প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক সফরে গিয়েছিলেন নাহিদ রানা। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে ঐতিহাসিক জয়ের সিরিজে তিনি গতির ঝড়ও তুলেছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৫২ কিলোমিটার গতিতে দ্বিতীয় টেস্টে বল করেছেন রানা। জয়রাঙা সিরিজ শেষে তিনি পাকিস্তান থেকে ঢাকা পোস্টকে নিজের অনুভূতি জানিয়েছেন। 

রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটের বিশাল জয় প্রথমবার বাংলাদেশকে এনে দেয় লাল বলে পাকিস্তানকে হারানোর স্বাদ। এবার দ্বিতীয় টেস্টেও এলো অসামান্য এক জয়। আজ শেষদিনের শুরুতে দুই উইকেট হারালেও নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক আর মুশফিকুর রহিমরা ঠিকই দলকে নিয়ে যান ১৮৫ রানের ল্যান্ডমার্কে। টাইগারদের এবারের জয়টা এলো ৬ উইকেটের ব্যবধানে। দুই টেস্টের সিরিজে নাহিদ রানা ৬ উইকেট শিকার করেছেন।

দেশের বাইরে প্রথম সিরিজ খেলার অভিজ্ঞতা, নানা মুহূর্ত ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে দেওয়া নাহিদ রানার সাক্ষাৎকার থাকলো ঢাকা পোস্টের পাঠকদের জন্য  

প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের সাক্ষী, নিশ্চয়ই আনন্দটা বোঝানোর মতো নয়…

রানা : হ্যাঁ, টেস্ট সিরিজ জিতলে ভালো তো লাগবেই। দেশের বাইরে এটি আমার প্রথম সিরিজ ছিল। যে কারণে ভালো লাগাটা আরও বেশি কাজ করছে। আর পারফর্ম করে সিরিজ জিততে পারাটা আরও বেশি আনন্দের। দলের জন্য কিছু করতে পেরেছি, সব মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ।

দেশ ছাড়ার আগে কি ভেবেছিলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদের মাটিতে সিরিজ জিতবেন?

রানা : ভেবেছিলাম এই সিরিজে আমরা অবশ্যই ভালো কিছু করব ইনশা-আল্লাহ। পরে তো দেখলেন আমাদের টিমের এফোর্টটা অনেক ভালো ছিল। সবাই সবাইকে হেল্প করেছে, টিম বন্ডিংটা অনেক ভালো ছিলো আমাদের।

বাবর-রিজওয়ানদের বেশ ভালো সামলেছেন, কেমন উপভোগ করলেন এটি?

রানা : হ্যাঁ, অবশ্যই অনেক উপভোগ করেছি আলহামদুলিল্লাহ। ভালো ব্যাটসম্যানকে আউট করলে সব সময় একটা ভালো লাগা কাজ করে। আমারও তেমনটা হয়েছে আরকি। চেষ্টা করব এ ধারা যাতে অব্যাহত রাখা যায় পরবর্তীতে।

গতকাল বাবরকে আউট করার পর সাকিব আপনাকে জড়িয়ে ধরে কি বলছিলেন আসলে?

রানা : (হাসি) না ভাই আসলে তেমন কিছু না ওটা। যদিও পার্সোনাল বিষয়, আসলে বলতে চাচ্ছি না। তবে মজা চলছিল আরকি।

১৫২ কিমি. গতিতে গতকাল বল করেছেন, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। আপনার লক্ষ্য কী, এরপর কেমন গতিতে বল করার ইচ্ছা…

রানা : এরকম কোন লক্ষ্য নেই আসলে বা এখনও কোনো লক্ষ্য সেট করিনি। আমার এরকম কোন ইচ্ছাও নেই এখনও। একটাই ইচ্ছা– যখন যেখানে সুযোগ পাব, দলকে ভালো পারফরম্যান্স দিয়ে জেতানোর লক্ষ্যটা থাকবে। দলের চাওয়াটাই আমার কাছে সবসময় বড় লক্ষ্য হিসেবে থাকবে।

প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে থেকে কেমন সাপোর্ট পাচ্ছেন?

রানা : কোচ সবসময় আমাকে সাপোর্ট করেছেন। যখন বোলিং শেষ করে আমি ড্রেসিংরুমে ফিরি, আমাকে বোঝায় এটা করলে ভালো হতো কিংবা ওটা করা উচিৎ ছিল। আমি যদি কোন স্পেল খারাপ করে আসি, তখনও সেটা সে সাপোর্ট করেছে আরকি। পরবর্তী স্পেল যাতে ভালো করতে পারি সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে, আমাকে সবসময় সাপোর্ট দিয়েছেন।

ডেইল স্টেইন, মিচেল স্টার্ক কিংবা আপনার সতীর্থ পেসাররা উইকেট পেলে বিশেষ উদযাপন করতে দেখা যায়। আপনাকে সেভাবে উল্লাস করতে দেখা যায় না, কিছুটা সাদামাটা থাকতে পছন্দ কি না...

রানা : আসলে এর সুনির্দিষ্ট কোন কারণ নেই। তবে মাঝেমধ্যে অটোমেটিকভাবেই সেলিব্রেশন চলে আসে দেখবেন। এর আগের ইনিংসে দেখবেন যে আমি সেলিব্রেশন করেছি। এমনিতে নরমাল থাকার চেষ্টা করি। মোমেন্টাম ভালো ছিল, আবার অনেক সময় ভেতর থেকে সেলিব্রেশন চলে আসে। এটা আসলে নিজের ফিলের ওপর নির্ভর করে অনেকটা।

গতকাল রিজওয়ানের ক্যাচ মিসের পর রাগ করলেন না, বরং স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করেছেন। তখন কী ভাবছিলেন?

রানা : আমার বলে যখন কারো হাত থেকে ক্যাচ পড়ে যায়, তখন ওই জিনিসটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করি। চেষ্টা করি আবার প্রথম থেকে শুরু করার।

পাকিস্তানের কোনো ক্রিকেটার থেকে কি আলাদাভাবে বাহবা পেয়েছেন?

রানা : এমনি সবার সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা ভালো বলেছে, ভালো পেইস আছে বলে। এ ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে আসলে তেমন কথা হয়নি। শাহিন আফ্রিদি বা নাসিম শাহ বলেন, তারা বলছে ভালো বল হচ্ছে। 

বাংলাদেশের সামনে ভারত সিরিজ, সেটা নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

রানা : ইচ্ছার কথা যদি বলি, যেটা একটু আগেও বললাম যে আসলে সব সময় ইচ্ছা থাকবে দেশের হয়ে ভালো কিছু করার। চেষ্টা থাকবে আমি যেন সবসময় দলের জন্য পারফর্ম করতে পারি। 

এসএইচ/এএইচএস