দুজনেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে উন্নতিতে কাজ করছেন। তার মধ্যে হাবিবুল বাশার ছিলেন সাবেক অধিনায়ক, বর্তমানে মেয়েদের ক্রিকেটের প্রধান। আরেকজন দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের কোচিংয়ে পরিচিত মুখ। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয়ে স্বাভাবিকভাবেই তারাও উচ্ছ্বসিত। আর এর পুরো কৃতিত্ব তারা শান্ত-লিটন ও মিরাজদেরকেই দিলেন। 

বাংলাদেশ দলের ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের পর ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপ করেছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন। তিনি বলছেন, ‘এমন অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করা মুশকিল। এটা বিশেষ সিরিজ জয় বলব আমি। এর আগে দেশের বাইরে দুইবার জিতেছি। তবে এটা বিশেষ, আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিলাম তখন কিন্তু ওদের পুরো ওয়েস্ট ইন্ডিজ টিম ছিল না।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান কিন্তু সবসময় টেস্ট ক্রিকেটে ভালো দল। যেকোনো ফরম্যাটেই ভালো দল তারা। আর পাকিস্তানের মাটিতে দুটো টেস্ট ম্যাচ ডমিনেট করে জয় পাওয়া কিন্তু বিশাল ব্যাপার। প্রতিটা সেশনই ডমিনেট করে খেলেছে বাংলাদেশ দল।’

জুলাইয়ের শেষ এবং আগস্টের শুরুতে দেশের পরিস্থিতি খারাপ থাকায় অনুশীলনে বাধা পড়েছিল বাংলাদেশ দলের। তবে বাশার মনে করেন ছেলেরা মন দিয়েই ক্রিকেটটা খেলেছে, ‘ওই সময় মানসিকভাবে সবাই একটু চিন্তিত ছিল। অস্থিরতার মধ্যে ছিল। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সবাই ক্রিকেটটা মনোযোগ দিয়েই খেলেছে। আমার মনে হয় এই সিরিজটা বাংলাদেশের মানুষকে একটু হলেও আনন্দ দেবে।’

এই টেস্ট সিরিজ জয়ের জন্য বাশার অবশ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছেন সবাইকেই, ‘কোচ-ক্রিকেটার সবারই ধন্যবাদ প্রাপ্য। আমি বলব এটা দলগত সিরিজ জয়। এ ছাড়া পেসাররা পাকিস্তান সিরিজে তুলনামূলক অনেক ভালো করেছে।’

পাকিস্তান সিরিজ শুরুর আগে ক্রিকেটাররা কাজ করেছিলেন বাংলা টাইগার্সের সঙ্গে। যেখান প্রধান কোচের ভূমিকায় ছিলেন সোহেল ইসলাম। শান্ত-জাকিরদের কোচিং করানো এবং এরপর সিরিজ জয়, যা নিয়ে ঢাকা পোস্টকে নিজের প্রতিক্রিয়া জানান সোহেল, ‘পাকিস্তানের মাটিতে পরপর দুইটা টেস্ট জয় করা মানে কিন্তু অনেক কিছু। টেস্ট ক্রিকেটে এটি অবশ্যই বড় সফলতা। যে অবস্থায় আমরা ছিলাম সেখান থেকে নরমালি এমন পারফরম্যান্স, এখন অনেক কিছু আশা করতে পারি। আগে হঠাৎ করে একটা টেস্ট ভালো খেলতাম। পরে সেই ধারাবাহিকতা থাকতো না। কিন্তু এবার পরপর দুই টেস্টে ভালো খেলেছে, যেটা পজিটিভ দিক।’

কোচ সোহেল ইসলাম বলেন, ‘(অনুশীলনে) ছেলেরা খুব চেষ্টা করেছে, কাজ করেছে নিজেদের দুর্বলতাগুলো নিয়ে। অন্য সময়ের চেয়ে এবারের অনুশীলনে তাদের মনোযোগ ছিল আরও বেশি। আমরা ভালো করতে চাই এমন একটা মনোভাব ছিল। টেস্ট ম্যাচে একদিন ভালো খেললে হয় না। প্রত্যেকটা সেশন বাই সেশন ভালো করতে হয়। এটা আমাদের সবচেয়ে বড় সফলতা বলতে পারেন যে আমরা সেশন বাই সেশন ভালো খেলেছি।’

তবে বাংলাদেশকে এখনই টেস্টে ভালো বলতে রাজি নন সোহেল। আসন্ন টেস্ট সিরিজগুলোতেও ভালো খেলে ধারাবাহিকতা ধরে রাখার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি, ‘আমি একটু চিন্তিত ছিলাম, দুইটা টেস্টে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারব কি না। সামনে আরও টেস্ট আছে, এরকম যদি ধারাবাহিকতা ধরে রাখা যায়, যদি ভালো করতে পারি পুরো ক্যালেন্ডারে। তাহলে বুঝতে পারবো যে না আমরা টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করতেছি।’

টাইগার্স ক্যাম্পে ক্রিকেটারদের নিয়ে কী কাজ করেছিলেন তাও জানিয়েছেন সোহেল, ‘টাইগার্স ক্যাম্পে যখন প্রোগ্রাম ছিল স্কিলের কাজ তো ছিলই। ব্যাটিং-বোলিং বা অন্য সাইড যেখানে যা দরকার ছিল সেসব নিয়ে কাজ করা হয়েছে। এটা আমি একা করিনি, আমার যে কোচিং স্টাফ ছিল বাবুল ভাই ছিলেন, তারেক আজিজ ছিলেন। টিম ম্যানেজার ছিল মঞ্জু। সবাই মিলেই হয়েছে আরকি। সবচেয়ে বড় বিষয় ছেলেদের প্র্যাকটিসের যে ইচ্ছা তারা খুব চেষ্টা করেছে, কাজ করেছে নিজেদের দুর্বলতাগুলো নিয়ে। অন্য সময়ের চেয়ে এবারের অনুশীলনে ছেলেদের মনোযোগ ছিল আরও বেশি। আমরা ভালো করতে চাই এমন একটা মনোভাব ছিল।’

সিরিজ শুরুর আগে কী ভেবেছিলেন বাংলাদেশ দুটো টেস্টই জিতবে? এমন প্রশ্নে সোহেলের সহজ উত্তর, ‘আসলে আমি তো এভাবে চিন্তা করিনি। আমি ভাবছিলাম যেহেতু আমাদের প্রিপারেশন ভালো, আমরা ভালো খেলতে পারব। টেস্ট ম্যাচে একদিন ভালো খেললে হয় না। প্রত্যেকটা সেশন বাই সেশন ভালো করতে হয়। এটা আমাদের সবচেয়ে বড় সফলতা বলতে পারেন যে আমরা সেশন বাই সেশন ভালো খেলেছি।’

এসএইচ/এএইচএস