চেন্নাই টেস্টের প্রথম দিন
অশ্বিনের সেঞ্চুরিতে ম্লান হাসান মাহমুদের বীরত্ব
চেন্নাই যেন কাউকেই হতাশ করতে চাইলো না। একই দিনে দুই দলেরই সাফল্য ও ব্যর্থতার গল্প লেখা হলো এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দলীয় দেড়শোর আগেই ৬ উইকেট তুলে নিয়ে স্বাগতিক ভারতকে কোণঠাসা করে ফেলেছিল বাংলাদেশ। অথচ দিনের শেষ সেশনে সেই বাংলাদেশকেই কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না। ভারতও ফায়দা তুলেছে কড়ায় গণ্ডায়।
দিনের শেষ সেশনে ৩২ ওভারের খেলা হয়েছে। এ সময়ে স্কোরবোর্ডে জমা হয়েছে ১৬৩ রান। উইকেটের পতন হয়নি একটিও। ১৪৪ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলা ভারত আর কোনো উইকেট না হারিয়েই ৩৩৯ রানে দিন শেষ করেছে রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজার দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের সুবাদে।
বিজ্ঞাপন
১১২ বলে ১০২ রানে অপরাজিত আছেন অশ্বিন আর জাদেজা টিকে আছেন ১১৭ বলে ৮৬ রানে। আগামীকাল (শুক্রবার) এ দুজনের ব্যাটে ভর করে বড় পুঁজি গড়তে চাইবে স্বাগতিক দল। সফরকারী দলের বোলারদের মধ্যে ১৮ ওভার বল করে ৫৮ রান খরচায় চার উইকেট শিকার করেছেন হাসান মাহমুদ। এ ছাড়া একটি করে উইকেট দখলে নিয়েছেন নাহিদ রানা ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
চেন্নাইয়ে প্রথম দুই সেশন সমর্থকদের নীরব করে রেখেছিলেন বাংলাদেশি পেসার হাসান মাহমুদ। একে একে রোহিত-কোহলিদের সাজঘরে পাঠানোর পর রাতারাতি ভারতজুড়ে সার্চিংয়ে ট্রেন্ডে চলে আসেন টাইগার এই পেসার। ঘরের ছেলে অশ্বিন হয়তো নিজ দেশের সমর্থকদের মনোবেদনা বুঝতে পেরেছিলেন। শেষ সেশনে ব্যাট হাতে জাদেজাকে সঙ্গে নিয়ে ওয়ানডে মেজাজে ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি তুলে নিলেন।
২০২১ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চেন্নাইয়ে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন অশ্বিন। ৩ বছর পর ঘরের মাঠে আবার টেস্ট খেলতে নেমেই সেঞ্চুরি হাঁকালেন। টেস্ট ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি সেই সঙ্গে জাজেদার সঙ্গে রেকর্ড জুটি গড়ে দলকেও বড় পুঁজি এনে দিলেন।
দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে আজ (বৃহস্পতিবার) চেন্নাইয়ের এম এ চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামে টস জিতে ফিল্ডিংয়ে নেমে দারুণ শুরু করেছিল টাইগার পেসাররা। শুরু থেকেই হাসান মাহমুদ ও তাসকিন আহমেদকে খেলতে অস্বস্তিতে ছিলেন ভারতের দুই ওপেনার। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে হাসানের বলে রোহিতের বিপক্ষে রিভিউ নিয়েছিল বাংলাদেশ। আম্পায়ার্স কলের কারণে সে যাত্রায় লেগ বিফোর থেকে বেঁচে যান ভারত অধিনায়ক। তবে নিজের পরের ওভারে ফিরেই রোহিতকে সাজঘরে ফেরান হাসান।
ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলটি স্টাম্পের ভেতরে রেখেছিলেন হাসান। রোহিত একটু বেশি সাবধানে ডিফেন্স করতে গিয়ে পুরো ব্যাটে পাননি। ব্যাটের কানা নিয়ে বল জমা পড়ে প্রথম স্লিপে শান্তর হাতে। দারুণ লো ক্যাচ নিয়েছেন শান্ত। সাজঘরে ফেরার আগে ১৯ বলে ৬ রান করেন রোহিত। তিনে নেমে সুবিধা করতে পারেননি শুভমান গিল। অষ্টম ওভারে হাসানের লেগ স্টাম্পের বাইরের বল খোঁচা মারতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন গিল। ৮ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি।
দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া ভারতের ভরসা হয়ে চারে নেমেছিলেন বিরাট কোহলি। তবে অভিজ্ঞ এই ব্যাটারকেও দাঁড়াতে দেননি হাসান। ১০ম ওভারে হাসানের করা অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটকিপার লিটনকে ক্যাচ দেন কোহলি। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬ বলে ৬ রান।
৩৪ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর জয়সাওয়াল ও পান্তের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে ভারত। এ দুজনে মিলে চতুর্থ উইকেট জুটিতে যোগ করেছেন ৬২ রান। ৩৯ রান করে পান্ত বিদায় নিলে ভাঙে সেই জুটি। এই উইকেটকিপার ব্যাটারকেও ফেরান হাসান। অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের খাটো লেংথের বলে খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন পান্ত।
পান্তের বিদায়ের পর লোকেশ রাহুলকে নিয়েও বড় জুটির পথে এগোচ্ছিলেন জয়সাওয়াল। তবে ব্যক্তিগত ফিফটি স্পর্শ করে আর বেশি দূর এগোতে পারলেন না তিনি। ইনিংসের ৪২তম ওভারে এসে উইকেটের দেখা পান নাহিদ রানা। তার করা ১৪৮ কিলোমিটার গতির বলটি জয়সাওয়ালের ব্যাটের কানায় লেগে স্লিপে সাদমানের হাতে জমা পড়ে। ১১৮ বলে ৫৬ রানে আউট হন এই তরুণ ওপেনার।
এর তিন বল পরই সাজঘরে ফেরেন আরেক সেট ব্যাটার লোকেশ রাহুলও। ইনিংসের ৪৩তম ওভারে বোলিংয়ে ছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ওভারের তৃতীয় বলে শর্ট লেগে জাকির হাসানকে ক্যাচ দেওয়ার আগে রাহুলের ব্যাট থেকে এসেছে ৫২ বলে ১৬ রান।
১৪৪ রানে ৬ উইকেট পতনের পর এরপরের গল্পটা কেবল ভারতের। সাকিব আল হাসান-মেহেদী হাসান মিরাজদের রীতিমতো কচুকাটা করেছেন অশ্বিন-জাদেজা জুটি। ২২৭ বলে অপরাজিত ১৯৫ রানের জুটি গড়েছেন তারা। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি রেকর্ডও ভেঙেছে এ জুটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত ১ম ইনিংস: ৮০ ওভারে ৩৩৯/৬
(জয়সাওয়াল ৫৬, রোহিত ৬, গিল ০, কোহলি ৬, পান্ত ৩৯, রাহুল ১৬, জাদেজা ৮৬*, অশ্বিন ১০২*; তাসকিন ১৫-১-৪৭-০, হাসান ১৮-৪-৫৮-৪, নাহিদ ১৭-২-৮০-১, মিরাজ ২১-১-৭৭-১, সাকিব ৮-০-৫০-০, মুমিনুল ১-০-৪-০)।
এফআই