ব্যাট-বলে দারুণ এক সিরিজ পার করলো বাংলাদেশ। অনেকের মতে, টেস্ট ক্রিকেটে দুই যুগের পথচলায় নিজেদের সেরা সিরিজটাই এবার পাকিস্তানে খেলেছে টাইগাররা। বোলারদের গড়ে দেওয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে ব্যাটাররা দারুণ সব ইনিংস উপহার দিয়েছেন। প্রথম টেস্টে এক ইনিংসে ৫ হাফ-সেঞ্চুরি, মুশফিকুর রহিমের ১৯১ রান। দ্বিতীয় টেস্টে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর লিটন দাস আর মেহেদি হাসান মিরাজের বিশ্বসেরা জুটি নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের জন্য বড় প্রাপ্তি। 

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে সমালোচনা হলেও চিত্রটা বদলেছে এবার এসে। ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্পের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের ব্যাটারদের উন্নতি ছিল চোখে পড়ার মতোই। সেই ব্যাটিং কোচ এবার পাকিস্তান থেকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ঢাকা পোস্ট-এর ক্রীড়া প্রতিবেদক সাকিব শাওনকে। দুজনে কথা বলেছেন পাকিস্তান সিরিজ, টাইগারদের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ আর বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে। 

 

ঢাকা পোস্টের পাঠকদের জন্য সেই সাক্ষাৎকার পুরোপুরি তুলে ধরা হলো-

ঢাকা পোস্ট : পুরো টেস্ট সিরিজ দারুণভাবে শেষ হলো। সিরিজ জয় নিয়ে প্রথমে শুনতে চাই আপনার বক্তব্য

ডেভিড হেম্প : একটা চমৎকার সিরিজ জয়, বিশেষ করে দেশের বাইরে। তবে যেটা আনন্দ দিয়েছে তা হলো সব খেলোয়াড়রাই এতে ভূমিকা রেখেছে। প্রত্যেকেই দুই জয়ের ক্ষেত্রে নিজেদের ভূমিকা ঠিকভাবে পালন করেছে। 

ঢাকা পোস্ট : অনেকে বলছেন বাংলাদেশের ইতিহাসে সেরা টেস্ট সিরিজ ছিল এবারের পাকিস্তান সফর। আপনি কি একমত এই কথায়? 

ডেভিড হেম্প : আমি জানি না এটাই সবচেয়ে সেরা কি না, যেহেতু আমি জয়ের ইতিহাস খুব একটা ভালোভাবে জানি না। তবে এটা শক্তিশালী এক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ঘরের বাইরে বেশ স্পেশাল এক জয়। তাই আমি মনে করি এই সিরিজটা ওপরের দিকেই থাকবে। 

ঢাকা পোস্ট : টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খারাপ ব্যাটিংয়ের কারণে অনেক সমালোচনা হয়েছিল, এবার টেস্ট সিরিজে ব্যাটাররা নিজেদের মেলে ধরেছে…

ডেভিড হেম্প : টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যাটিং নিয়ে সমালোচনা হয়েছে তবে আমি সেসময় বলেছিলাম, কন্ডিশন এবং পিচ সব দেশের সব ব্যাটারকেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে এবং জুটি গড়ার ক্ষেত্রে এই সিরিজে আমাদের ব্যাটাররা নিজেদের খেলায় যেমন দারুণ ছিলেন তেমনি এটাও সবসময় মনে রেখেছেন, দল কী চায়।

ঢাকা পোস্ট : স্বীকৃত ব্যাটারদের সকলেই রান পেয়েছেন, তাদের নিয়ে আলাদা কী কাজ করেছেন? 

ডেভিড হেম্প : সাধারণ পরিকল্পনা আর প্রস্তুতি ছাড়া আলাদা কিছু করা হয়নি আসলে। বুঝতে চেষ্টা করেছি ব্যাটিং গ্রুপ হিসেবে আমাদের কী দরকার, প্রতিপক্ষের হুমকিগুলো বুঝতে চেয়েছি। তবে এরচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ওরা আমাদের রানের জন্য কেমন সুযোগ করে দিচ্ছে। এর সঙ্গে এটা নিশ্চিত করতে চেয়েছি, অনুশীলনে কোন ব্যাটারের কেমন অনুশীলন দরকার, যেন খেলোয়াড়রা ম্যাচে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যাট করতে নামতে পারে। 

ঢাকা পোস্ট : ২৬ রানে ৬ উইকেট নেই। এরপর লিটন এবং মিরাজের বিশ্বরেকর্ড পার্টনারশিপ। দুজনের ইনিংসকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?   

ডেভিড হেম্প : পরিস্থিতি বিবেচনায় একটা দারুণ পার্টনারশিপ, যেটা আমাদের ওই বিশেষ সময়ে দুজনে দাঁড় করিয়েছিল। দুজনেই খুব সাবলীলভাবে শান্ত থেকে বাড়তি ভাবনা ছাড়াই খেলেছে। এর সঙ্গে বলতেই হয় লিটন এবং হাসানের পার্টনারশিপ খেলার পরিস্থিতি বিবেচনায় খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। 

ঢাকা পোস্ট : চলতি মাসেই দলের সামনে ভারত সিরিজ। কেমন পারফর্ম করবে দল ভারতের মাটিতে? 

ডেভিড হেম্প : ভারত খুবই শক্তিশালী একটা দল। যারা ঘরের মাঠে অপ্রতিরোধ্য, অবশ্যই তাই চ্যালেঞ্জ আছে। তবে আমাদের দল এই সিরিজ থেকে আত্মবিশ্বাস এবং শিক্ষা দুটোকেই সঙ্গী করে সেই চ্যালেঞ্জ নিতে মুখিয়ে আছে। 

ঢাকা পোস্ট : ২৪ বছরে বাংলাদেশের টেস্ট জয় খুব বেশি নয়। এবার কী টেস্ট দলে জয়ের ধারাবাহিকতা আসবে? 

ডেভিড হেম্প : টেস্টে জয় পাওয়া কঠিন, যেহেতু আপনাকে ৪ থেকে ৫ দিন নিয়মিত ভালো খেলে যেতে হয়। যে কারণে এখানে জয় পেলেও আলাদা গুরুত্ব বহন করে। আশা করি এই দলটা সবশেশ দুই জয় থেকে শিক্ষা আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে সামনের টেস্টগুলো খেলতে পারবে। 

এসএইচ/জেএ