বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক পালাবদলের পর উদ্ভুত পরিস্থিতির বিরূপ প্রভাব পড়েছে ক্রীড়াঙ্গনেও। বিশেষত এই সময়ে দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ ও তাদের বাড়ি-ঘরে হামলার অভিযোগ রয়েছে। যদিও ভারতীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া গুঞ্জনের বেশিরভাগই ভুয়া বলে জানা গেছে। এদিকে, একই দাবিতে হামলার হুমকি দেওয়ার পর বাংলাদেশ-ভারত সিরিজ বয়কটেরও ডাক দিয়েছে দেশটির কয়েকটি সংগঠন।

আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে ভারতের চেন্নাইয়ে প্রথম টেস্ট দিয়ে এই সিরিজ শুরু হতে যাচ্ছে। এই ম্যাচসহ পুরো সিরিজই বয়কটের ট্রেন্ড চালু করেছেন ভারতীয় নেটিজেনদের একটি অংশ। গোয়াভিত্তিক সংগঠন হিন্দু জনজাগ্রুতি সমিতি তো বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সিরিজ বাতিলেরই ডাক দিয়েছিল। এমনকি ওই দাবিতে বিসিসিআইকে অনুরোধও জানিয়েছিল সংগঠনটি। 

এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, ‘হিন্দু জনজাগ্রুতি সমিতি দৃঢ়ভাবে জানাচ্ছে যে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার ম্যাচ আয়োজন বাংলাদেশের আহত হিন্দুদের প্রতি অসম্মান দেখানোর শামিল। তাদের ওপর অনবরত নৃশংস হামলা চালানো হচ্ছে। সমিতির পক্ষ থেকে বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) প্রতি ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ বাতিলের অনুরোধ করছি। এমনকি হিন্দুদের ওপর হামলা বন্ধ না করা পর্যন্ত বাংলাদেশি শিল্পীদের কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও যেন না ডাকা হয়।’

সংস্থাটির বরাতে সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে বলছে, শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর এই ধরনের ঘটনা ক্রমাগত বাড়ছে। বিশেষ করে গ্রাম্য এলাকার হিন্দুরা আতঙ্কের মধ্যে বাস করছে। অনবরত হামলায় ২৩০ জন নিহত এবং হিন্দুবিরোধী সহিংসতার শিকার হয়েছে ৬৪ জেলার মধ্যে ৫২টিতেই। আরেক সংবাদমাধ্যম এবিপি লাইভও একই দাবিতে ভক্তদের আন্দোলনে নামার কথা জানিয়েছে।

এর আগে ৬ অক্টোবর গোয়ালিয়রে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বাংলাদেশ-ভারতের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা। হিন্দু মহাসভার সহ-সভাপতি ডা. জয়বীর ভরদ্বাজ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তারা এই ম্যাচ বাতিলের সবরকমের চেষ্টা করবে। পরবর্তীতে দুই দলের দ্বিতীয় টেস্টের ভেন্যু কানপুরেও হামলার হুমকি এসেছে ওই দলটির পক্ষ থেকে। এমন অবস্থায় দ্বিতীয় টেস্টের ভেন্যু পরিবর্তন করা হতে পারে বলে গুঞ্জন উঠলেও, বিসিসিআই সেটি নাকচ করে দিয়েছে।

বিসিসিআইয়ের এক কর্মকর্তা সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি এবং সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছি। সূচি অনুযায়ী ম্যাচ আয়োজন করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। দু’দলের টেস্ট ম্যাচ আয়োজনের জন্য স্টেডিয়ামও সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আমরা ম্যাচ সরানোর কথা ভাবছিই না। কানপুরেই খেলা হবে। তবুও আমরা পরবর্তী পরিস্থিতির দিকেও নজর রাখব। কানপুরের পাশাপাশি আর একটি কেন্দ্রের দিকেও নজর রাখা হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, আগামীকাল ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ভারত-বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট শুরু হবে চেন্নাইয়ে। বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায় ম্যাচটি শুরু হবে। ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে দ্বিতীয় টেস্ট হওয়ার কথা কানপুরে। দু’টি টেস্টই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বিসিসিআই এবং স্থানীয় প্রশাসন এক যোগে কাজ করছে। এরপর দুই দল ‍মুখোমুখি হবে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে।

এএইচএস