টেস্ট ক্রিকেট মানেই প্রতিপক্ষ আর কন্ডিশন বুঝে ধৈর্য্য নিয়ে এগিয়ে চলা। কদিন আগেই সাদা পোশাকে কাউন্টি ক্রিকেটে সাকিব আল হাসানের দল সারে ক্রিকেট ক্লাবের দুই ব্যাটার ডম সিবলি এবং বেন ফোকস নতুন করে চিনিয়েছেন টেস্টের বাস্তবতা। ম্যাচ বাঁচানোর তাগিদে সিবলি সেদিন ১৮৩ বলে করেছিলেন ৫৬ রান। আর বেন ফোকসের ব্যাট থেকে ১০০ বলে আসে  ২০ রান। 

সারেকে ম্যাচ জেতাতে না পারলেও তাদের দুই ইনিংস নিশ্চিতভাবেই একটা বার্তা দিয়ে রেখেছিল মাঠে থাকা সাকিব আল হাসানের জন্য। টাইগার ক্রিকেটে টেস্ট খেলার ২৪ বছর পরেও টাইগারদের টেস্ট পরিসংখ্যান যেন ভুলে যাওয়ার মতোই। ২১ জয়ের বদলে হার ১০৫ ম্যাচে। ড্র হয়েছে মোটে ১৮ ম্যাচ। 

টেস্ট ক্রিকেটে ম্যাচে টিকে থাকার বড় মন্ত্র ক্রিজে লম্বা সময় পার করা। ব্যাট হাতে বড় ইনিংস খেলা। কিন্তু দেশের ব্যাটারদের এখানেই যেন বড় আকারের ঘাটতি শুরু থেকে। ২০০০ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের উদ্বোধনী টেস্টে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ১৪৫ রান অনেকটা দিন ধরেই ছিল দেশের টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। একটা ডবল সেঞ্চুরি পেতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৩ বছর। 

টেস্টে দুই যুগের পথচলায় বাংলাদেশ পেয়েছে মোটে ৮১ সেঞ্চুরি। দেশের ক্রিকেটে এসময় অসংখ্য ফিফটি এলেও সেটাকে শতকে পরিণত করা হয়নি। পাকিস্তান সফরে দুই টেস্ট মিলিয়ে বাংলাদেশ পেয়েছে দুই সেঞ্চুরি। শেষ চার ফিফটির মাঝে দুটোকেই সেঞ্চুরিতে পরিণত করেছেন দেশের ব্যাটাররা। গেল দুই যুগে যা ছিল বড় রকমেরই এক চ্যালেঞ্জ। 

সেঞ্চুরির প্রশ্নে সাকিব আল হাসানের কথাই সবার আগে আসতে পারে। ক্যারিয়ারে ৩৬ বার পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেললেও সেঞ্চুরি পেয়েছেন মোটে ৫ বার। গড়ে প্রতি ৬ ইনিংসে মাত্র ১ বার ফিফটিকে শতকে পরিবর্তন করতে পেরেছিলেন তিনি। ২০১৭ সালের পর থেকে টেস্ট ক্যারিয়ারে আর কখনোই শতকের মুখ দেখেননি সাকিব আল হাসান।  এর মাঝে একাধিক ফিফটি থাকলেও তা পরিণত হয়নি শতকে। 

তামিম ইকবাল বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। তার ক্যারিয়ারে ৪১ বার পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস থাকলেও সেঞ্চুরি আছে মোটে ১০টি। প্রতি চারটি ফিফটিকে ১ বার করে শতকে রূপ দিয়েছিলেন। মুশফিকুর রহিম ৩৮টি পঞ্চাশ পেরুনো ইনিংস থেকে আদায় করতে পেরেছেন ১১ টি সেঞ্চুরি।  অথচ দেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার অবশ্য খেলেছেন ১৬৬ ইনিংস! এমন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের ব্যাটে এমন সেঞ্চুরিখরাই হয়ত দেশের টেস্ট ব্যাটিংয়ের দুর্দশার সবচেয়ে ভালো উদাহরণ। 

এখন পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটের হিসেবে ইংলিশ ক্রিকেটাররা করেছেন ৯২১ সেঞ্চুরি। পরিসংখ্যানের খাতা বলছে, গেল টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের পরেই সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। অজি ব্যাটারদের কাছ থেকে এসেছে ৮৯২টি সেঞ্চুরি। ভারত পেয়েছে ৫৪৬ সেঞ্চুরি। আর ৫০০ সেঞ্চুরি পাওয়া অন্য দেশটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

দেশের প্রপার টেস্ট ব্যাটসম্যানের স্বীকৃতি পাওয়া মুমিনুল হকের পরিসংখ্যানটাও আশা জাগানোর মতো নয়। ৩১ বার পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেললেও পেয়েছেন ১২ সেঞ্চুরি। দেশের ক্রিকেটে যা সর্বোচ্চ। আর সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার তো খ্যাতিই পেয়েছিলেন ‘মিস্টার ফিফটি’ হিসেবে। 

২৪ ক্যারিয়ার ফিফটির বিপরীতে সাবেক অধিনায়কের সেঞ্চুরি মোটে ৩টি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ২১ বার পঞ্চাশ পেরুনো ইনিংস থেকে শতক পেয়েছেন মোটে ৫ বার। আর লিটন ২১ বার পঞ্চাশ পেরুনো ইনিংস থেকে সেঞ্চুরি পেয়েছেন ৪ বার। যার শেষটা এসেছে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের তৃতীয় দিনে। এদফায় অবশ্য লিটন ইনিংস বড় করেছেন। যদিও একই ইনিংসে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও মেহেদি হাসান মিরাজ ফিরেছেন শতকের আগেই। 

এছাড়া রাওয়ালপিন্ডিতেই প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে পেয়েছিল ৫ ফিফটি। সাদমান ইসলাম ফিরেছিলেন ৯৩ রানে। লিটন, মেহেদি আর মুমিনুল হক এরপর ফিফটি করলেও সেটাকে সেঞ্চুরিতে পরিণত করতে পারেননি। কেবল মুশফিকই স্পর্শ করেছিলেন ৩ অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার। তিনিও অবশ্য ১৯১ রান করে আউট হয়েছেন ডাবল সেঞ্চুরির ঠিক আগে। 

দেশের ব্যাটারদের সেঞ্চুরি খরা কতটা প্রবল তার নমুনা পাওয়া যায় বছর আর সেঞ্চুরির তুলনামূলক পরিসংখ্যান থেকে। মুশফিকুর রহিম ক্যারিয়ারের ১৯ বসন্ত পেরিয়ে সেঞ্চুরি পেয়েছেন মোটে ১১টি। সাকিবের ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে সেঞ্চুরি নামের মাইলফলক ধরা দিয়েছে ৫ বার। আর মুমিনুল হক ১১ বছরে পেয়েছেন ১২ সেঞ্চুরি। 

বিপরীতে শুধুমাত্র ইংলিশ ক্রিকেটার জো রুটের পরিখ্যানই রীতিমতো ঈর্ষণীয়। ক্যারিয়ারের রেকর্ড বলছে সাদা পোশাকে জো রুট প্রায় প্রতি দুটি ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে পরিণত করেছেন। শেষ ৩ বছরেই পেয়েছেন ১৬ সেঞ্চুরি। নিজের ক্যারিয়ারকে এমনই এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন, যেখান থেকে তার তুলনা চলছে শচীন টেন্ডুলকারের মতো কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের সঙ্গে। 

গেল দুই যুগে ইংল্যান্ড ক্রিকেট পেয়েছে এমন দুজনের দেখা। সেঞ্চুরিটা যাদের নিতান্তই শখের খেলা। স্যার অ্যালিস্টার কুক এবং জো রুট ইংলিশদের হয়ে সেঞ্চুরির সংখ্যাটা করেছেন সমৃদ্ধ। শুধু এই দুজনেই না, টেস্টে সেঞ্চুরি করাটা যেন ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের সহজাত প্রবৃত্তি। এখন পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটের হিসেবে ইংলিশ ক্রিকেটাররা করেছেন ৯২১ সেঞ্চুরি। 

মুশফিকুর রহিম ক্যারিয়ারের ১৯ বসন্ত পেরিয়ে সেঞ্চুরি পেয়েছেন মোটে ১১টি। সাকিবের ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে সেঞ্চুরি নামের মাইলফলক ধরা দিয়েছে ৫ বার। আর মুমিনুল হক ১১ বছরে পেয়েছেন ১২ সেঞ্চুরি। বিপরীতে ইংলিশ ব্যাটার জো রুট ৩ বছরে পেয়েছেন ১৬ সেঞ্চুরি।

অবশ্য ইংল্যান্ড এবং বাংলাদেশের টেস্ট খেলার সংখ্যাতেও রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। তবে সেঞ্চুরি করার মানসিকতার জন্য সংখ্যার চেয়ে হয়ত টেস্ট খেলার মতো পরিপক্ব মানসিকতাই সবচেয়ে বেশি জরুরী। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা সেখানে যে অনেকটাই পিছিয়ে তা নিয়ে খুব একটা বিতর্ক চলে না। 

পরিসংখ্যানের খাতা বলছে, গেল টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের পরেই সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। অজি ব্যাটারদের কাছ থেকে এসেছে ৮৯২টি সেঞ্চুরি। ভারত পেয়েছে ৫৪৬ সেঞ্চুরি। আর ৫০০ সেঞ্চুরি পাওয়া অন্য দেশটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সাম্প্রতিক সময়ে ক্যারিবিয়ানদের ব্যাটারদের সেঞ্চুরির সংখ্যা যেমন কমেছে, তেমনি কমেছে জয় পাওয়ার সংখ্যাটাও। টেস্ট ক্রিকেটে বড় ইনিংস খেলা আর সাফল্য যে পাশাপাশি চলে, তার উদাহরণ খুব ভাল করেই জানেন ক্যারিবিয়ানরা। 

শতকের এই তালিকায় বাংলাদেশের ওপরে আছে শ্রীলঙ্কা। তবে তারাও রীতিমত ধরাছোঁয়ার বাইরে। লংকান ব্যাটাররা ২ যুগে পেয়েছেন ৩০৩ সেঞ্চুরি। যার সবশেষটা এসেছে পাথুম নিশাঙ্কার ব্যাট থেকে। আর বাংলাদেশকে স্বস্তি দিয়ে তালিকার একেবারে শেষে আছে জিম্বাবুয়ে। রোডেশিয়ানদের সেঞ্চুরি ৬৪টি।

জেএ