বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গেল কয়েক সপ্তাহ উত্তাল ছিল গোটা দেশ। আন্দোলন শেষ পর্যন্ত রূপ নেয় ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন শেখ হাসিনা। 

আন্দোলনের শুরু থেকেই ছাত্রদের পক্ষে সরব ছিলেন দেশের প্রখ্যাত ক্রিকেট কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম। ঢাকা পোস্টের মুখোমুখি হয়ে জানালেন দেশ ও ক্রিকেট নিয়ে আগামীর প্রত্যাশার কথা। 

ঢাকা পোস্ট : ছাত্রদের আন্দোলনে আপনি শুরু থেকেই সরব ছিলেন, রাস্তায়ও নামতে দেখা গেছে। 

ফাহিম: সারাদেশের মানুষই তো সাথে ছিল ওদের। যে দাবি ছিল এদের সাথে না থাকার কোনো কারণই ছিল না। শুরুর দিকে আমি ফেসবুকের মধ্যেই আমার সমর্থন জানিয়েছিলাম। এরপর যখন ওদের ওপর গুলি চললো তখন আর ঘরে থাকা গেল না, বাধ্য হলাম রাস্তায় নামতে ওদের পাশে দাঁড়াতে।

ঢাকা পোস্ট : সাধারণত যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, ক্রীড়াঙ্গনেও তার প্রভাব থাকে সুস্পষ্টভাবে। এটি ক্রীড়াঙ্গনের জন্য কি বার্তা বহন করে?

ফাহিম : ক্রীড়াঙ্গনের ব্যাপারটা যদি শুধু এরকম হয়েছে খেলাধুলা চললেই হবে তাতে কোনো অসুবিধা নাই। খেলাধুলা ভালো করতে চাই এটা একটা প্রফেশনাল দৃষ্টিভঙ্গি থাকা জরুরি। যারা ভালো কাজ করতে পারে বা যাদেরকে দিয়ে ভালো কাজ করা যাবে তাদেরকে দিয়ে সেই কাজটা করানোই জরুরি। তারা কোনো দল করে বা তাদের চিন্তাভাবনা কি সেটা নিয়ে যদি বসে থাকি তাহলে হবে না। তাদের যোগ্যতাটা যদি বিবেচনায় না নেই তাহলে হবে না। সেটাই হয়ে আসছে কিন্তু এতদিন, আমার মনে হয় সেটা পরিবর্তন আনার দরকার। যারা যোগ্য তাদেরকে নিয়ে আসা দরকার খেলাধুলা পরিচালনার জন্য।

ঢাকা পোস্ট : দেশে এখন সরকারের পালাবদল। আমাদের বড় দুটি ফেডারেশন বিসিবি ও বাফুফের ভবিষ্যৎ কি....

ফাহিম : এটা একটা সুযোগ আমরা চাইলে এটা একটা সুন্দর করে গোছাতে পারি। আমাদের এতদিন যে কথা হতো কোথাও হয়তো যোগ্য লোক নেই, স্বচ্ছতার ব্যাপার নেই, এ বিষয়গুলো কিন্তু এখন দেখার সুযোগ এসেছে। আমাদের নিশ্চয়ই যোগ্য লোকও আছে তাদের নিয়ে এখন এগোতে হবে। আমি শুধু ক্রিকেট আর ফুটবলের কথা বলবো না যতগুলো ফেডারেশন আছে সব ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য। অনেক ফেডারেশন আছে যেখানে ২৫-৩০ বছর ধরে একই লোক চালাচ্ছে। এই সময় পরিবর্তন আনা খুব জরুরি। আমার মনে হয় খেলাধুলা অনেক ভালো করার সুযোগ আছে, এই সুযোগেই পরিবর্তন নিয়ে আসা।

ঢাকা পোস্ট: আপনার বোর্ড আসার ইচ্ছা আছে?

ফাহিম : ক্রিকেট ভালো করুক এ ব্যাপারে আমার খুব আগ্রহ আছে। এখানে গিয়ে কিছু করার থাকলে করতে পারি। কিন্তু বোর্ডে যাওয়ার আমার খুব একটা আগ্রহ নেই, খুব আগ্রহ নেই। বোর্ডে আমার যেতে হবে এমন না যে আমার ডিরেক্টর হতে হবে। এসব ব্যাপারে আমার খুব একটা আগ্রহ নেই। আমি এখন যেভাবে আছি এভাবেই থাকতে চাই। একটিভ কাজের আগ্রহটা আসলে কমে গেছে এখন।

ঢাকা পোস্ট : সাকিবের চুপ থাকা নিয়ে কী বলবেন?

ফাহিম: সাকিব আল হাসানের সুযোগ ছিল ওদের প্রতি সিম্প্যাথি দেখানো। কিন্তু কেন হয়নি সেটা ওই ভালো জানে আমি তো বলতে পারব না। তার ফ্যান বা তাকে যারা পছন্দ করে তাদের রিয়্যাকশনটা খুব স্বাভাবিক। তারা আশা করেছিল কিছু না কিছু একটা সাকিবের থেকে তাদের কাছে আসবে। যেহেতু আসে নাই তাদের রিঅ্যাকশনটা জাস্টিফাইড। আমার সাথে কোনো কথা হয়নি আর কি। তার ক্যারিয়ার এখানে শেষ কি না আমি এখন বলতে পারব না।

ঢাকা পোস্ট : দেশ নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী এখন?

ফাহিম : আমাদের ছাত্রসমাজ যে পরিবর্তনটা নিয়ে আসলো, এই কাঙ্খিত পরিবর্তনটা নিয়ে আসলো। আমার মনে হয় আমাদের এখন অনেক ওপরে ওঠার দরজাটা খুলে গেল। বিষয়টা নির্ভর করবে আমরা কিভাবে পরিচালনা করি। নতুন সবটাই আমাদের হাতে আমরা যদি সৎ থাকতে পারি ভালো থাকতে পারি তাহলে আমাদের সম্ভাবনা কিন্তু খুব ভালো।

এসএইচ/এফআই