প্রায় ছয় মাস পর নিজেদের মাটিতে টেস্ট খেলতে নামছে ভারত। অন্যদিকে, পাকিস্তানের মাটিতে অবিস্মরণীয় টেস্ট সিরিজের পর এবার ভারতের বিপক্ষেও ফরম্যাটটিতে জয়খরা কাটাতে চায় বাংলাদেশ। গত এক দশকে দুই দল ১৩টি টেস্টে মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে ১১টি জয় ভারতের, বাকি দুই ম্যাচ ড্র। তাই নাজমুল হোসেন শান্তদের সামনে যে কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে সেটা বলাই বাহুল্য। তবে পাকিস্তানে পাওয়া আত্মবিশ্বাস এই সিরিজেও কাজে লাগানোর স্বপ্ন টাইগার অধিনায়কের।

যেকোনো দলের জন্যই ভারত নিঃসন্দেহে বড় প্রতিপক্ষ, বিশেষত ঘরের মাঠে রোহিতরা দারুণ অপ্রতিরোধ্য। গত দশ বছরে তারা ভারতে কেবল চারটি টেস্ট হেরেছে। এই সময়ে সিরিজ জিতেছে ১২টির মতো। সবমিলিয়ে (২০১২ থেকে) ঘরের মাঠে সবশেষ ১৭ সিরিজেই অপরাজিত ভারত। এমন অনবদ্য পারফরম্যান্স ধরে রেখেই আগামীকাল বাংলাদেশকে প্রথম টেস্টে আতিথ্য দেবে ভারত। চেন্নাইয়ের এম চিদাম্বরাম স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টেস্ট শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায়।

ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে সফরকারী টাইগার অধিনায়ক শান্ত বলেন, ‘কঠিন প্রতিপক্ষ, এটা আমরা সবাই স্বীকার করি। কিন্তু প্রতিপক্ষ নিয়ে না ভেবে নিজেদের শক্তিমত্তা নিয়ে ভাবা জরুরি। আমি বিশ্বাস করি, এখানে ভালো ক্রিকেট খেলার সামর্থ্য এই দলের আছে। পাঁচ দিনের ম্যাচ, পাঁচটা দিনই কীভাবে ভালো খেলা যায়। লক্ষ্য একটাই– প্রতিটি ম্যাচই জিতব। প্রতিটি আন্তর্জাতিক দলই জেতার জন্য খেলে। আমরাও জেতার জন্য খেলব, আর এজন্য যা করা প্রয়োজন করব। পঞ্চম দিনের শেষ সেশনে গিয়ে ফলাফল নিয়ে চিন্তা, এর আগপর্যন্ত আমরা চেষ্টা করব শক্তি অনুযায়ী খেলার।’

এই সিরিজে ভালো করতে পারলে আরও বড় সুযোগ আসবে বলে বিশ্বাস শান্তর। একইসঙ্গে পাকিস্তান সিরিজে পাওয়া আত্মবিশ্বাস বর্তমান সিরিজেও থাকছে বলে জানিয়েছেন তিনি, ‘এসব সিরিজ যদি ভালো করতে পারি প্রত্যেক দল আমাদের সঙ্গে বেশি বেশি খেলতে চাইবে। এটা অবশ্যই বড় সুযোগ, এখানে কত ভালো খেলতে পারি। আশা করব বাংলাদেশ যেভাবে টেস্ট খেলছে, সব দল আমাদের সঙ্গে খেলতে আগ্রহী হবে। পাকিস্তানে আমরা ভালো খেলেছি, তবে এটা এখন অতীত। আত্মবিশ্বাস নেওয়া যেতে পারে। এই সিরিজেও ভালো করার বিশ্বাস আছে ড্রেসিংরুমে। আমরা ফলাফল নিয়ে না ভেবে প্রক্রিয়া নিয়ে ভাবতে চাই।’

ভারতীয় দলের প্রতিনিধি হয়ে এদিন সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীর। প্রতিপক্ষ বাংলাদেশকে নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কাউকে ভয় পাই না, কিন্তু সবাইকে সম্মান করি, আমি এটা খুব করে বিশ্বাস করি। আমরা বাংলাদেশকে সম্মান করি। আমরা যে ধরনের ক্রিকেট খেলতে চাই, সেটাই খেলব। আমাদের সবটা দিতে চাই। কারণ চ্যাম্পিয়ন দলগুলো এটাই করে। ওরা প্রতিপক্ষের দিকে তাকায় না। ওরা ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করে, যেভাবে খেলতে চায় সেভাবেই খেলে থাকে। আগে যেটা বললাম, বাংলাদেশকে আমরা সম্মান করি এবং সেটা থাকবে।’

প্রথমবার পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে জিতেছে বাংলাদেশ। সেই জয়ের জন্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে গম্ভীর বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন জানাই পাকিস্তানে ওদের পারফরম্যান্সের জন্য। তবে এটা নতুন সিরিজ এবং নতুন প্রতিপক্ষ। আমাদের সেরা ক্রিকেটটা খেলা জরুরি। এটাই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের বেশ কিছু অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছে। সাকিবের অভিজ্ঞতা আছে, মুশফিকেরও। খুব ভালো বোলিং আক্রমণ রয়েছে তাদের। মেহেদীও আছে। বুঝতেই পারছেন, বাংলাদেশে অনেক প্রতিভা আছে। তবে আমাদের জন্য প্রথম বল থেকে সতর্ক থাকতে হবে।’

চেন্নাইয়ের পিচ সাধারণত লালচে মাটির হয়ে থাকে, যেখানে বাড়তি সুবিধা পান স্পিনাররা। তবে কালকের ম্যাচে পেসারদের জন্যও বাড়তি বাউন্স থাকতে পারে। বর্তমানে চেন্নাইয়ের তাপমাত্রা ব্যাপক, ৩০ থেকে শুরু করে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসও হতে পারে কালকের উষ্ণতা। দিন যত গড়াবে ততই এখানকার পিচ ভেঙে মরণফাঁদ হতে পারে ব্যাটারদের জন্য। যা স্পিনারদের জন্য অবারিত সুযোগ করে দেবে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হওয়ায় উভয় দলের জন্যই লাল বলের এই সিরিজ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। 

পিচ প্রসঙ্গে শান্ত বলেছেন, ‘যতটুকু দেখে বুঝেছি ভালো উইকেট হবে। পেস বা স্পিন এটা নিয়ে কথা বলতে চাই না। কাল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উইকেট মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব। স্পিন-পেস দুই দিক থেকেই দল ভারসাম্যপূর্ণ। তাই চিন্তা কারণ হবে না। বাংলাদেশে এসজি বলে প্র্যাকটিস করেছি। এখানে আসার পরও এসজি বলে বেশ কয়েকটা সেশন হয়েছে। মোটামুটি খুব ভালোভাবেই প্রত্যেক ব্যাটার মানিয়ে নিয়েছে। তাদের বোলিং অ্যাটাক ভালো, চ্যালেঞ্জ থাকবেই।’

এসএইচ/এএইচএস