ক্রিকেট বোর্ডের বাইরে ঝুলছে ছাত্র আন্দোলনের নিহতদের কয়েকজনের ছবিতে তৈরি করা শোক ব্যানার। শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের পর দেশের প্রায় সব ক্ষেত্রেই ব্যাপক পরিবর্তন চোখে এসেছে। সেটার বাইরে নেই দেশের ক্রিকেট আঙ্গিনা। বোর্ডের সভাপতির পদে দীর্ঘদিন ধরেই আছেন নাজমুল হাসান পাপন। কিশোরগঞ্জ থেকে নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পদে আছেন এক যুগের বেশি সময় ধরে। 

তবে নাজমুল হাসান পাপন ক্রিকেটের দৃশ্যপটে নেই গেল তিনদিন ধরেই। পরিচালকদের মধ্যেও অনেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরিই যুক্ত ছিলেন। পরিচালকদের মধ্যে নাইমুর রহমান দুর্জয় ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য। আ জ ম নাসির চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র। আরেক পরিচালক শফিউর রহমান নাদেল সদ্য বিলুপ্ত হওয়া সংসদেরই একজন সদস্য। 

পাপনই থাকছেন, পরিবর্তনের সুযোগ নেই!

ক্ষমতার পালাবদলের পর এদের সকলেই অনুপস্থিত। সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বর্তমান অবস্থান নিয়েও আছে প্রশ্ন। এক সূত্রের মাধ্যমে ক্রিকইনফো জানিয়েছে, বোর্ড সভাপতিও আওয়ামী লীগের অন্য অনেক নেতার মতোই দেশত্যাগ করেছেন। যদিও সেই একই প্রতিবেদককে অন্য অনেকগুলো সূত্র জানায়, নাজমুল হাসান পাপন এখনো দেশেই অবস্থান করছেন। 

জাতীয় সংসদের পদ চলে গেলেও ক্রিকেট বোর্ডের অভিভাবক এখন পর্যন্ত পাপনই থাকছেন। বর্তমান মেয়াদ অনুযায়ী ২০২৫ সাল পর্যন্ত তিনিই থাকছেন ক্রিকেটের শীর্ষকর্তা। ক্ষমতার পালাবদলে তাকে সরানোরও কোনো সুযোগ থাকছে না। বোর্ডের ওপর সরকার বা অন্য কোনো শক্তির উপস্থিতিতে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়বে বাংলাদেশ ক্রিকেট। 

গেল বছর লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডকে সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, ‘শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বিধি-নিষেধ লঙ্ঘন করেছে। বিশেষ করে, স্বাধীনভাবে কাজ করতে ক্রিকেট প্রশাসনকে সরকারি হস্তক্ষেপের বাইরে থাকার প্রয়োজন ছিল।’

২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের চলাকালীন সময়েই এসেছিল এমন নিষেধাজ্ঞা। দেশটির ক্রীড়ামন্ত্রী রোশান বিক্রমাসিংহে পুরো বোর্ডকে বরখাস্ত করে নিয়োগ দিয়েছিল সাত সদস্যের অন্তবর্তী এক কমিটিকে। যার কারণে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের আয়োজকের মর্যাদাও কেড়ে নেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের বোর্ডেও এমন অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে আসতে পারে নিষেধাজ্ঞা। 

আসবে কি অন্তবর্তী কমিটি?

অন্তবর্তী কমিটির জন্য তাই নাজমুল হাসান পাপনের মেয়াদ শেষের অপেক্ষা করতেই হচ্ছে। বর্তমানে ক্রিকেট বোর্ডে তিনি চার বছরের জন্য সভাপতি নির্বাচিত। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে বিসিবি সভাপতি পদে বর্তমান মেয়াদ শেষ হবে তার। এরপরেই দেখা যেতে পারে অন্তবর্তী একটি কমিটি। সেখান থেকেই দেখা যাবে নতুন বোর্ড সভাপতি। 

এর আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে দুবার দেখা গিয়েছিল অন্তবর্তীকালীন কমিটি। এর আগে ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিল দুবার অন্তবর্তীকালীন বা অ্যাড-হক কমিটি দিয়েছিল। ২০০৭ সালে সে সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দেয়া হয়েছিল অ্যাড-হক কমিটি। এছাড়া ২০১৩ সালে আ হ ম মুস্তফা কামাল ও নাজমুল হাসান পাপনের মধ্যবর্তী সময়েও ছিল অন্তবর্তীকালীন এক কমিটি।

বিসিবির বিশ্বকাপের আয়োজক মর্যাদাও প্রশ্নের মুখে

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন এবং পরবর্তীতে ঢাকাসহ পুরো দেশে অস্থির অবস্থার কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ থেকে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজন সরিয়ে নেয়ার ভাবনা শুরু করেছে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সংস্থাটি। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ঢাকা ও সিলেটের দুই ভেন্যুতে ১০ দলের এই বিশ্বকাপ আয়োজনের কথা রয়েছে। 

বর্তমান পরিস্থিতির কারণে আইসিসিকে যদি বাধ্য হয়ে বিশ্বকাপের ভেন্যু পাল্টাতে হয়, সে ক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে ক্রিকেটের বিশ্বস্ত সুত্র ইএসপিএনক্রিকইনফো। সংক্ষিপ্ত বিকল্প দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে আরব আমিরাত, ভারত ও শ্রীলঙ্কার নাম।

ক্রিকইনফোর ভাষ্য মতে, আইসিসি বিকল্প ভেন্যুর ব্যাপারে কাজ শুরু করেছে। ভারত ও শ্রীলঙ্কা অল্প সময়ের মধ্যে একাধিক দেশ নিয়ে টুর্নামেন্ট আয়োজনে সক্ষম হলেও তাতে জটিলতা রয়েছে। অক্টোবরে শ্রীলঙ্কায় ব্যাপক বৃষ্টির আভাস রয়েছে এবং ভারতের পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের ভিসা পাওয়ার ব্যাপারে জটিলতা তৈরি হতে পারে। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে আরব আমিরাতের নাম। 

জেএ