গ্রীষ্মে ফ্রান্সের প্যারিসে সূর্য ডোবে দশটার পর। গতকাল গেমসের নানা ঘটনা কাভার করে আবাসস্থল লা কর্নোভে ফিরতে ফিরতে প্রায় আটটা। লা কর্নোভ স্টেশনে নামতেই বাংলাদেশি প্রবাসীদের আলোচনার বিষয়বস্তু, ‘৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস গরম।’

সারা দিন গেমসের ভেন্যু ও মিডিয়া সেন্টারে কাজ করে গরমের তীব্রতা ততটা বোঝা যায়নি। লা কর্নোভে বাংলাদেশি প্রবাসীদের সঙ্গে কিছুক্ষণ আলাপ করে নৈশভোজ করতে গিয়ে খানিকটা টের পাওয়া। প্যারিসের অনেক বাসা-রেস্টুরেন্টে সিলিং ফ্যান নেই। অনেকে ছোট টেবিল ফ্যান ব্যবহার করেন। নৈশভোজেও তাই আলোচনায় গরম।

প্যারিসে বসবাসরত বাংলাদেশি অনেকে বলছিলেন, ‘এই গ্রীষ্মকালে আজই (গতকাল) সর্বোচ্চ গরম পড়েছে। এত গরম কখনো পড়েনি দুই এক বছরের মধ্যে।’ বাংলাদেশে মাস দু’য়েক আগেই ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা ছিল টানা কয়েক দিন। গরমের দেশের মানুষের কাছে ৩৭ ডিগ্রি আর কতটুকুই আর গরম।

বাংলাদেশের গরম আর প্যারিসের গরমের ভিন্নতা আরও স্পষ্ট হয়েছে বাসায় ফিরে। বাংলাদেশে রাস্তা-ঘাটে দাবদাহ থাকলেও বাসায় ফিরে ফ্যানের বাতাসে শরীর-মন জুড়ানোর সুযোগ থাকে। প্যারিসে অবশ্য এমনটি নেই। রাস্তা-ঘাটে কিছুটা বাতাস মিললেও বাসা-বাড়িতে ততটা নেই। শীতপ্রধান দেশে অধিকাংশ বাসায় নেই সিলিং ফ্যান ব্যবস্থা। সিলিং ফ্যানই যেখানে নেই, সেখানে এসির বিষয়টি মাত্রারিক্ত।

শীতপ্রধান দেশ হওয়ায় অধিকাংশ বাসায় নেই সিলিং ফ্যান ব্যবস্থা।

শুধু বাংলাদেশি প্রবাসী নয়, অলিম্পিক উপলক্ষ্যে নির্মিত গেমস ভিলেজের আবাসিক কক্ষেও নেই সিলিং ফ্যান ও এসি। গরম এড়ানোর জন্য সেখানে রয়েছে ছোট্ট স্ট্যান্ড ফ্যান। কালকের গরমে ভিলেজেও খানিকটা হাঁসফাঁস হয়েছে।

ফ্রান্সের প্যারিসে বছরের অধিকাংশ সময় শীতল। গ্রীষ্মকালেও তাপমাত্রা ত্রিশের আশেপাশে বা একটু উপরে থাকে। তাই ফ্যানের তেমন প্রয়োজন পড়ে না। গতকাল তাপমাত্রার পারদ ৩৭ ছোঁয়ায় বাংলাদেশি ও অনেক ফরাসিই ফ্যানের সন্ধানে নেমেছেন। সিলিং ফ্যান যেহেতু নেই তাই ছোট্ট টেবিল ফ্যানই কিনেছেন অনেকে।

ফ্যান পাশে রেখে প্রশান্তির ঘুম অনেকের। ঠিক তখনই আবার রাতে শীতল বাতাস আর বৃষ্টি। ঠান্ডা পরিবেশে আবার ফ্যান বন্ধ করতে বাধ্য। ভোররাত থেকে সকাল পর্যন্ত বৃষ্টি-শীতল আবহাওয়া। সকালের পর থেকে আবার গরমের আঁচ শুরু। প্যারিস সময় দুপুর দেড়টায় বাংলাদেশের আরচ্যার সাগর ইসলামের ইভেন্ট। আবহাওয়া বিশেষত বাতাসের সঙ্গে আরচ্যারির পারফরম্যান্স অনেক প্রভাবিত হয়।

২২-৩০ জুলাই এই এক সপ্তাহে প্যারিসে বৃষ্টি-রোদ সব অভিজ্ঞতারই স্বাক্ষী। ২৩-২৫ জুলাই প্রতি দিন সকাল বৃষ্টি ও শীতের আবহে শুরু হলেও সময়ের সাথে সাথে সূর্যের তীব্রতা বেড়েছে। ২৬ জুলাই উদ্বোধনী দিন বিকেল থেকে পরের দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত অঝরে বৃষ্টি ঝরেছে। গ্রীষ্মকালে টানা এমন বৃষ্টিতে বিস্মিত হয়েছেন অনেক ফরাসিও। পরের দুই দিন ২৮-২৯ জুলাই আবার শুষ্ক ও উষ্ণ আবহাওয়া। তবে গতকালের গরমের তীব্রতা প্যারিসকে ছাপিয়েছে অনেক কিছুই।
 
এজেড/এফআই