আধুনিক ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জিম্বাবুয়েকে ‘ট্যুরিং ফি’ দিয়ে নিজের দেশে খেলতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। যার অধীনে ২০২৫ সালের গ্রীষ্ম মৌসুমে দু’দল ইংল্যান্ডে একটি টেস্ট ম্যাচ খেলবে। এমন ধারণা ক্রিকেটে আগেও প্রচলিত ছিল, তবে আধুনিক ক্রিকেটে কোনো সফরকারী দলকে খরচ দেওয়ার ঘটনা হতে যাচ্ছে ঐতিহাসিক।

স্বদেশি সংবাদমাধ্যম স্কাই স্পোর্টসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গতকাল (শুক্রবার) এই তথ্য জানিয়েছেন ইসিবির প্রধান নির্বাহী রিচার্ড গোল্ড। এজবাস্টনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে বর্তমানে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট খেলছে ইংল্যান্ড। তারই ফাঁকে তিনি জিম্বাবুয়ের আসন্ন সফর নিয়ে কথা বলেছেন। আইসিসির কাছ থেকে প্রতিযোগী দেশগুলো লভ্যাংশ প্রাপ্তিতে যে অসমতা তৈরি হয়, সেটি ট্যুরিং ফি দেওয়ার মধ্য দিয়ে কিছুটা হলেও কমে আসবে বলে ধারণা ইসিবি কর্মকর্তার। ২২ বছর পর ইংল্যান্ডে টেস্ট খেলার সুযোগ পাবে জিম্বাবুয়ে।

রিচার্ড গোল্ড বলেন, ‘এটা অনেক বড় একটি দায়িত্ব…। আইসিসির রাজস্ব বন্টন পদ্ধতির কথা বলুন কিংবা দ্বিপাক্ষিক সিরিজের রাজস্ব ভাগাভাগি করা, সত্যি বলতে এসব যেভাবে হয়ে আসছে, তা পুরোনো হয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, আগামী বছর জিম্বাবুয়ে সফরে আসবে আমাদের এখানে। এমনিতে যেটা চলে আসছে, সফরকারী দল কোনো দেশে যাওয়ার পর তাদের আবাসন ও অন্যান্য কিছুর দায়িত্ব আয়োজক বোর্ডের থাকে। কিন্তু সফরে যাওয়ার জন্য কোনো ফি দেওয়া হয় না। আগামী বছর যখন আমরা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলব, সফরে আসার জন্য ওদেরকে ফি দেব।’

ইসিবির প্রধান নির্বাহী রিচার্ড গোল্ড

এর আগে তুলনামূলকভাবে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ক্রিকেট বোর্ডের সফর খরচ নিয়ে আলোচনা উঠেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের অস্ট্রেলিয়া সফরে। সে সময় ছোট দেশে টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচিয়ে রাখা, দীর্ঘতম সংস্করণের জন্য সম্প্রচার স্বত্ব না পাওয়া এবং আইসিসির রেভেন্যু পদ্ধতিতে বিপর্যয় নিয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছিলেন উইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের (সিডব্লিউআই) প্রধান নির্বাহী জনি গ্রেভ। মূলত তিনি এ নিয়ে মুখ খুলতে বাধ্য হন, যখন অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ খেলতে দ্বিতীয় সারির দল পাঠানো নিয়ে ক্যারিবীয়দের সমালোচনা চলছিল। যদিও পরবর্তীতে শামার জোসেফের দুর্দান্ত এক স্পেলে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে উইন্ডিজদের একটি টেস্ট ড্র হওয়ায় সেই সমালোচনা আড়ালে পড়ে যায়।

সে সময় উইন্ডিজ বোর্ড কর্মকর্তা গ্রেভ বলেন, ‘চার মাসে সিডব্লিউআই ২ মিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ করে অস্ট্রেলিয়ায় দল পাঠিয়েছে। অথচ সেসব সিরিজ থেকে আর্থিক লভ্যাংশের পুরোটাই পেয়েছে সিএ (ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া)। বিপরীতে আমরা ফিরেছি খালি হাতে। এটি কি কোনো ন্যায্য বিষয়? নাকি যুক্তিসঙ্গত কিংবা টেকসই পদ্ধতি?’

ওয়েস্ট ইন্ডিজসহ আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল বোর্ডের এমন ভোগান্তি লাঘবেই মূলত ট্যুরিং ফি’র মতো সহায়তার উদ্যোগ নিলো ইসিবি। এ নিয়ে প্রধান নির্বাহী গোল্ড বলেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই সফরের ৬ মাস, ৯ মাস আগে থেকেই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আসছি আমি, কোন ধরনের সহায়তা আমরা করতে পারি। ব্যাপারটা অনেকভাবেই করা যায়, শুধু টেস্ট ম্যাচের চক্র দিয়েই নয়। যেমন, গত ক্রিসমাসের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে আমরা বাড়তি দুটি টি-টোয়েন্টি খেলেছি (আইসিসির ভবিষ্যৎ সফরসূচীর বাইরে), যাতে তাদেরকে সহায়তা করতে পারি। সবসময় আর্থিক সহায়তাই জরুরি নয়। অন্য অনেক পথ-ও আছে।’

এএইচএস