বাংলাদেশ ২–পাকিস্তান ০। টেস্ট সিরিজে এমন ফলাফল পাকিস্তানে গিয়ে বাংলাদেশ করবে অনেকটা অবিশ্বাস্যই ছিল। সেই অবিশ্বাস্য কাজটিই করেছেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। মাঠে খেলেছেন শান্ত-নাহিদরা, এর নেপথ্যে ছিলেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। 

ফুটবলে সাফল্য-ব্যর্থতার দায়ভার কোচের ওপরই বর্তায়। ক্রিকেটে অবশ্য কোচরা তেমন আলোচনায় থাকেন না। তবে বাংলাদেশ দলের হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে শুরু থেকেই আলোচিত-সমালোচিত। তার ব্যক্তিগত কর্তৃত্ববাদী আচরণ ছাড়াও বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যর্থতায় তিনি ছিলেন অত্যন্ত সমালোচিত। সেই সমালোচিত হাথুরুই বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সফলতার কারিগর। 

পরিসংখ্যান ও রেকর্ড বইয়ে শুধু থাকবে– বাংলাদেশ দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ জিতেছে। দুই টেস্টই বাংলাদেশ কোন পর্যায় থেকে জিতেছে সেই ঘটনা মনে থাকবে দেশের সকল ক্রীড়াপ্রেমীর মনে। প্রথম টেস্ট ড্রয়ের দিকেই হাঁটছিল। বাংলাদেশের বোলাররা শেষ দিন অসাধারণ বোলিং করে ম্যাচের চিত্র পাল্টে দিয়েছেন। টানা তিনদিন চালকের আসনে থেকে বাংলাদেশ সেই ম্যাচ জিতেছে। একদিনের বিশেষ পারফরম্যান্স যে অলীক কিছু নয়, সেটা আবার প্রমাণ করেছে দ্বিতীয় টেস্টে। প্রথম ইনিংসে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর লিটন-মিরাজ জুটিতে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ায়। পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংস দ্রুত গুটিয়ে আবার ম্যাচ জেতার প্লট তৈরি করেছে বোলাররা। অত্যন্ত ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ দুই টেস্ট জিতেছে।

বাংলাদেশ দলের ব্যর্থতায় হাথুরুসিংহে যতটা সমালোচিত হন, সফলতায় অবশ্য ততটা উদ্ভাসিত হন না। পাকিস্তানের মাটিতে কোণঠাসা অবস্থায় পড়েও লড়াই করার শতভাগ মানসিকতা ও গেম প্ল্যান বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে হাথুরুসিংহেকে অবদান দিতেই হবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিটনেস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফিটনেসের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় নেই, সেটা হাথুরুসিংহে অক্ষরে অক্ষরে দেখিয়েছেন। কড়া হেডমাস্টার কখনও ব্যর্থ হয়েছেন, আবার কখনও এনেছেন সাফল্যও। এবারের টেস্ট সিরিজ জয় সেটারই প্রমাণ।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের দৃশ্যপট ঘনঘন পরিবর্তন হচ্ছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী ঘটনায় এক দশক বোর্ড সভাপতি থাকা নাজমুল হাসান পাপন পদত্যাগ করেছেন। তার স্থলাষিভিক্ত হয়েছেন সাবেক প্রধান নির্বাচক ও অধিনায়ক ফারুক আহমেদ। হাথুরুরসিংহে ও বোর্ডের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণেই ফারুক অর্ধযুগ আগে প্রধান নির্বাচকের পদ ছেড়েছিলেন। উদ্ভুত ঘটনায় ফারুক যখন বোর্ড সভাপতি তখন আবার হাথুরুসিংহেই জাতীয় দলের দায়িত্বে। বোর্ড সভাপতি হওয়ার পরও ফারুক হাথুরুসিংহেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে না রাখার পক্ষেই মত দিয়েছিলেন। 

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। এই সময়ের আগে কোচ পাওয়া দুষ্কর। সেটা জেনেও নতুন বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদ হাথুরুসিংহেকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি ভাবছিলেন। তার দায়িত্ব নেওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যেই সেই হাথুরুসিংহের অধীনেই বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে সেরা অর্জন করল। এরপরও কি হাথুরুসিংহে বাদ পড়বেন নাকি মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব চালিয়ে যেতে পারবেন– সেই প্রশ্ন ঘুরছে ক্রিকেটাঙ্গনে। 

এজেড/এএইচএস