• ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে জাতীয় দলের অধিনায়ক হয়েছিলেন
  • মুশফিক, সাকিব ও তামিমদের জাতীয় দলে আনেন
  • বিসিবির দ্বি-স্তরের নির্বাচক কমিটি, স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, সীমাহীন দুর্নীতির প্রতিবাদে ২০১৬ সালে পদত্যাগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ ক্রিকেটে শেষ হলো নাজমুল হাসান পাপনের রাজত্ব। গেল একযুগ ধরেই সর্বময় কর্তা হয়েছিলেন তিনি। এবার সেই পদ থেকে সরে গেলেন তিনি। পাপনের উত্তরসূরী হিসেবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নতুন সভাপতি হলেন সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ। 

ছাত্র জনতার গণ অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্রীড়াঙ্গনেও পরিবর্তনের ঢেউ লেগেছে। দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) চলছে পালাবদল। জানা যায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদকে বিসিবি সভাপতি পদে দায়িত্ব গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এরপর থেকেই গত কয়েক দিনে তাকে নিয়ে গুঞ্জন চলছিল। 

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে ফারুক আহমেদের সখ্যতা বেশ আগে থেকেই। ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক হয়েছিলেন। খেলোয়াড়ি জীবনে অলরাউন্ডারের ভূমিকায় থাকলেও ব্যাটার হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন ফারুক আহমেদ। সাবেক এই ব্যাটসম্যান বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছেন প্রায় ১৫ বছর। ১৯৯৩ আইসিসি ট্রফিতে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন সাতটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। সবশেষ দেশের জার্সিতে তাকে দেখা গেছে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে।

খেলোয়াড়ি জীবন শেষে দুই দফায় পালন করেছেন নির্বাচকের দায়িত্ব। ২০০৩ থেকে প্রথম দফায় প্রধান নির্বাচক পদে দায়িত্ব পালনকালে অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালকে জাতীয় দলে তুলে আনেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে যে তিন ক্রিকেটার অন্যতম সেরা হিসেবেই বিবেচিত। 

এরপর ২০১৩ সালে নাজমুল হাসান পাপনের বোর্ডেই আরেকবার নির্বাচক হন তিনি। দ্বিতীয় দফায় প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পালনকালে ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ পেয়েছে সেরা সাফল্য। অবশ্য এরপর খুব বেশিদিন থাকতে পারেননি। ২০১৬ সালে দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। দল নির্বাচনে বিসিবির হস্তক্ষেপ এবং দ্বি-স্তর বিশিষ্ট নির্বাচক কমিটির ফর্মূলার তীব্র বিরোধীতা করে প্রধান নির্বাচকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন ফারুক আহমেদ। ভাগ্যের ফেরে আবারও বিসিবিতে ফিরলেন, এবার সভাপতি হয়ে। 

যেভাবে সভাপতি হলেন ফারুক আহমেদ

বিসিবির গঠনতন্ত্র মেনে সভাপতি নির্বাচনের পূর্বশর্ত হচ্ছে, আগে পরিচালক হতে হবে। তারপর পরিচালকদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হবে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কোটায় সরাসরি পরিচালক জালাল ইউনুস গত সোমবার পদত্যাগ করেছিলেন, আহমেদ সাজ্জাদুল আলমের পরিচালক পদটি কেড়ে নিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।

পরিচালক হওয়ার আগে অবশ্য কাউন্সিলরশিপ দরকার হয় বিসিবিতে। মূলত অধিনায়কের সুবাদেই বিসিবির কাউন্সিলরশিপ ছিল ফারুকের। জালাল ইউনুসের শূন্যপদে বুধবারই নিয়োগ পান পরিচালক হিসেবে। এরপরেই সভায় উপস্থিত বাকি পরিচালকদের ভোটে ফারুক আহমেদ নির্বাচিত হলেন সভাপতি। 

জালাল ইউনুস এবং সাজ্জাদুল ববির শূন্য পদে বিসিবির পরিচালনা পরিষদে ফারুক আহমেদ এবং নাজমুল আবেদিন ফাহিমকে স্থলাভিষিক্ত করেছে বিসিবি। এই দুটি পদের একটিতে এনএসসির কোটায় পরিচালক হয়ে আজ (বুধবার) বিসিবির জরুরি সভায় উপস্থিত পরিচালকদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ফারুক। 

‘প্রধান লক্ষ্য ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া’

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নতুন সভাপতি হওয়ার সচিবালয়ে তার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় ফারুক আহমেদ বলেন, ‘লক্ষ্য তো অনেক বড়, প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য বাংলাদেশ দলকে একটা জায়গায় দেখতে চাই। সেক্ষেত্রে এটা তো অনেক বড় একটা ব্যাপার, কিভাবে দেখবো। অনেক জায়গায় আমাদের কাজ করতে হবে। আপনারা জানেন যে, অনেক দিন ধরে কাজ হয়েছে হয় নাই অনেক প্রশ্ন আছে।’

আরও বলেন, ‘প্রথম ও প্রধানতম দায়িত্ব আমার ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এটা যদি আমরা মাথায় রাখে.. বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দল.. তাহলে কাজগুলো অনেক সহজ হবে। আমরা যেনো অন্যদিকে ডাইভার্ট হয়ে না যাই। সো ক্রিকেট টিম, বাংলাদেশ ক্রিকেট সার্বিকভাবে এবং বাংলাদেশ.. আমরা এটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।'

এফআই