম্মদ সিরাজের আউট সুইং বলে খোঁচা মেরে দ্বিতীয় স্লিপে কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৩০ বলে ২০ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে।

দলের বিপর্যয়ে হাল ধরতে পারেননি মুশফিকুর রহিমও। শান্ত ফেরার পরের ওভারেই অভিজ্ঞ এই ব্যাটার আউট হয়েছেন ১৪ বলে ৮ রান করে। বুমরার সুইং ও বাউন্স হওয়া বল মুশফিকের ব্যাটে লেগে যায় দ্বিতীয় স্লিপে। সেখানে দুই হাতে দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন লোকেশ রাহুল।

স্কোরবোর্ডে ৪০ রান তুলতেই প্রথম সারির পাঁচ ব্যাটারকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। দলের এমন বিপর্যয়ে হাল ধরেছিলেন সাকিব আল হাসান-লিটন দাস। এই দুজনে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তবে ২২ রান করে লিটন ফেরায় ভাঙে ৫১ রানের জুটি। এরপর সাকিবও আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৩১তম ওভারে জাদেজার বলে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৩২ রান করেছেন তিনি।

এরপর এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং করেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তবে তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি কেউই। হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানারা দ্রুত ফিরলে দেড়শর আগেই অলআউট হয় বাংলাদেশ। মিরাজ অপরাজিত ছিলেন ২৭ রান করে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত ১ম ইনিংস: ৯১.২ ওভারে ৩৭৬ 

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪৭.১ ওভারে ১৪৯ 

ভারত ২য় ইনিংস: ২৩ ওভারে ৮১/৩ (জয়সওয়াল ১০, রোহিত ৫, গিল ৩৩*, কোহলি ১৭, পান্ত ১২*; তাসকিন ৩-০-১৭-১, হাসান ৫-১-১২-০, নাহিদ ৩-০-১২-১, সাকিব ৬-০-২০-০, মিরাজ ৬-০-১৬-১)

এফআই