ঘটা করে মা দিবস, এগুলো খুব বাণিজ্যিক মনে হয়
মা- খুব ছোট অথচ বিশাল অর্থবহ একটি শব্দ। এই কথাটা বেশ প্রচলিত। তবে যেকোনো সন্তানের জীবনে বেড়ে ওঠার পেছনে মায়ের অবদান কতটা, সেটা কি আদৌ কোনো শব্দে বুঝানো সম্ভব? সম্ভবত উত্তরটা ‘না’। ‘বিশ্ব মা দিবসে’ নিজের বড় হয়ে ওঠার পেছনে মায়ের অবদান, পথচলায় তাকে সাথী হিসেবে পাওয়া, মা দিবস নিয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গী। সবকিছু নিয়ে ঢাকা পোস্টের মাহমুদুল হাসান বাপ্পির সঙ্গে কথা বলেছেন সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার ও বর্তমানে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স ম্যানেজার শাহরিয়ার নাফিস।
তারকা ক্রিকেটার হয়েছেন, এর পেছনে নিশ্চয়ই মায়ের অবদানটা বিশাল?
বিজ্ঞাপন
আসলে সন্তান যতদিন না পর্যন্ত বড় হয়, তার লালন-পালন বা বেড়ে ওঠার পেছনে বাবা-মার অবদানটা বেশি। বিশেষ করে মা যেহেতু সারাক্ষণ বাচ্চার সঙ্গে থাকে, তার ভূমিকাটা একটু বেশি। ওইভাবে যদি দেখি, অবশ্যই আমার বেড়ে ওঠার সময় আমার মার অবদানই আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি ছিল।
নির্দিষ্ট কোনো বিষয়, যেটা আপনার বেড়ে ওঠায় অনেক সহযোগিতা করেছে?
সবচেয়ে বড় যেই জিনিসটা আমি বলব, সেটা হচ্ছে অনেক ছোট বয়সেই...সাধারণত যেটা হয় বাবা-মা সবসময় বাচ্চাদের পড়াশোনার ব্যাপারে উৎসাহ দেয়, ওটাইকেই সিরিয়াসলি নিতে বলে। আমি অনেক ছোট বয়সেই পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা করতে চেয়েছিলাম। আর এত কম বয়সে মা আমার সঙ্গে এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে একমত ছিল। এবং সবরকম সহযোগিতা করেছে। ওই সিদ্ধান্তটা না নিলে আমি আজকে খেলোয়াড় হতে পারতাম না।
পরবর্তী সময়ে ছোটবেলায় মাঠে নিয়ে যাওয়া, খেলতে নিয়ে যাওয়া এই সমস্ত কাজগুলোই আমার মা করেছেন। অবশ্যই আমার ক্রিকেটার হওয়ার পেছনে আমার মায়ের ভূমিকাটাই সবচেয়ে বেশি ছিল।
প্রথম যখন জাতীয় দলে ডাক পেলেন...
আমি ওই সময় চট্টগ্রাম ছিলাম, ওখানে আমাদের ট্যুর ছিল। অবশ্যই আমি যখন বলেছি, মা অনেক খুশি হয়েছে।
মাঠ ও মাঠের বাইরের বিষয়ে মায়ের সঙ্গে কি আলাপ হতো?
আমাদের পরিবারে যেহেতু ক্রিকেট ছিল, মা ক্রিকেটটা বুঝতেন। এবং আমার সঙ্গে ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা সবসময় করতেন। মাঠের ভেতরে আর বাইরে সবসময়ই সহযোগিতা করেছেন আমার খেলার সময়ে।
আপনি নটরডেমের মতো কলেজে পড়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়েছেন। একই সঙ্গে ছিলেন পেশাদার ক্রিকেটার, দুইটা একসঙ্গে চালানোয় মায়ের অবদানটা কী সবচেয়ে বেশি?
অবশ্যই। যেটা হয় কি, বড় হয়ে ওঠার ওপরই তো নির্ভর করে পরবর্তীকালে কীভাবে করবেন। ওই যে ছোটবেলায়, পড়াশোনার পাশাপাশি বিশেষত স্কুল পর্যায়ে। ধরেন যখন কলেজে যখন উঠে গিয়েছি বা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে, তখন নিজেই নিজের দায়িত্ব নিতে পারতাম। কিন্তু স্কুল পর্যায়ে যে আম্মু ম্যানজমেন্টটা শিখতে সাহায্য করেছিলেন, ওটাই পরবর্তীতে কাজে লেগেছে আর কী।
মায়ের কোনো কথা, যেটা সবসময় মনে থাকে...
আমি একটা জিনিস সবসময় যেটা সবাইকে বলি। আমি পরবর্তীকালে তো ভালো খেলেছি, অনেক কিছু করেছি। এর চেয়েও বড় ব্যাপার যেটা হচ্ছে। ছোটবেলায় যখন খেলাধুলা শুরু করেছিলাম। তখন আমার মা বলেছিলেন যে, তুমি খেলাধুলা করো কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু পড়াশোনাটা ক্ষতি না করে যদি তুমি খেলাধুলা করো, আমাদের পরিবারের কোনো সমস্যা নেই। এবং তোমার পড়াশোনা যদি তুমি এক নম্বর থাকো, তাহলে সারাদিন খেলো, আমার কোনো সমস্যা নাই।
এই কথাটা আমি সবসময় মনে রেখেছি। এটা আমি আমার বাচ্চাদেরও বলি। যে এই জিনিসটা আসলে হওয়া উচিত। আমি যাই করি না কেন, পড়াশোনাটাকে সবসময়ই এগিয়ে রাখতে হবে।
এখন তো অবসর নিয়ে নিয়েছেন, মার সঙ্গে এখনো যেকোনো সিদ্ধান্তের আগে কথা বলেন?
আমি বিশ্বাস করি...যেটা হয় কি, বাচ্চারা তো একটা সময় পর্যন্ত বাবা-মার অধীনে থাকে। এরপর যেটা হয়, নিজে স্বাবলম্বী হয়ে যায়। ধরেন আমার পরিবার হয়ে গেছে। একটা সময় আমার ছেলের পরিবার হবে, মেয়ের পরিবার হবে। তো ওই ছোটবেলায় বেড়ে ওঠার সময় যে সাপোর্টটা, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর সেটা আমি সবসময় বাসা থেকে পেয়েছি।
এখন যেটা হয়, নিজেরটার জন্য নিজে দায়ী থাকি। এটা আমি বুঝি, ধরেন একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বাবা-মার শতভাগ দিকনির্দেশনা লাগে যে তুমি এটা করো, ওইটা করো। কিন্তু বাচ্চারা যখন বড় ও স্বাবলম্বী হয়ে যায়, তখন আসলে মানসিক সাহায্য ও দোয়াটাই আসল। এখন যে বয়স, ওইভাবে হয়তো বাবা-মার সঙ্গে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করি না। কিন্তু যে কোনো ক্ষেত্রে যেটা হয় যে বাবা-মা পাশে আছে। এটাই আসলে বড় ব্যাপার।
মা দিবসকে কীভাবে দেখেন?
আমার কাছে আসলে এই যে ঘটা করে মা দিবস, এগুলো খুব বাণিজ্যিক মনে হয়। একদম স্পষ্ট করে বলি, আজকে মা দিবস, তাহলে অন্য দিন কি মায়েদের প্রতি ভালোবাসা থাকবে না? এগুলো আধুনিক সমাজের খুবই বাণিজ্যিক একটা ধারণা। এর সঙ্গে অনেক বাণিজ্য রয়েছে। কার্ড বিক্রি করা, মেসেজ আদান-প্রদান....। মা দিবসের ব্যাপারে আমার খুব বেশি কিছু নেই আসলে।
মায়েদের উদ্দেশে যদি কিছু বলেন?
এটা আমি বিশ্বাস করি, আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে সব মায়েদের একটা বিশেষ জায়গা দিয়েছেন। এবং প্রত্যেকটা সন্তানের উচিত সেই বিশেষ জিনিসটা স্বীকার করা এবং তার ব্যাপারে সবসময় কৃতজ্ঞ থাকা। আমি পৃথিবীর সব মায়েদের আমার আম্মা, আমার স্ত্রীর আম্মা, আমার স্ত্রীও এখন মা। সবাইকেই শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
এমএইচ/এটি